সমগ্র ভারতে চিকিৎসক ধর্মঘট, বিপদে বাংলাদেশি রোগীরাও

West Bengal
১৭ জুন ২০১৯, সমগ্র ভারত জুড়ে অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কর্মবিরতি চলছে। ছবি: স্টার

কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত জুনিয়র চিকিৎসক লাঞ্ছিতের ঘটনার প্রতিবাদে আজ (১৭ জুন) দেশ জুড়ে অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কর্মবিরতি চলছে।

সব হাসপাতালের জরুরি বিভাগ এবং ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট খোলা থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

বিহার রাজ্য বাদে বাকি সব রাজ্যে প্রায় সাড়ে তিন লাখ চিকিৎসক এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।

কিছু কিছু রাজ্যে চিকিৎসকরা আংশিক কর্মবিরতি পালন করছেন কিংবা করবেন বলেও জানা গেছে।

এই অচলাবস্থায় সবচেয়ে বড় ভোগান্তিতে পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাধারণ মানুষ। রাজ্যের সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য সরকারি ১৪টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও ১৫০টির বেশি সরকারি হাসপাতালেও কার্যত বহির্ভিবাগের চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে ১১ জুন থেকে।

সবচেয়ে জটিল পরিস্থিতি রাজ্যটির রাজধানী কলকাতায়। শহরের অন্যতম বড় সরকারি হাসপাতাল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসক পরিবহ চট্টোপাধ্যায় ১০ জুন রাতে রোগীর স্বজনদের হাতে বেধড়ক পিটুনির শিকার হন।

তার মাথায় বড় ধরনের অস্ত্রোপচার করার পর তিনি এখন শঙ্কামুক্ত।

এরপরই ওই হাসপাতালের প্রায় ৩৫০ জন জুনিয়র চিকিৎসক নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন এবং সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে কলকাতাসহ গোটা রাজ্যে। এই মুহূর্তে যা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ভারত জুড়ে।

স্থানীয় এই সমস্যার মুখে পড়ে ভয়াবহ অসুবিধার পড়েছেন বাংলাদেশ থেকে আসা রোগী এবং তাদের স্বজনরা। যদিও গত ছয় দিন বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশি রোগীদের  কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। কিন্তু, আজ যেহেতু সর্বভারতীয় কর্মবিরতি চলছে, সেহেতু বেসরকারি হাসপাতালগুলোর আউটডোর পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

ঢাকার শাঁখারিবাজার থেকে এসেছেন বিমল কর্মকার। তার বাবার কিডনি সমস্যার জন্য নিয়মিত মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। আজ তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিলো। কিন্তু, চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জন্য তাকে আজ দেখানো সম্ভব হয়নি।

বিমল বলেন, “বিদেশি রোগীদের সেবা এই আন্দোলনের বাইরে রাখলে ভালো হতো। আমরা যারা চিকিৎসা করাতে আসি, আমাদের একদিন অতিরিক্ত থাকা মানেই অনেক খরচ বেড়ে যাওয়া। তাছাড়া রোগীদেরও অসুবিধা হয়।”

মাগুড়া থেকে এসেছেন সুমন মোল্লা। পেশায় গণমাধ্যমকর্মী। তার দাদার কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। তারও চেকআপ ছিল আজ। কিন্তু, এই আন্দোলনের ফাঁদে পড়ে সেটা হয়নি।

মুকুন্দপুরের নামী ওই হাসপাতালের বাংলাদেশ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমরা গত ছয় দিন ধরে বহির্বিভাগের চিকিৎসা দিয়ে এসেছি। কিন্তু, এটা তো একটি দেশের সার্বিক কর্মসূচি। এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কিছু করার থাকে না। এটা সর্বত্রই একইভাবে পালিত হচ্ছে। আমরা তো দেশের বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানের নই। আমাদের চিকিৎসকরা ভারতেরই।”

তিনি আরও বলেন, “তাদের নিরাপত্তার দাবিতে এই আন্দোলনের আমাদের চিকিৎসকরাও শরিক হয়েছেন। তবে এটাও ঠিক যে, বাংলাদেশি রোগীদের কষ্ট হচ্ছে। একদিন সময়ও নষ্ট হচ্ছে। যদিও জরুরি পরিষেবা স্বাভাবিক আছে। জরুরি রোগী হলেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”

ওই হাসপাতালটির দেওয়া তথ্য বলছে, প্রতিদিন প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন। এদের ৮০ শতাংশই বাংলাদেশি রোগী।

শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, সমগ্র ভারতে যেসব বাংলাদেশিরা চিকিৎসা নিতে গেছেন, তারা সবাই সমস্যায় পড়েছেন।

সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, আজ বিকালে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির একটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিকেল তিনটায় রাজ্য সচিবালয় নবান্নে এই বৈঠক হবে বলে কলকাতার গণমাধ্যম সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে।

যদিও আন্দোলনরত চিকিৎসকদের পক্ষে থেকে আজ সকালে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, তারাও গণমাধ্যমে বৈঠকের খবর পেয়েছেন কিন্তু তাদের সরকারিভাবে ডাকা হয়নি। 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women defend SAFF title with 2-1 win against Nepal

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

10m ago