স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাসভবনে হামলা, ইভিএম যন্ত্রপাতি লুট

বিজয়নগরের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছিমা লুৎফুর রহমানের দাবি, তার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট তানভীর ভূঁইয়ার লোকজন এই হামলা-ভাংচুর চালিয়েছে। ছবি: স্টার

একজন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাসভবনে হামলা-ভাংচুর-লুটপাট-অগ্নিসংযোগ, ইভিএম যন্ত্রপাতি লুট ও বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে সংঘর্ষ এবং অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে পঞ্চম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।

প্রার্থীর বাসভবনে হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের সাবেক নেতাসহ পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। এতে অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন।

ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী নাছিমা লুৎফুর রহমানের দাবি, তার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট তানভীর ভূঁইয়ার লোকজন এই হামলা-ভাংচুর চালিয়েছে। হামলাকারীরা স্বর্ণালংকার ও মোটরসাইকেল লুটপাট করেছে বলেও তার অভিযোগ।

মঙ্গলবার দুপর ২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের হালদার পাড়া এলাকার এল. রহমান টাওয়ারে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

নাছিমা বলেন, প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন হামলাকারী তার ১৪ তলা বাড়ির প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে নিচতলায় থাকা একটি ল্যান্ড ক্রুজার জিপ, পাজেরো জিপ, টয়োটা প্রাইভেটকার ও একটি মোটর সাইকেল ভাংচুর করে। এসময় তারা বাড়ির ভাড়াটিয়া এক পুলিশ সদস্যের মোটরসাইকেল রাস্তায় নিয়ে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। হামলাকারীরা নিচের দুই তলার দরজা-জানালা ভাংচুর করে ও দোতলার ফ্ল্যাটে ঢুকে আসবাবপত্র ভাংচুর ও তছনছ করে প্রায় ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করেছে।

হামলার ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পাশের সড়কে চলাচলরত সাধারণ মানুষ দিগ্বিদিক ছুটোছুটি শুরু করে। খবর পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার একদল পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

হামলায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ জেলা সৈনিক লীগের আহবায়ক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কাজীপাড়ার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম জুম্মান, মেহেদী হাসান, মারুফ মিয়া, আরমান মিয়া ও ইয়াছিন আরাফাতকে আটক করেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, হামলার পর প্রার্থীর বাসভবনের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট তানভীর ভূঁইয়া বলেন, আমি, আমার পরিবারের সদস্যসহ কর্মী-সমর্থকরা এখনো বিজয়নগর উপজেলাতেই আছি। এই ঘটনা সম্পর্কে আমার কোনো কিছু জানা নেই।

এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের বড়-পুকুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জেলা শহর থেকে আসা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী ইভিএম যন্ত্রপাতি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে একজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তারা রিপন মোদক নামের একজন পুলিশ কনস্টেবলকে লাঞ্ছিত করলে গ্রামবাসী তাদেরকে পিটুনি দেয়। গ্রামবাসীর পিটুনিতে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি হাসান সারোয়ার ও সাবেক সভাপতি মাসুম বিল্লাহসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। আহতদের কয়েকজন জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে হাসান সারোয়ারকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

দুপুর ১২টার দিকে চান্দুরা ইউনিয়নের সাতগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এজেন্টরা ইভিএম যন্ত্রপাতি ও কম্পিউটারের মনিটর ছিনিয়ে নেয়। এতে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নূর মাহমুদ।

তিনি জানান, আকস্মিক একদল যুবক একটি বুথে আক্রমণ করে ইভিএমের সঙ্গে সংযুক্ত একটি মনিটর ভাংচুর ও চারটি মনিটর ছিনিয়ে নেয়। পরে বিকল্প ব্যবস্থাপনায় পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

বেলা দেড়টার দিকে বুধন্তী ইউনিয়নের আহলাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে ফায়েজ মিয়া নামের এক যুবককে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত আহত করেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা। আহত ওই যুবক বুধন্তী গ্রামের আব্দুল মন্নাফের ছেলে। এর আগে পার্শ্ববর্তী শশই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ওই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আজিজুর রহমান চমককে মারধর করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা।

প্রসঙ্গত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় এই প্রথম ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিজয়নগর উপজেলার মোট ৬৩টি কেন্দ্রে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে পাঁচ জন, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে তিন জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান (নারী) পদে দুই জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৭১ হাজার ৩৬৩ জন।

এছাড়াও একই দিনে জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সেখানে কোনো পদেই নির্বাচন হচ্ছে না। এ উপজেলায় নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English
government decision to abolish DSA

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

11h ago