টন্টনের ‘ক্রিকেট জ্বর’

Taunton
ছবি: একুশ তাপাদার

ব্রিস্টল থেকে আঁকাবাঁকা নদীর পাড় দিয়ে উঁচুনিচু পথ ধরে টন্টনের যাত্রা আভাস দিচ্ছিল, ব্রিটেনের দিগন্ত বিস্তৃত হচ্ছে আরও। নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের মাত্রাও হয়ত বাড়বে ক্ষণে ক্ষণে। ফাঁকা, সুনসান নিরবতাও হয়ত ঝাঁকিয়ে বসবে তীব্রভাবে। বিকেলবেলা টন্টনে নামতেই অনুমান সত্য। এ যে শহরই নয়, হই হল্লা নেই, ভিড়ভাট্টা দূরে থাক। বাড়িঘর ফেলে মানুষজন সব কোথায় গেল এই প্রশ্নই হয়ত জুতসই মনে হবে।

ইংল্যান্ডের বড় শহরেই ক্রিকেট বিশ্বকাপের অতো কদর নেই। খেলা হচ্ছে সবাই এইটুকুই টুকটাক জানে। হইচই নেই। আলাপও নেই। এমন মফস্বলে তাহলে আর কি এমন হবে? কিন্তু সেই ভাবনায় মোড় ঘোরালো টন্টন। বাসে আসার পথেই দুই বৃদ্ধার ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে আলাপ শুনেছিলাম। তখন আবার চলছিল পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ। একজনের সেই ম্যাচ দেখার কথা ছিল। পারিবারিক কারণে হুট করে ব্রিস্টল যেতে হয়েছে, যখন ফিরছেন তখন খেলার প্রায় দফারফা। তার আফসোসকে পুরো শহরের প্রেক্ষাপট ভাবার কোন কারণ ছিল না।

বাস থেকে নেমে হাঁটাপথে কয়েকবারই মিলল ‘বিশ্বকাপের’ দেখা। ওই ব্যানার ফেস্টুনের মধ্যে। তবে খেয়াল করে দেখলাম অন্য শহরে কেবল ভেন্যুর সামনেই ভেন্যুর ফেস্টুন টাঙ্গানো ছিল। কেবল টনটনে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিশ্বকাপের আমেজ। চট করে এই তফাৎটা চোখে লাগার মতো। এই ছোট্ট মফস্বল শহরে যেখানে আস্তানা গেড়েছি তার মালিক অ্যালান রবিনসন। ভদ্রলোকের শেকড় গায়ানায়। জন্মসূত্রেই তিনি ব্রিটিশ। আপাতত তার ঘরেই সপ্তাহখানেকের ভাড়াটে আমি। গায়ানার বলেই অ্যালানের ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ থাকা স্বাভাবিক। বিশ্বকাপের সব খবরাখবরও রাখেন তিনি। ১৭ জুন এখানে বাংলাদেশের বিপক্ষে তার দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সন্ধ্যায় বাংলাদেশ দলের টিম হোটেলে যাওয়ার পথে টেক্সি চালক আলির সঙ্গে আলাপ। তার বাড়ি তিউনেশিনায়। এক যুগ ধরে থাকছেন টন্টনে। ক্রিকেটের মাথামুণ্ডু বুঝেন না তবে বিশ্বকাপ কবে কি হবে তার পাক্কা ধরনা পেয়ে গেছেন। ১৭ তারিখ এখানে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলার কথা জানেন। (তিনি অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিয়া উচ্চারণ করছিলেন)। ফুটবলপ্রেমি আলি ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে তার দেশের প্রীতি ম্যাচে জেতা নিয়ে বেশ উৎফুল্ল। তবে ক্রিকেট যে টন্টনের মানুষ বুঝে তার ধারণা দিলেন কিছু অভিজ্ঞতা বিনিময় করে। 

রাতের বেলা স্থানীয় এক বাঙালীর রেস্তোরায় খেতে গিয়ে চোখে পড়ল, ‘কাউন্টি গেজেট’ নামের এখানকার স্থানীয় পত্রিকা। সেই পত্রিকায় বিশ্বকাপ নিয়ে বিশাল সব কাভারেজ। ব্রিটেনের প্রভাবশালী কাগজ দ্য গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইলে কেবল ইংল্যান্ডের সাফল্যের দিনেই এমন কাভারেজ মেলে। বাদবাকি দিনগুলোতে ক্রিকেট থাকে ভেতরের পাতায়। কিন্তু 'কাউন্টি গেজেট'’ হাতে নিয়েই বোঝা গেল এখানে যে বড় কিছু হচ্ছে তারা সেটা বোঝতে চায় জোরালোভাবে।

কাউন্টি গেজেট বিশাল হেডিং করেছে- ‘শহরে এসেছে বিশ্বকাপ জ্বর’। এই নিউজে ব্যবহার করা এখানকার মার্কেট হাউজের ছবি, যাতে আছে ক্রিকেট স্টাম্প আর বাংলাদেশের লাল-সবুজ!

টন্টনে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের কোন খেলা নেই। তিন ম্যাচের মধ্যে আফগানিস্তান-নিউজিল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান ম্যাচ হয়ে গেছে। বাকি আছে কেবল বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ। এখানকার বিশ্বকাপ বলতে এইটুকু। তবে এই তিন ম্যাচ পেয়েই যে শহরবাসী খুশি, টের পাওয়া গেল বাসস্টপে বিলিয়ে দেওয়া ‘টন নিউজ’ হাতে পেয়ে। ‘অপেক্ষার পালা শেষ’ বলে ফ্রন্ট পেজে বিশাল কাভারেজ। পথ চলতি দু’একজনের সঙ্গে এই নিয়ে সেধে আলাপ জমিয়েও বিমুখ হতে হলো না।

খেলা যারই হোক। নিখাদ বিনোদন নিতে খেলা তারা দেখতে চান। এই শহরে বিশ্বকাপ হচ্ছে বলেও ব্যাপারটাকে ‘রোমাঞ্চকর’ অভিধা দিতেও কার্পণ্য নেই।

সামারসেট কাউন্টিতে ক্রিকেট বেশ জনপ্রিয় তাহলে! এখানকার কাগজগুলোতে বিশ্বকাপ ছাড়াও স্থানীয় ক্রিকেট লিগ নিয়ে বড় বড় ফিচার, নিউজ দেখে তাই মনে হওয়ার কথা। কিন্তু ইংল্যান্ডের কাউন্টিগুলো ক্রিকেটকে যেভাবে যত্ন করে পুষে রাখে তাতে এটা অস্বাভাবিকও না। আর স্থানীয় সাধারণের আগ্রহের বড় কারণ এই মফস্বলে যেকোনো কিছুরই বড় ইভেন্ট হয় কালেভদ্রে। একটা কিছু উৎসবের উপলক্ষ পেলে তাই মাতামাতি করতে দোষ কি।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women defend SAFF title with 2-1 win against Nepal

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

10m ago