ভারত ৬ : পাকিস্তান ০
সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ১৩১টি ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। সেখানে জয়ের সংখ্যায় বেশ এগিয়ে পাকিস্তান। তবে বিশ্বকাপের হিসাবটা একেবারে আলাদা। ক্রিকেটের মহাযজ্ঞে লড়াইটা হয়ে যায় একপেশে। দুদলের ছয়বারের দেখায় প্রতিটিতেই জিতেছে ভারত।
১৯৯২ সালে প্রথমবার বিশ্ব মঞ্চে দেখা হয়েছিলে ভারত-পাকিস্তানের। এরপর থেকে ২০০৭ আসর বাদ দিয়ে প্রতিবারই মুখোমুখি হয়েছে তারা। আর এবার যেহেতু রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে (প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের ম্যাচ হবে) বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তাই এই রোমাঞ্চকর লড়াই উপভোগ করার সুযোগ পাওয়াটা অবধারিত ছিল।
বিশ্বকাপে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর আগের ম্যাচগুলোতে ছড়িয়েছে উত্তাপ, ছড়িয়েছে রঙ। ঘটেছে মনে রাখার মতো নানা ঘটনা। কম ছিল না বিতর্কও। সেসবই স্বর্ণাক্ষরে স্থান করে নিয়েছে ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায়।
১৯৯২ বিশ্বকাপ, সিডনি:
১৯৮৭ আসরে দেখা হয়ে যেতে পারত ভারত-পাকিস্তানের। তবে সেবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল দুদল। তাই অপেক্ষার প্রহর আরও পাঁচ বছর দীর্ঘ হয়। সিডনিতে বোলিংয়ে পাকিস্তান বাড়তি সময় নেওয়ায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে খেলা হয় ৪৯ ওভারে।
শচীন টেন্ডুলকারের অপরাজিত ৫৪ রানে ভর করে আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ২১৬ রান তোলে ভারত। জবাবে স্কোরবোর্ডে ২ উইকেটে ১০৫ রান তুলে ফেললেও পরে খেই হারায় ইমরান খানের পাকিস্তান। ৪৮.১ ওভারে গুটিয়ে যায় ১৭৩ রানে। ৪৩ রানের জয় দিয়ে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত থাকার ধারাটা শুরু করে ভারত।
১৯৯৬ বিশ্বকাপ, বেঙ্গালুরু:
ঘরের মাঠে নভজোত সিং সিধুর ৯৩ ও অজয় জাদেজার ২৫ বলে ৪৫ রানের ইনিংসের কল্যাণে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৮৭ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে ভারত। জাদেজার টি-টোয়েন্টি ঘরানার ইনিংসটাই তাদের প্রায় তিনশো ছোঁয়া স্কোর পাইয়ে দেয়।
জবাবে দুই ওপেনার আমির সোহেল ও সাইদ আনোয়ারের ব্যাটে চড়ে পাকিস্তান পায় উড়ন্ত সূচনা। তবে এই ম্যাচটা ভারতীয় পেসার ভেঙ্কটেশ প্রসাদের সঙ্গে সোহেলের আক্রমণাত্মক শরীরী ভাষা প্রদর্শনের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে। শেষ হাসিটা অবশ্য প্রসাদই হেসেছিলেন। ৫৫ রান করা সোহেলকে বোল্ড করে। এরপর আর রান তাড়ায় সুবিধা করতে পারেনি পাকিস্তান। তার ওপর বোলিংয়ে মন্থর ওভার রেটের কারণে তাদের ব্যাটিং ইনিংসের এক ওভার কেটে নেওয়া হয়েছিল। ৪৯ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৮ রানে থামে পাকিস্তান। ভারত জেতে ৩৯ রানে।
১৯৯৯ বিশ্বকাপ, ম্যানচেস্টার:
