আজ মাশরাফিরাই ফেভারিট
বিশ্বকাপে আগেও চারবার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১১ আসরে। সবগুলো ম্যাচেই নিরঙ্কুশ ফেভারিট ছিল ক্যারিবিয়ানরা। ফেভারিটের মতো খেলেই একপেশে তিনটি ম্যাচে জয় তুলে নেয় তারা। আর ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের ম্যাচটি পণ্ড হয়ে বৃষ্টির বাধায়। তবে সমীকরণটা এবার উল্টো। ইংল্যান্ডে চলমান বিশ্বকাপে পরস্পরকে মোকাবেলা করার আগে বাংলাদেশকেই বলা হচ্ছে ফেভারিট। উইন্ডিজ এবারে আন্ডারডগ।
দ্বৈরথের হিসাব-নিকাশটা পাল্টে দিয়েছে ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া দুদলের ম্যাচগুলোর ফল। গেল এক বছরে মোট নয়টি ম্যাচে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ ও উইন্ডিজ। তার সাতটিতে বিজয়ী দলের নাম বাংলাদেশ। ক্যারিবিয়ানদের ঝুলিতে জয় মাত্র দুটি। এর মধ্যে সবশেষ টানা চার ম্যাচে জেসন হোল্ডারদের বিপক্ষে অপরাজিত মাশরাফি বিন মর্তুজারা। তাই বিশ্ব মঞ্চে জয়ের সম্ভাবনার দাঁড়িপাল্লাটা হেলে রয়েছে বাংলাদেশের দিকেই।
ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের টানা সাফল্যের গোড়াপত্তন হয়েছিল গেল বছরের জুলাইতে। তাদের মাটি থেকে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতে দেশে ফিরেছিল টাইগাররা। প্রথম ওয়ানডেতে জয় এসেছিল ৪৮ রানে। দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়ের খুব কাছে পৌঁছানো গিয়েছিল। তবে শেষ ওভারের নাটকীয়তায় ৩ রানে ম্যাচটা জিতে নেয় উইন্ডিজ। শেষ ওয়ানডেতে ফের বাংলাদেশের জয়। এবারে ১৮ রানে।
ওই সিরিজে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ছিলেন তামিম ইকবাল। ৩ ইনিংসে ২ সেঞ্চুরি ও ১ হাফসেঞ্চুরিসহ করেছিলেন ২৮৭ রান। সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। মাত্র ৪.৯৬ ইকোনমি ও ২০.৫৭ গড়ে ৭ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি।
ফিরতি সিরিজ খেলতে একই বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে পা রাখে উইন্ডিজ। চোট পাওয়া হোল্ডারের পরিবর্তে ওই সিরিজে অতিথিদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রভম্যান পাওয়েল। তবে অধিনায়ক পাল্টে গেলেও সিরিজের ফলের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ঘরের মাঠে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ।
মাঝের ম্যাচটা স্বাগতিকদের কাছ থেকে একরকম কেড়েই নিয়েছিলেন শেই হোপ। হাঁকিয়েছিলেন সেঞ্চুরি। পরের ম্যাচেও একই কীর্তি ছিল তার। সবমিলিয়ে ৩ ইনিংসে ২৯৭ রান করেছিলেন বাংলাদেশকে প্রিয় প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলা এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। অনুকূল উইকেট পেয়ে অফ স্পিনে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩ ম্যাচে মাত্র ১৬.৩৩ গড়ে দখল করেছিলেন ৬ উইকেট। কম যাননি মাশরাফিও। ১৯.৩৩ তারও শিকার ছিল ৬টি।
সবশেষ উদাহরণ বিশ্বকাপের আগে চলতি বছরের মে মাসে আইরিশদের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ। ফাইনালে হোল্ডার বাহিনীকে হারিয়েই প্রথমবারের মতো দুইয়ের বেশি দল নিয়ে আয়োজিত কোনো সিরিজের শিরোপা জেতার স্বপ্ন পূরণ হয় বাংলাদেশের। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ব্যস্ত থাকায় ওই সিরিজে ছিলেন না ক্রিস গেইল-শিমরন হেটমায়ার-আন্দ্রে রাসেলরা। তাতে দলটির শক্তি বেশ কিছুটা কমেছিল বটে। তাই বলে বাংলাদেশের জয়কে ছোট করে দেখার উপায় নেই।
প্রথমত, কন্ডিশনটা ছিল বাংলাদেশের জন্য বিরুদ্ধ। সেই সঙ্গে তীব্র ঠাণ্ডা। সেসবের সঙ্গে দ্রুতই মানিয়ে নিতে হয়েছিল ক্রিকেটারদেরকে। দ্বিতীয়ত, পুরো সিরিজে একটানা দাপট দেখায় বাংলাদেশ। মাশরাফিরা খেলেছেন বড় দলের মতোই। তৃতীয়ত, গেইল-রাসেল-হেটমায়ারদের নিয়ে গড়া উইন্ডিজকে গেল বছর তাদের মাঠেই সিরিজ হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
তাই গেইল-রাসেলরা বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ফিরলেও সবদিক মিলিয়ে সোমবার (১৭ জুন) টন্টনের ম্যাচে উইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশই ফেভারিট। দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালও যেমন গেল পরশু জানান, ‘সাম্প্রতিক অতীতে আমরাই ওদের সঙ্গে বেশি জিতেছি। আয়ারল্যান্ডেও তিনটি ম্যাচেই জিতেছি। ফেভারিট আমরা হতেই পারি।’
এবারে ফেভারিটের মতো খেলে জয় আদায় করে নেওয়ার পালা। এই ম্যাচে হারলেই বাংলাদেশের সেমিফাইনাল স্বপ্ন কার্যত শেষ। তাই জয়ের বিকল্প নেই মাশরাফিদের সামনে। আর জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় ফেভারিট তকমা বা কাগজ-কলমের লড়াই দিয়ে নয়, মাঠের খেলায়। বাংলাদেশ দলের মূল মনোযোগটাও সেদিকেই। সেদিন তামিমের বলা কথার সুরেই ফের বলতে হয়, ‘ফেভারিট কে বা কে নয়, সেটা কোনো ব্যাপার নয়। ক্রিকেট খেলাটাই এমন যে, নির্দিষ্ট দিনে যে দল সেরাটা খেলবে, তারাই জিতবে।’
Comments