দক্ষিণ আফ্রিকা শক্তিশালী, জেতার সামর্থ্য আছে বাংলাদেশের
২০১৫ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলা দক্ষিণ আফ্রিকাকে এবার শিরোপা জয়ের দাবিদারদের তালিকায় স্থান দেওয়া যাচ্ছে না। যদিও আইসিসি র্যাঙ্কিং বলছে, ওয়ানডে ক্রিকেটের তৃতীয় সেরা দল তারা। কিন্তু তাদের গায়ে আন্ডারডগ তকমা। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকা দলে তারকা ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের অভাব না থাকলেও ম্যাচ উইনারের ঘাটতি রয়েছে।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই চোখে লেগেছে সেসব। স্বাগতিকদের বিপক্ষে স্রেফ উড়ে গেছে তারা। দলটির ফিল্ডিং নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ না থাকলেও ব্যাটিং ও বোলিং- দুই লাইনআপেই নানা দুর্বলতা বেশ স্পষ্ট। আর এই দুর্বল জায়গাগুলোতে আঘাত করতে পারলে তাদেরকে হারানো কঠিন হবে না। যদিও বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বৈরথে কাগজে-কলমে এগিয়ে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাই। বিশ্বকাপে তাদের দুটি জয়ের বিপরীতে টাইগারদের জয় একটি।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে আজ (২ জুন) বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। ওভালে এই ম্যাচটি দুদলের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের ম্যাচে হেরে যাওয়া প্রোটিয়াদের লক্ষ্য- ঘুরে দাঁড়ানো। বাংলাদেশের লক্ষ্য- দুর্দান্তভাবে বিশ্বকাপ শুরু করা, তা হলে সেমিফাইনাল খেলার যে স্বপ্ন বুকে বুনে তারা দেশ ছেড়েছে তা পূরণের পথে আত্মবিশ্বাস ও পুঁজি দুটোই পাবে তারা।
প্রতিপক্ষের দুর্বলতাকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি নিজেদের শক্তিকেও তো ময়দানে মেলে ধরা চাই। এই দিকটাই বাংলাদেশকে আরও বেশি সাহস জোগাচ্ছে। যে কোনো দলকে হারানো যায়- এই মন্ত্র আওড়েই মাঠে নামে ১৬ কোটি মানুষের ১১ জন স্বপ্নসারথি। ২০১৫ আসরের পর থেকে দলের উন্নতি হয়েছে ধাপে ধাপে। গেল চার বছরে আটটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জেতা, ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলা, আয়ারল্যান্ডে সবশেষ ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হওয়া মাশরাফি বিন মর্তুজার দলের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখে।
এবারে নজর দেওয়া যাক দক্ষিণ আফ্রিকার ঘাটতির জায়গাগুলোর দিকে। সেসব জায়গায় সাকিব-তামিম-মুশফিক-মোস্তাফিজদে
ব্যাটিংয়ের কথাতেই আসা যাক প্রথমে। কুইন্টন ডি কক, হাশিম আমলা ও অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসি- এই তিন মহীরুহকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে দলটির ব্যাটিং। আইসিসি ওয়ানডে ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে ডি কক চারে, দু প্লেসি ছয়ে। আমলা অবশ্য নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। তাদেরকে উইকেট থেকে উপড়ে ফেলতে পারলেই অল্প রানে বেঁধে ফেলা যাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে, এটা প্রায় নিশ্চিত। কেননা, বাকি ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স মোটেও ধারাবাহিক নয়। ইংলিশদের বিপক্ষে লক্ষ্য তাড়ায় ভালো শুরুর পরও ৭৮ রানে শেষ ৮ উইকেট হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
এর ওপর প্রথম ম্যাচে বাউন্সারে মাথায় আঘাত পাওয়া আমলা বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলবেন কী-না সেটাও নিশ্চিত নয়। জেপি ডুমিনি-ডেভিড মিলাররা তাক লাগিয়ে দিলে অন্য হিসাব। তবে সাম্প্রতিক অতীতে তাদের জ্বলে ওঠার নজির খুবই কম। দলটির ব্যাটিং লাইনআপও দীর্ঘ নয়। ছয়ে গিয়েই থেমে যায় বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের তালিকা। বাকিদের দিয়ে কাজ চালানো যায়। তবে প্রয়োজনের মুহূর্তে তাদের সেরাটা পাওয়া যাবে কী না তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে।
একসময় অলরাউন্ডারদের তীর্থভূমি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। জ্যাক ক্যালিস, শন পোলক, ল্যান্স ক্লুজনারদের মতো ব্যাটে-বলে দাপট দেখানো ক্রিকেটাররা ছিলেন যে কোনো দলের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক। সেই চিত্র পাল্টে গেছে। প্রোটিয়া শিবিরে বেশ কয়েকজন অলরাউন্ডার থাকলেও তারা মাঝারি মানের। আন্দিল ফেলুকওয়ায়ো, ক্রিস মরিস কিংবা ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস কেউই উঁচু মানের নন।
সবশেষে বোলিং। বরাবরের মতো এবারও এই ভাণ্ডারে অস্ত্রের অভাব নেই দক্ষিণ আফ্রিকার। ওয়ানডে বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে যথাক্রমে চার ও পাঁচে আছেন লেগ স্পিনার ইমরান তাহির ও পেসার কাগিসো রাবাদা। সঙ্গে আছেন অভিজ্ঞ ডেল স্টেইন ও উদীয়মান প্রতিভা লুঙ্গি এনগিডি। কিন্তু স্টেইন চোটে থাকায় হিসাব পাল্টে গেছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে তার নামার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। স্টেইন না থাকায় বোলিং আক্রমণে একজন নেতার অভাব অনুভব করছে প্রোটিয়ারা। মাশরাফি মাঠে না থাকলে মোস্তাফিজ-রুবেলদের মনের জোর যেমন কমে যায়, ব্যাপারটা তেমনই। ইংলিশদের বিপক্ষে ম্যাচটি তার প্রমাণ। তাহির-রাবাদা-এনগিডিরা একের বেশি উইকেট নিয়েছেন। তার পরও বড় স্কোর গড়তে সমস্যা হয়নি স্বাগতিকদের।
বাংলাদেশ দল যদি স্নায়ুচাপ ধরে রেখে নিজেদের পরিকল্পনাগুলো মাঠে ফলিয়ে দেখাতে পারে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অস্বস্তির জায়গাগুলোর সুযোগ নিতে পারে, তবে অতীত আর পরিসংখ্যান যা-ই বলুক না কেন জয় পাওয়াটা মাশরাফি বাহিনীর পক্ষে অসম্ভব নয়।
Comments