আর্চারের গতি সামলাতে পারলে তো!

ভ্যান ডের ডুসেনকে বাউন্সারে কুপোকাত করে উড়ছিলেন জোফরা আর্চার। হইহই করে খানিকক্ষণ উল্লাস করে কয়েকজন ইংলিশ সমর্থক সমস্বরে চিৎকার করে উঠলেন- ‘মারভেলাস ইনক্লুশন’। সত্যিই তাই। ইংল্যান্ডের প্রথম ঘোষিত বিশ্বকাপ স্কোয়াডে যে ছিলেনই না আর্চার। দ্বিতীয় দফায় দলে আসার পরই শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন। ফ্রেঞ্চাইজি ক্রিকেটের সৌজন্যে সেই শোরগোলের কারণও বেশ শক্ত। তবে বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চ কাঁপাতে পারলেই না আসল নায়ক। আর্চার প্রথম দিনেই দেখিয়ে দিলেন তা।
jofra archer
ছবিঃ রয়টার্স

ভ্যান ডার ডুসেনকে বাউন্সারে কুপোকাত করে উড়ছিলেন জোফরা আর্চার। হইহই করে খানিকক্ষণ উল্লাস করে কয়েকজন ইংলিশ সমর্থক সমস্বরে চিৎকার করে উঠলেন- ‘মারভেলাস ইনক্লুশন’। সত্যিই তাই। ইংল্যান্ডের প্রথম ঘোষিত বিশ্বকাপ স্কোয়াডে যে ছিলেনই না আর্চার। দ্বিতীয় দফায় দলে আসার পরই শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সৌজন্যে সেই শোরগোলের কারণও বেশ শক্ত। তবে বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চ কাঁপাতে পারলেই না আসল নায়ক। আর্চার প্রথম দিনেই দেখিয়ে দিলেন তা।  

বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০৪ রানে উড়িয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ড। ৮৯ রান, ২ উইকেট আর অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ নিয়ে ম্যাচ সেরা বেন স্টোকস। তবে ৩১২ রানের লক্ষ্যে প্রোটিয়ারা যে এমন ধসে গেল তা আর্চারের কারণেই। ৭ ওভার বল করে ২৭ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। আরেকজনকে আহত করে মাঠ ছাড়া করেছেন। উইকেটের খাতায় তিন থাকলেও ম্যাচে তার প্রভাব অনেক বেশি। এক বাক্যে তা স্বীকার করে নিলেন পরাজিত দলের অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিও।

ঠিক জায়গায় বল ফেলা, প্রচণ্ড গতিতে মাত করা, শরীর তাক করা বাউন্সার টুকে ব্যাটসম্যানকে বেসামাল করে দেওয়ার দক্ষতায় আর্চার নিখুঁত। অবিশ্বাস্য অ্যাথলেটিসিজম দিয়ে ফিল্ডিংয়ে তিনি ক্ষিপ্র। ব্যাট হাতে দরকারে তুলতে পারেন ঝড়। এমন একজন প্যাকেজকে বিশ্বকাপ দলে না নিয়ে পারতই না ইংল্যান্ড। কিন্তু তার আগে নিয়মতান্ত্রিক কিছুটা জটিলতা ছিল।

ব্রিটিশ বাবা আর ক্যারিবিয়ান মায়ের সন্তান আর্চারের জন্ম আর বেড়ে ওঠা বার্বাডোজে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন ২০১৪ যুব বিশ্বকাপেও। হিসাব মতে ক্যারিবিয়ান জার্সিতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরুর সুযোগ ছিল তার বেশি। ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেলেও ব্রিটেনে টানা বেশিদিন বসবাস না করায় ২০২২ এর আগে ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে চাপানোর সুযোগও ছিল না। কিন্তু সবই হয়েছে। ওই যে অবিশ্বাস্য প্রতিভা। তাতে ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে নিয়ম। বহু সংস্কৃতিকে নিজেদের মধ্যে আত্তীকরণ করে নেওয়ার ইংলিশ উদারতা দুয়ার খুলে দিয়েছে আর্চারের। তাকে নিয়ে বিশ্বকাপে শিরোপা জেতার খরা ঘোচানোর দুয়ারও হয়তো খুলে যাবে ইংল্যান্ডের!

অন্তত প্রথম ম্যাচে এই পেসারের চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্য তেমনই ইঙ্গিত করে।

বল হাতে নিয়েছিলেন ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে। চতুর্থ ওভারেই হানেন প্রথম আঘাত। তবে উইকেট নয়। হাশিম হামলাকে বাউন্সারে আহত করে মাঠছাড়া করেছেন। আর্চারের তীব্র গতির বাউন্সার পুল করতে গিয়ে পারেননি আমলা। উলটো সাপের মতো ছোবল হানে তার শরীরে। দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্দশার শুরু তখনই। দলের ৭ উইকেট পড়ার পর আমলা ফের নেমেছিলেন। করতে পারেননি কিছুই। লিয়াম প্লাঙ্কেটের আরেক বাউন্সার তাকে আর মাঠে ফেরার কোনো সুযোগ দেয়নি।

তার বেশ আগেই অবশ্য ম্যাচের ফয়সালা অনেকটা পরিষ্কার। এবং তা আর্চারের ঝাঁজেই। অষ্টম ওভারে গিয়ে প্রথম উইকেটের দেখা পান আর্চার। এইডেন মার্করামকে বাড়তি বাউন্স দিয়ে নাজেহাল করে বিদায় করার পর ফাফ ডু প্লেসিকেও ছেঁটেছেন রাজার মতো দাপট দেখিয়ে।

প্রথম স্পেলের পর  লম্বা বিরতি নিয়েছিলেন। ওই সময় প্রতিরোধ এসেছিল প্রোটিয়াদের ব্যাটে। কিন্তু ডুসেনের বাড় বাড়ন্ত দেখে ফের রুদ্রমূর্তি নিয়ে হাজির ২৪ বছরের এই গতিতারকা। কখনো তীব্র গতি, হুট করেই আবার মাথা খাটানো স্লোয়ার। তার স্কিল আর বুদ্ধির জোরের সঙ্গে পেরে ওঠা যে কঠিন। লড়াই থামিয়ে ডুসেনের ফেরার ভঙ্গিই যেন বলে দিচ্ছিল তা।

ম্যাচ শেষে স্টোকসের ম্যাচসেরার কৃতিত্ব ছাপিয়েও ইংলিশ দর্শকদের মুখে মুখে ফিরছে- ‘আর্চার আর্চার’। ক্রিকেটের জনক দেশ হয়েও আগের এগারো বিশ্বকাপে একবারও ট্রফি জেতা হয়নি ইংল্যান্ডের। এবার সেই অপেক্ষা ঘোচানোর বিশ্বাস জন্মেছে তাদের। উদ্বোধনী ম্যাচ থেকেই। দাপুটে জয়ে শুরুর পর সবাই কোরাস ধরলেন- ‘দিস টাইম উইল বি... দিস টাইম উইল বি’।

প্রোটিয়া অধিনায়ক ডু প্লেসিও দেখালেন আর্চারের প্রতি মুগ্ধতা, ‘আমার মনে হয় সে ইংল্যান্ড স্কোয়াডের এক্স ফ্যাক্টর। খুব বেশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেনি, তাই ওর অ্যাকশন রিড করাও মুশকিল। দারুণ সব স্লোয়ার মারে, আবার হুট করে তীব্র গতির বাউন্সার ছুঁড়ে দেয়, যা সামলানো বেশ শক্ত।’

Comments