রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দেরি হওয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিবের গভীর উদ্বেগ
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দেরি হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি এ উদ্বেগের কথা জানান।
রোহিঙ্গা ইস্যু এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনসহ বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য বিষয় নিয়ে এ বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।
বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরেন। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজভূমি রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকারের অসহযোগিতা ও বিদ্যমান অন্যান্য সমস্যাগুলো তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবকে অবহিত করেন।
রোহিঙ্গা সংকটের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের দায়বদ্ধতার ইস্যুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সাম্প্রতিক ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কেও জাতিসংঘ প্রধানকে অবহিত করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
এছাড়া বিশ্বব্যাপী জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করার বিষয়ে জাতিসংঘ ও জাতিসংঘের মহাসচিবের অংশগ্রহণ ও সম্পৃক্ততার অনুরোধ জানান শাহরিয়ার আলম।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার কারণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের উদারতা ও মানবিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশের সক্রিয় কার্যক্রমের প্রশংসা করে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “আসন্ন ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটে বাংলাদেশের সক্রিয় এবং ফলপ্রসূ অংশগ্রহণের দিকে তাকিয়ে আছে জাতিসংঘ।”
এছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ অসামান্য অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানান জাতিসংঘ প্রধান।
বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খান ফিরোজ আহমেদ এবং মন্ত্রী ড. মো. মনোয়ার হোসেন।
এছাড়া স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘের পিস অপারেশন বিভাগের প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রুয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
বৈঠকে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় প্রতিশ্রুতির বিষয়টি তুলে ধরেন শাহরিয়ার আলম।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অব্যাহত অংশগ্রহণ ও সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন ল্যাক্রুয়া।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে জানান, বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে নারী শান্তিরক্ষী বৃদ্ধি করছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে। এছাড়া মহাসচিবের অ্যাকশন ফর পিসকিপিং এজেন্ডায় একটি ‘চ্যাম্পিয়ন কান্ট্রি’ হিসেবে বাংলাদেশ নিবিড়ভাবে কাজ করবে বলে নিশ্চয়তা দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
জাতিসংঘের পিসকিপিং অপারেশনের উচ্চ পর্যায়ের পদে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে অনুরোধ জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কারিগরি সহায়তা, সর্বাধুনিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ ও বিভিন্ন পেশাগত প্রশিক্ষণ প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ল্যাক্রুয়া।
Comments