ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়কে যাত্রী দুর্ভোগ, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বাস মালিক ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। গত কয়েকদিন ধরে উভয় ঘাটে ঈদ ফেরত যাত্রীদের ভিড় থাকায় পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকরা স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় গাড়ির কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে তিন থেকে চারগুণ ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
Manikganj passenegers hassel
পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটে ঈদ ফেরত যাত্রীদের ভিড়। ছবি: স্টার/জাহাঙ্গীর শাহ

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বাস মালিক ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। গত কয়েকদিন ধরে উভয় ঘাটে ঈদ ফেরত যাত্রীদের ভিড় থাকায় পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকরা স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় গাড়ির কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে তিন থেকে চারগুণ ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে, পরিবহন সংকটের কারণে বাসের পাশাপাশি খোলা ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, রিক্সা-ভ্যানে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন যাত্রীরা।

আজ (১০ জুন) সকাল থেকে বিকেলে পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাটে অবস্থানকালে এই প্রতিবেদকের কাছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অন্তত দুই শতাধিক যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন।

বেলা দুইটার দিকে পাটুরিয়া লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সৌখিন পরিবহনের একটি বাসে ওঠার সময় কুষ্টিয়া এলাকার তিন যাত্রী মাসুদ হোসেন, মনির হোসেন এবং মাহফুজ রহমানের কাছে বাসের সহকারী পাটুরিয়া থেকে সাভার পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ভাড়া চাচ্ছেন ৮০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা করে। এ সময় অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ার কারণে তারা প্রতিবাদও করেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এক ঘণ্টা অপেক্ষার পরও কোনো গাড়িতে উঠতে পারেননি তারা।

মাগুরা জেলা শহরের আনিসুর রহমান বলেন, “রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া অংশে বাসে দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটেও একই চিত্র। ১০০ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, “নীলাচল পরিবহনের বাসের চালক ও সহকারী যাত্রীদের কাছ থেকে পাটুরিয়া থেকে ঢাকার ভাড়া ২০০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা করে নিচ্ছেন।”

রাজবাড়ি জেলার হাসিনা আখতার জানান, তিন শিশুসন্তান নিয়ে তিনি ২ ঘণ্টা ধরে পাটুরিয়া ঘাটে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। ঈদ শেষে ঢাকার ফিরছেন বলে হাতে অতিরিক্ত টাকা নেই। ঢাকা যেতে তার হাতে আছে ৭০০ টাকা কিন্তু বাস ভাড়া চাচ্ছে ৯০০ টাকা। এ কারণে তিনি কোন গাড়ীতেই উঠতে পারছেন না। বড় বিপদে পড়েছেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে, পাটুরিয়া ঘাটে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তার কাছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করলে ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী আকবর এবং মানিকগঞ্জ ডিবি পুলিশের এসআই ভিক্টর ব্যানার্জি তাৎক্ষণিকভাবে নীলাচল ও পলাশ পরিবহনের বাসের চালককে আটক এবং পরে তাদের অতিরিক্ত ভাড়া থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করে দেন। একইসঙ্গে অতিরিক্ত আদায়কৃত ভাড়া যাত্রীদের ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।

অপরদিকে, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের লোকজন দিয়ে ঘাটে প্রতিটি গাড়ী থেকে প্রতি ট্রিপের জন্য ৩০০ টাকা চাঁদা আদায় করছেন বলে জানান কয়েকটি পরিবহনের বাসের চালক ও সহকারী।

নাম না প্রকাশের শর্তে চালক ও সহকারীরা বলেন, “বাস মালিকদের সঙ্গে এলাকাবাসীর পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতেই এই চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে।”

এই প্রতিবেদক একটি বাসের সহকারীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা নিতে দেখেছেন স্থানীয় মনির হোসেন নামের এক যুবককে। 

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম বলেন, “যাত্রীর তুলনায় গাড়ির সংখ্যা কম। এ কারণে বাস মালিক-শ্রমিকরা অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সকাল থেকেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ আসছে। পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।”

অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রতিরোধে তারা কাজ করছেন। এ ব্যাপারে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলেও জানান তিনি।

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, “অতিরিক্ত বাড়া আদায় ঠেকাতে পাটুরিয়া ঘাটে এবং মহাসড়কে দুটি মোবাইল কোর্ট বসানো হয়েছে।”

এর আগে, গত শনিবার পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে কয়েকটি পরিবহনকে জরিমানা করা হয়েছে এবং তাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তবে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে পর্যাপ্ত ফেরি ও লঞ্চ থাকায় যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করতে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে জানান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) সহকারী মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান।

এই রুটে যাত্রীদের যেকোনো ধরণের সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago