ছাত্রলীগ সঙ্কট: ৫ জন বহিষ্কারের পর ১ জনের আত্মহত্যার চেষ্টা
পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদবঞ্চিতদের ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে হামলার ঘটনায় গতকাল রাতে সংগঠনের পাঁচ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। এর পরপরই জারিন দিয়া নামে ছাত্রলীগের বিগত কমিটির এক সদস্য আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ছাত্রলীগের সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক রানা হামিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “বহিষ্কারের ক্ষোভ থেকে গতকাল মধ্যরাতে আজিমপুরে বোনের বাসায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান জারিন দিয়া। তার বোন বিষয়টি বুঝতে পেরে আমাদের জানালে, আমরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাই। বর্তমানে সে শঙ্কামুক্ত রয়েছে।”
ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত বলেন, “পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ না পাওয়া এবং মধুর ক্যান্টিনে হামলার শিকার হওয়ার পর থেকেই জারিন দিয়া বিপর্যস্ত ছিলো। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্নভাবে সে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলো। গতকালও ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে সে এ বিষয়ে প্রতিবাদী লেখা লিখেছে।”
এর আগে, গত ১৪ মে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে জারিন দিয়া অভিযোগ করে বলেছিলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংগঠনের নারী কর্মীদের নিয়ে কটূক্তিপূর্ণ লেখনীর কারণে গোলাম রাব্বানীকে জবাব দিতে বলায় রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি বিএম লিপি আক্তার ও তার সঙ্গে রাব্বানীর প্রকাশ্য বিরোধ বাঁধে।
এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে শোভনের সঙ্গে রাজনীতি শুরু করলেও নানান বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন জানিয়ে জারিন দিয়া বলেন, “অনেক সময় রাত ১০টার পর হলের মেয়েদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে এসে দেখা করতে বলতেন শোভন।”
বেশ কয়েকবার শোভনের কাছ থেকে কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার আশ্বাস পেয়েছিলেন বলেও জানান তিনি। এর আগে, ফেসবুকে ছড়িয়ে যাওয়া ছাত্রলীগের ভুয়া ২০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে নিজের নাম দেখতে না পেয়ে শোভনকে জিজ্ঞেস করলে, রাব্বানীর কারণে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে শোভন জানান- অভিযোগ দিয়ার।
এছাড়াও শোভনের ছোটভাই মো. রাকিনুল হক চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা বিপ্লব হাসান পলাশ, এমনকি শোভনের গাড়ির ড্রাইভার ফারুককেও সমীহ করে চলতে ছাত্রলীগের নারী সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন পদবঞ্চিত এই নেত্রী।
দিয়ার ভাষ্য, “শোভন-রাব্বানী দুজনই আমার মতো অন্য ত্যাগী কর্মীদের সঙ্গে বেঈমানি করেছেন।”
এ নিয়ে ১৩ মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক প্রতিবাদী পোস্ট দেওয়ার পরদিন তিনি বলেন, “আমি কীসের ভিত্তিতে নেতা হয়েছি তার এনএসআই রিপোর্ট দেখার আগে, শোভন-রাব্বানী বিবাহিতদের কোন সম্পর্কের ভিত্তিতে পদ দিয়েছেন তা খতিয়ে দেখা দরকার।”
এছাড়াও, গত ১৫ মে “জীবননাশের হুমকিতে রয়েছেন” বলেও অভিযোগ করেছিলেন দিয়া।
এদিকে, বহিষ্কার ছাড়াও সংগঠনের অপর দুই কর্মীর বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ছাত্রলীগ। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের ওই নোটিশের লিখিত জবাব সংগঠনের দপ্তর সেলে জমা দিতে বলা হয়েছে।
গতকাল (২০ মে) রাতে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী সালমান সাদিকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মুরসালিন অনু, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগ কমিটির সদস্য কাজী সিয়াম, একই শাখার আরেক কর্মী সাজ্জাদুল কবির ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য জারিন দিয়া।
কারণ দর্শানো নোটিশ পাওয়া দুজন হলেন ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক উপসম্পাদক বিএম লিপি আক্তার ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক হাসিবুর রহমান শান্ত।
মধুর ক্যান্টিনের হামলাকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগ বলছে, তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে এইসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, হামলার পর ওইদিন রাতেই ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, আইনবিষয়ক সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাৎ ও তথ্য গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক পল্লব কুমার বর্মণকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হলেও ওই সময়ের মধ্যে তারা প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি।
তাছাড়া, এই কমিটির তদন্তে আস্থা রাখতে পারছেন না বলে গত ১৭ মে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের কাছে অভিযোগ করেছিলেন পদবঞ্চিত ও ছাত্রলীগের বিগত কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাইফ উদ্দিন বাবু।
এছাড়াও, গত ১৫ মে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনেছিলেন বিএম লিপি আক্তার।
এ কারণেই, গত ১৯ মে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী নিজেই লিপি আক্তারের গায়ে হাত তোলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে রাব্বানীর অনুসারীরাও লিপিসহ তার সঙ্গীদের ওপর হামলে পরেন এবং মারধর করেন বলে অভিযোগ করেন ছাত্রলীগের সাবেক স্কুলছাত্রবিষয়ক সম্পাদক মো. জয়নাল আবেদীন।
আরও পড়ুন:
৪ নেতার আশ্বাসে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের আন্দোলন প্রত্যাহার
Comments