জোড়া সেঞ্চুরি করেও পাকিস্তানের কাছে হারল ইংল্যান্ড
লক্ষ্যটা যতই বড় হোক, ট্রেন্ট ব্রিজের উইকেট বলে কথা। এ মাঠে দুই দুইবার হয়েছে ওয়ানডে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের রেকর্ড। তাই ৩৪৮ রান করেও স্বস্তিতে ছিল না পাকিস্তান। স্বস্তি পাও-ওনি। শেষ ওভার পর্যন্ত ম্যাচে ছিল ইংল্যান্ড। জো রুট ও জস বাটলারের জোড়া সেঞ্চুরিতে এক পর্যায়ে তো মনে হয়েছিল ম্যাচ জিতে নিচ্ছে তারাই। তবে শেষ দিকে পেসারদের দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে জয় পায় পাকিস্তানই। ১৪ রানের স্বস্তির জয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ালো আনপ্রেডিক্টেবল দলটি।
বিশ্বকাপে যেখানে আগের পাঁচ ম্যাচে কোন সেঞ্চুরি আসেনি, সেখানি এক ইনিংসেই জোড়া সেঞ্চুরি করে দেখাল ইংল্যান্ড। কিন্তু তাও যথেষ্ট হলো না। কারণ ওই একটাই। দুইজনই সেঞ্চুরির পর ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। শেষদিকে পাকিস্তানি পেসাররাও ছিল দুর্দান্ত। দুই সেঞ্চুরিয়ান আউট হওয়ার পরও ম্যাচ ছিল ইংলিশদের হাতেই। ১৮ বলে দরকার ছিল ৩৮ রান। হাতে ছিল চার উইকেট। সবচেয়ে বড় কথা উইকেটে তখন সেট হয়ে গেছেন মইন আলি ও ক্রিস ওকস। এমন উইকেটে কাজটা আহামরি কঠিন ছিল না। কিন্তু তখনই ওয়াহাব রিয়াজ দারুণ এক ওভার করে বদলে দেন ম্যাচের চিত্র। শেষ দুই বলে ফিরিয়ে দেন দুই সেট ব্যাটসম্যানকে। তাতেই ম্যাচ হেলে পড়ে পাকিস্তানের দিকে।
লক্ষ্য তাড়ায় অবশ্য শুরুটা ভালো হয়নি ইংলিশদের। দলীয় ১২ রানেই জেসন রয়কে হারায় তারা। আরেক ওপেনার অবশ্য দ্বিতীয় উইকেট জো রুটের সঙ্গে ৪৮ রানের জুটি গড়েছিলেন। তবে এ জুটি ভাঙার পর অল্প সময়ে আরও দুটি উইকেট তুলে নেয় পাকিস্তান। ফলে দলীয় ১১৮ রানে তোপ অর্ডারের চার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ইংলিশরা। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে রুটের সঙ্গে জস বাটলারের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। স্কোরবোর্ডে ১৩০ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটসম্যান। এ জুটি ভাঙেন শাদাব খান। রুটকে কুইকার ডেলিভারিতে মোহাম্মদ হাফিজের তালুবন্দি করেন। তবে তখনও পাকিস্তানিদের জয়ের পথে বাধা হয়েছিলেন বাটলার। সেঞ্চুরিও তুলে নেন সাবলীলভাবে। কিন্তু আমিরের ওভারে সেঞ্চুরি তোলার পরের বলেই আউট ওয়াহাব রিয়াজের হাতে।
এরপর মইন আলি ও ক্রিস ওকসও চোখ রাঙাচ্ছিলেন। দুই সেঞ্চুরিয়ানকে হারানোর ধাক্কা সামলে নিয়ে ইনিংস মেরামত করে জয়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। ৩২ রানের ছোট একটি জুটিও গড়েন। কিন্তু এরপর ওয়াহাব রিয়াজের সে ওভারই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় তাদের। ফলে ১৪ রান দূরেই থামে তাদের ইনিংস। ৯ উইকেটে ৩৩৪ রান করে তারা।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১০৭ রানের ইনিংস খেলেন রুট। ১০৪ বলে ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। মাত্র ৭৬ বলে ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন বাটলার। ৯টি চার ও ২টি ছক্কা দিয়ে নিজের ইনিংস সাজান এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। এছাড়া জনি বেয়ারস্ট্রো করেন ৩২ রান। পাকিস্তানের পক্ষে ৮২ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নেন ওয়াহাব। এছাড়া ২টি করে উইকেট পান শাদাব খান ও আমির।
এদিন টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার ফখর জামান ও ইমাম-উল-হক দারুণ সূচনা এনে দেন দলকে। ওপেনিং জুটিতেই আসে ৮২ রান। জুটি ভাঙার পর অবশ্য খুব বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি আরেক ওপেনারও। তার কারণ অবশ্য ক্রিস ওকসের দুর্দান্ত এক ক্যাচ। এরপর ব্যাটিংয়ে নামেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ হাফিজ। জুটি বাঁধেন বাবর আজমের সঙ্গে। তৃতীয় উইকেটে ৮৮ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটসম্যান।
দলের সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজমও ভালো ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। ব্যক্তিগত ১ রানে জীবন পেয়েছিলেন। ওকসের আরও একটি দারুণ ক্যাচে ফিরেছেন তিনি। তবে এর আগে দলের জন্য কার্যকরী ৬৩ রানের ইনিংস খেলেছেন। ৬৬ বলের ইনিংসটি ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজিয়েছেন এ ব্যাটসম্যান।
উইকেটে নেমে প্রথম বলেই ডাউন দ্য উইকেট খেলে চার মেরে শুরু করা হাফিজ ব্যক্তিগত ১৪ রানে জেসন রয়ের হাতে পান সহজ জীবন। সে জীবন দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে করেছেন দলের সর্বোচ্চ স্কোর। ওকসের আরও একটি দারুণ ক্যাচের বলী হবার আগে খেলেছেন ৮৪ রানের ইনিংস। ৬২ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস।
দারুণ ব্যাট করেছেন অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদও। ৪৪ বলে করেন ৫৫ রান। এছাড়া ইমাম ৪৪ ও ফখর ৩৬ রান করেন। ফলে ৩৪৮ রানের বড় সংগ্রহই পায় দলটি। ইংল্যান্ডের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন মইন আলি ও ক্রিস ওকস। এছাড়া ২টি উইকেট নেন মার্ক উড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ৩৪৮/৮ (ইমাম ৪৪, ফখর ৩৬, বাবর ৬৩, হাফিজ ৮৪, সরফরাজ ৫৫, আসিফ ১৪, মালিক ৮, ওয়াহাব ৪, হাসান ১০*, শাদাব ১০*; ওকস ৩/৭১, আর্চার ০/৭৯, মইন ৩/৫০, উড ২/৫৩, স্টোকস ০/৪৩, রশিদ ০/৪৩)।
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৩৪/৯ (শাদাব ২/৬৩, আমির ২/৬৭, ওয়াহাব ৩/৮২, হাসান ০/৬৬, হাফিজ ১/৪৩, মালিক ১/১০)।
ফলাফল: পাকিস্তান ১৪ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মোহাম্মদ হাফিজ (পাকিস্তান)।
Comments