অন্যতম ইয়াবা গডফাদার সাইফুল করিম ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দেশের অন্যতম শীর্ষ ইয়াবা গডফাদার সাইফুল করিম নিহত হয়েছেন। সেসময় উদ্ধার করা হয় বিপুল ইয়াবা ও অস্ত্র।
Saiful Karim
কক্সবাজারে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ইয়াবা গডফাদার সাইফুল করিম। ছবি: প্রথম আলোর সৌজন্যে

কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দেশের অন্যতম শীর্ষ ইয়াবা গডফাদার সাইফুল করিম নিহত হয়েছেন। সেসময় উদ্ধার করা হয় বিপুল ইয়াবা ও অস্ত্র।

আজ (৩১ মে) ভোর রাতে টেকনাফ সদরের বন্দর এলাকায় এই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে।

টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানান, গ্রেপ্তারের পর পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার এক নম্বর তালিকাভুক্ত দেশের শীর্ষ মাদক কারবারি সাইফুল করিম (৪৫) নিহত হয়েছেন।

ঘটনাস্থল থেকে নয়টি দেশীয় লম্বা বন্দুক (এলজি), ৪২ রাউন্ড শটগানের তাজা কার্তুজ ও ৩৩ রাউন্ড খালি খোসা এবং ১ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ওসি জানান, এ সময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। তারা হলেন: এসআই রাসেল আহমেদ, কনস্টেবল মো. ইমাম হোসেন এবং মোহাম্মদ সোলাইমান।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত শীর্ষ মাদক কারবারি সাইফুল করিম টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের শীলবনিয়াপাড়া এলাকার গ্রাম্য চিকিৎসক মোহাম্মদ হানিফের ছেলে। নিহত সাইফুল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তালিকাভুক্ত শীর্ষ গডফাদার। তার বিরুদ্ধে টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন থানায় সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর মাদক কারবারি সাইফুল করিমকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

সাইফুল স্বীকারোক্তিতে জানান যে, গত কয়েকদিন আগে ইয়াবার একটি বড় চালান ইঞ্জিল চালিত নৌকায় করে মিয়ানমার থেকে এনে টেকনাফ স্থলবন্দর সংলগ্ন সীমানা প্রাচীরের শেষ প্রান্তে নাফ নদীর পাড়ে মজুদ রাখা হয়েছে।

তার দেওয়া এসব তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল ইয়াবা উদ্ধারের জন্য সেখানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তার অপর সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। এতে ঘটনাস্থলে বন্দুকধারীদের গুলিতে এসআই রাসেল আহমেদ, কনস্টেবল মো. ইমাম হোসেন এবং সোলাইমান আহত হন।

পুলিশ তখন নিজেদের জীবন ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষার্থে ৫২ রাউন্ড গুলি চালায়। এক পর্যায়ে পালানোর সময় সাইফুল করিম (৪৫) গুলিবিদ্ধ হয়। গোলাগুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসতে থাকলে পুলিশ গুলি করা বন্ধ করে। ঘটনাস্থল থেকে অন্য অস্ত্রধারী মাদক কারবারিরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি করে আসামিদের বিক্ষিপ্তভাবে ফেলে যাওয়া নয়টি এলজি, ৪২ রাউন্ড শটগানের তাজা কার্তুজ এবং ৩৩ রাউন্ড খালি খোসা এবং ১ লাখ ইয়াবা জব্দ করা হয়।

গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাইফুল করিম ও আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাইফুল করিমকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের নেওয়ার পথে সাইফুল করিম মারা যান। তার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সাইফুল করিম সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় শীর্ষ ইয়াবা গডফাদার ছিলেন। টেকনাফে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলে তিনি মিয়ানমারে পালিয়ে যান। মিয়ানমার থেকে নিয়মিত দুবাইতে যাতায়াত করতেন তিনি। দুবাইয়েও তার ব্যবসা রয়েছে।

গত ২৫ মে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে বিমানযোগে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশে আসেন সাইফুল। বিমানবন্দরেই তিনি আটক হন গোয়েন্দা সংস্থার হাতে। 

এর আগে তার আপন তিন ভাই ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

সাইফুল সর্বপ্রথম ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে ইয়াবার চালান পাচার করে আনেন। ২০১৭ সালে তিনি এনবিআর কর্তৃক ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির (সিআইপি) স্বীকৃতি পান। কক্সবাজার শহরের কলাতলী, চট্টগ্রাম, ঢাকা, দুবাইসহ বিভিন্ন স্থানে তার ফ্ল্যাট ও বাড়ি রয়েছে। সারাদেশে তার ইয়াবা নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। এসকে ইন্টারন্যাশনাল নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে মূলত তার ব্যবসায় ছিলো ইয়াবা। একযুগের ব্যবধানে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যান সাইফুল। অবশেষে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ মধ্য দিয়ে সাইফুল-অধ্যায়ের অবসান হলো।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

10h ago