ওয়াসিম আকরাম-আজহার মাহমুদ-আব্দুল রাজ্জাকরা মিলে মাঝারি সংগ্রহে বেঁধে ফেলেন ভারতকে। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২২৭ রান তোলে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের দল। ভারতীয় অধিনায়কের পাশাপাশি ফিফটির দেখা পান রাহুল দ্রাবিড়ও।
লক্ষ্য তাড়ায় ৪৫.৩ ওভারে মাত্র ১৮০ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। আগের বিশ্বকাপে বল হাতে ভেলকি দেখানো প্রসাদ এবারে এখাই ছারখার করে দেন পাকিস্তানকে। ২৭ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। ৪৭ রানে ম্যাচ জিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে স্কোরলাইন ৩-০ করে ভারত।
২০০৩ বিশ্বকাপ, সেঞ্চুরিয়ন:
বিশ্বকাপ তথা ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ম্যাচ ছিল এটি। সাইদ আনোয়ারের সেঞ্চুরি ছাপিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন ৭৫ বলে ৯৮ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলা শচীন টেন্ডুলকার। ভারতীয় ক্রিকেট কিংবদন্তির কাছে পাত্তাই পায়নি ওয়াসিম আকরাম-ওয়াকার ইউনুস-শোয়েব আখতার-শহিদ আফ্রিদিদের নিয়ে গড়া বোলিং লাইনআপ।
শুরুতে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৭৩ রান করে পাকিস্তান। বাকিরা অল্প-স্বল্প অবদান রাখলেও আনোয়ার একাই খেলেছিলেন ১২৬ বলে ১০১ রানের ইনিংস। জবাবে ২৬ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় ভারত। ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন যুবরাজ সিংও।
২০১১ বিশ্বকাপ, চণ্ডীগড়:
দ্বিতীয় সেমিতে ক্যাচ মিসের মহড়া দেওয়ার খেসারত দিয়ে ম্যাচটা হেরেছিল পাকিস্তান। আগে ব্যাট করে ভারত তুলেছিল ৯ উইকেটে ২৬০ রান। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে বিশ্বকাপ জয়ের আগের ধাপে শচীন খেলেছিলেন ৮৫ রানের ইনিংস। তার অন্তত পাঁচটি ক্যাচ হাতে জমাতে ব্যর্থ হয়েছিল পাকিস্তান। শোয়েব আখতারের পরিবর্তে একাদশে ঢুকে ওয়াহাব রিয়াজ ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ৪৬ রানে।
পাকিস্তানের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কে পৌঁছেছিলেন। কিন্তু হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন কেবল মিসবাহ উল হক। বিপরীতে ভারতের ব্যবহৃত পাঁচ বোলারের সবাই পেয়েছিলেন ২টি করে উইকেট। ফলে ৪৯.৫ ওভারে ২৩১ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান।
২০১৫ বিশ্বকাপ, অ্যাডিলেড:
পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের ব্যবধানকে ভারত ৬-০ ব্যবধানে উন্নীত করে গেল আসরে। বিরাট কোহলির ১০৭, সুরেশ রায়নার ৭৪ ও শিখর ধাওয়ানের ৭৩ রানের কল্যাণে ৭ উইকেটে ৩০০ রান তোলে ভারত। বড় লক্ষ্য তাড়ায় ১৮ বল বাকি থাকতে পাকিস্তানের ইনিংস শেষ হয় ২২৪ রানে। ভারত জয়ী হয় ৭৬ রানে।
২ উইকেটে ১০২ রান তুলে ফেলা পাকিস্তানকে তীব্র ঝাঁকুনি দেন উমেশ যাদব ও রবীন্দ্র জাদেজা। তাতে ১ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারায় দলটি। এরপর শেষদিকে হাত খুলে মারতে থাকা অধিনায়ক মিসবাহর ৮৪ বলে ৭৬ রানের ইনিংসটি কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। ভারতের হয়ে মোহাম্মদ শামি ৪ উইকেট নেন ৩৫ রানে।
Comments