যেন বিশ্বকাপে রঙ নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ
আগের দিন ওভালে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন ছিল দুপুরে। স্থানীয় সময় বিকেল ছয়টাতেও তাই অনেক সাংবাদিকের কাজ শেষ হলো না। কিন্তু ছয়টা থেকেই ওভাল মাঠের নিরাপত্তাকর্মীদের তাড়া। কাজ শেষ করতে হবে, ছাড়তে হবে মাঠ। এমনিতে দায়িত্বের বাইরে গিয়ে ছয়টার পরেও তারা অতিরিক্ত সময় ব্যয় করেন। কিন্তু এদিন আর করতে চাইলেন না। তার কারণ সন্ধ্যে বেলাতেই যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল। লিভারপুল-টটেনহ্যাম হটস্পার ফাইনালের কাছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ঝাঁজ কিছুই না।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল ঘিরেই এ কদিন লন্ডনের বাতাস মাতোয়ারা ছিল। বিশ্বকাপে রঙ যা কেবল মিলেছে ইংল্যান্ডের খেলার দিন। তাও সেটা গ্যালারির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ওভাল মাঠ থেকে বেরোলে বিশ্বকাপ বলে আর কিছুর চিহ্নই দেখা যায়নি এতদিন।
রবিবার (২ জুন) সকাল বেলা আমূল পাল্টে গেল ছবি। পূর্ব লন্ডনের বার্কিং স্টেশনে টিউব (মেট্রো রেল) ধরতে গিয়েই দেখা পাওয়া গেল লাল-সবুজ জার্সি পরা জনা দশেকের। বার্কিং থেকে ওয়েস্টহ্যাম স্টেশনে গিয়ে সেই সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ। লন্ডন ব্রিজ স্টেশনে সেই সংখ্যা বেড়েছে আরও কয়েকগুণ! তখন ওভালগামী ট্রেন পুরোটাই যেন লাল-সবুজের সমারোহ।
ওভাল নেমে মনে হলো এটা বোধহয় বাংলাদেশই। বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে, বাংলাদেশের জার্সি পরে কেউ এসেছেন পরিবারসমেত। কেউ দল ধরে আবার কেউ বন্ধু-বান্ধব মিলে। এদের সবাই যে লন্ডন থাকেন এমনও না। কেউ এসেছেন সাসেক্স থেকে, কেউ কার্ডিফ, কেউ বার্মিংহাম থেকে। পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে বিভিন্ন ভেন্যুতে ঘুরে তারা বাংলাদেশের খেলা দেখবেন। আয়োজন তাদের বিস্তর।
ইংল্যান্ডের খেলার দিন পুরো মাঠ ভরপুর থাকলেও বাইরে উত্তাপের কোনো রেশ পাওয়া যায়নি। কিন্তু এদিন ওভালের মাঠের পাশের গলি যেন মিরপুর দুই নম্বর! ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ স্লোগানে তখন পুরো এলাকাই মাতোয়ারা। ওভালের দর্শক ধারণ ক্ষমতা ২৩ হাজার ৫০০। বেশিরভাগ আসনই ভর্তি এবং অধিকাংশই বাংলাদেশিদের দখলে। সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানদের দেখতে পেয়ে বেড়েছে তাদের উত্তেজনা, উন্মাদনা।
বাংলাদেশের জন্য গলা ফাটাতে আসা এদের সবারই প্রত্যাশার পারদ বেশ চড়া। বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে দেখছেন প্রায় সবাই। কেউ কেউ তো মাশরাফি বিন মর্তুজার হাতেই দেখছেন বিশ্বকাপ।
আগের দিন সমর্থকদের মধ্যে এমন হাইপ (উন্মাদনা) ওঠায় ভয়ের কথা জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এত বড় মঞ্চে বাংলাদেশ যে আসলে ফেভারিট নয় তা বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে নিজেদের ওপর থেকে চাপ সরাতে চেয়েছেন মাশরাফি। কিন্তু মানুষজন তার কথা শুনলে তো!
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে জেতা-হারার সঙ্গে নির্ভর করছে হাইপের ওঠা-নামাও। তবে আপাতত আগামীতে কী হবে সরিয়ে দেখলে নিশ্চিত করেই বলতে হবে, লন্ডনে যে ক্রিকেটের একটা বিশ্বকাপ হচ্ছে বাংলাদেশ খেলতে নামতেই সেটা বোঝা গেল প্রথম।
Comments