মমতা-মোদি মুখোমুখি শেষ প্রচারেও
ভারতের নির্বাচন কমিশনকে ‘বিজেপির ভাই’ বলে কটাক্ষ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে মমতার দাবি, নির্বাচন কমিশনকে বিজেপি কিনে ফেলেছে।
মঙ্গলবার কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজের হামলার ঘটনা রাজ্যের নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা অবনতি হয়েছে বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন রাজ্যটির সব রাজনৈতিক দলের প্রচার-প্রচারণা বৃহস্পতিবার রাত ১০টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ জারি করেছেন। কমিশনের ওই ঘোষণা আসেন বুধবার সন্ধ্যায়।
বৃহস্পতিবার সকালেই কলকাতার অদূরে মথুরাপুরে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী সভায় দাঁড়িয়ে মোদিকে উদ্দেশ্য করে মমতা বলেন, তিনি আইন বোঝেন। বাংলাকে অসম্মান করা হচ্ছে। বিজেপি বাংলা দাঙ্গা বাধাতে চাইছে। কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজের বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে বিজেপি।
কোনোভাবেই রাজ্যে দাঙ্গা বাধাতে দেওয়া হবে না বলেও দৃঢ় অবস্থানের কথা জানান মমতা।
মথুরাপুরের নির্বাচনী সভায় দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, মোদি আজ যেখানে সভা করবেন সেই সভার জায়গার মালিক একজন চিটফান্ডের কারবারি। তার বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেন মমতা। বলেন, চিটফান্ডের টাকা ওই লোক বিজেপিকে দিচ্ছে।
ডায়মন্ডহারবারেরও নির্বাচনী সভা করেন মমতা। সেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে ইভিএম বদলের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেন তৃণমূলনেত্রী। এদিন তিনি দলীয় কর্মীদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
মমতা বলেন, “মেশিন বদলানোর পরিকল্পনা করেছে। ইভিএম পাহারা দিতে হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ভয় পাবেন না। মা-বোনেরা এগিয়ে যাবেন। কোথাও ঢুকতে দেবেন না। সঙ্গে মমতার আশ্বাস, মেশিন বদলানোর ঘটনা ধরিয়ে দিতে পারলে তার জীবন গড়ে দেব। তার দায়িত্ব আমার।”
এ সময় মমতা মোদিকে জেলে ভরারও হুমকি দেন। এরপরই মমতা ডায়মন্ডহারবারে আরও এক প্রচারণা সভায় বক্তব্য দেন এবং সেখান থেকে দক্ষিণ কলকাতার জোঁকা এলাকা থেকে যাদবপুর পর্যন্ত একটি পদযাত্রায় অংশ নেন।
এদিকে এদিন আরও একবার নির্বাচনী প্রচারে পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মথুরাপুরে তিনি সভা করেন। সেখানে তিনি মমতাকে নিশানা করে বলেন, রাজ্যে কোনো গণতন্ত্র নেই। এখানে বিরোধীরা কোনো সভা করতে পারেন না। বিজেপি সভাপতি কলকাতায় র্যালি করতে গেলে তার ওপর তৃণমূল হামলা চালায়। বিদ্যাসাগরের মূর্তি তৃণমূল ভেঙে বিজেপির নাম বলছে।
মোদি বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ আছে পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের যদি সাহস থাকে সেটা প্রকাশ করুক।
মোদি এদিনও পরিষ্কার করে বলেন, বিজেপি আবার ক্ষমতায় আসছে এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষও পদ্ম ফুলে ভোট দেবেন।
রাজ্যের প্রধান দুই শিবির তৃণমূল-বিজেপির বাইরেও বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস প্রার্থীরাও নিজেদের মতো করে আসনগুলোতে প্রচারণা চালিয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থী এক মিনিটের সময় নষ্ট করতে চাইছেন না। যেমনটি বলছিলেন বামফ্রন্টের সম্পাদক বিমান বসু। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, বামফ্রন্ট ২৪ ঘণ্টা সাত দিন মানুষের সঙ্গে থাকে। তবুও নির্বাচনী প্রচারের সময়সীমা পর্যন্ত বাম প্রার্থীরা কিংবা তাদের হয়ে দলীয় নেতৃত্ব প্রচারণা চালাবেন।
কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার তেমন কিছু বলার নেই। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা অবস্থা যেভাবে ভেঙে পড়েছে তাতে কমিশন এই ধরণের একটি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। ভারতের অন্য রাজ্যে ভোট যেখানে শান্তিতে হচ্ছে সেখানে অশান্তি হচ্ছে শুধুই পশ্চিমবঙ্গে। যে কারণেই প্রার্থীদের প্রচারণায় সময়সীমা কমে গেল। কংগ্রেস প্রার্থীরা রাত দশটা পর্যন্ত প্রচার চালাবেন।
আগামী ১৯ মে ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফার ভোট। সাত রাজ্যে ৫৯ আসনের ভোট হবে সেদিন। ওই দিন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ৯টি আসনেও ভোট নেওয়া হবে। কলকাতা, উত্তর এবং দক্ষিণ এই তিন জেলায় ভোট হবে। নির্বাচন কমিশন থেকে নিরাপত্তার চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এরই মধ্যে। বুধবার রাত থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী রুটমার্চ শুরু করেছে।
Comments