ছক্কার বিশ্বরেকর্ডের ম্যাচে আফগানদের উড়িয়ে দল ইংল্যান্ড
৩৩টি ছক্কা মারল দুই দল। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড এটা। এছাড়া এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৫ ছক্কার রেকর্ডও গড়েছে ইংল্যান্ড। হয়েছে ব্যক্তিগত রেকর্ডও। এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ১৭টি ছক্কার বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগান। ইংল্যান্ড-আফগানিস্তান ম্যাচে ছক্কা বৃষ্টিই হলো। আর রেকর্ডময় এ ম্যাচে ১৫০ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতেছে ইংল্যান্ড। আসরের চতুর্থ জয়ে শীর্ষে উঠে এলো দলটি। অন্যদিকে, এ হারে বিশ্বকাপ থেকে এক প্রকার বিদায় হয়ে গেল আফগানিস্তান।
লক্ষ্যটা পাহাড়সম। ৩৯৮ রানের। এতো রান তাড়া করে বিশ্বকাপে জিততে পারেনি কোন দলই। বিশ্বকাপের ফেবারিট ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপেক্ষাকৃত দুর্বল আফগানিস্তানের জন্য কাজটা ছিল আরও কঠিন। সে লক্ষ্য তাড়ায় ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। বিশাল ব্যবধানে হেরেছে তারা। তবে এক পর্যায়ে ইংলিশ বোলারদের দাপট সামলে ভালোই জবাব দিচ্ছিল। ৩ উইকেটে ১৯৮ রান তুলে ফেলেছিল। কিন্তু রানের গতি সচল রাখতে না পারায় শেষ দিকে হুড়মুড় করেই ভেঙে পড়ে দলটি।
শুরুতেই নূর আলি জাদরানকে হারানোর পর অধিনায়ক গুলবাদিন নাইবের সঙ্গে ৪৮ রানের জুটি গড়েন রহমত শাহ। এরপর অধিনায়কের বিদায়ের পর হাসমতউল্লাহ শাহিদির সঙ্গে ৫২ রানের জুটি। তবে আফগানদের আশা বাড়িয়েছিলে তৃতীয় উইকেটে হাসমত ও সাবেক অধিনায়ক আসগর আফগানের ৯৪ রানের জুটি। কিন্তু এ জুটি ভাঙলে আর কেউ দায়িত্ব নিতে না পারলে বড় হারই মানতে হয় দলটিকে। ৮ উইকেটে ২৪৭ রান করতে পারে তারা।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৬ রানের ইনিংস খেলেছেন হাসমত। ১০০ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় এ রান করেছেন তিনি। এছাড়া রহমত ৪৬, আসগর ৪৪ ও গুলবাদিন ৩৭ রান করেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে ৬৬ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নিয়েছেন আদিল রশিদ। এছাড়া ২টি করে উইকেট পান জোফরা আর্চার ও মার্ক উড।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন ইংলিশ অধিনায়ক মরগান। তবে শুরুটা সে অর্থে উড়ন্ত হয়নি। প্রথম পাওয়ার প্লেতে জেমস ভিন্সের উইকেট হারিয়ে মাত্র ৪৬ রান। এর পরেও আগ্রাসী খেলেছেন তাও নয়। ২৩ ওভার শেষে তাদের রান ছিল ১১৮/১। কিন্তু এরপরই আগ্রাসন শুরু করেন জনি বেয়ারস্টো। জো রুটের সঙ্গে গড়েন ১২০ রানের জুটি।
আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন নাইবের বলে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন বেয়ারস্টো। এরপর মাঠে নামে মরগান। হাল ধরেন জো রুটের সঙ্গে। ১৯৫ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটসম্যান। সবচেয়ে বড় কথা এ জুটি গড়তে বল খেলেছেন মাত্র ১০১টি। আফগান বোলারদের উপর তোপটা দাগিয়েছেন মরগানই। মাত্র ৫৭ বলে স্পর্শ করেছেন সেঞ্চুরি। শেষপর্যন্ত ৭১ বলে খেলেছেন ১৪৮ রানের ক্যামিও। ৪টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ১৭টি ছক্কা। যা ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। ভেঙেছেন ক্রিস গেইল, রোহিত শর্মা ও এবি ডি ভিলিয়ার্সের করা ১৬ ছক্কার রেকর্ড।
এদিন মোট ২৫টি ছক্কা মেরেছেন ইংলিশরা। যা এক ইনিংসে সর্বাধিক ছক্কা মারার রেকর্ড। চলতি বছরই উইন্ডিজের বিপক্ষে ২৪টা ছক্কা মেরেছিলেন তারা। এছাড়া বিশ্বকাপে ৩৯৭ রান নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরও বটে। কদিন আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে করা ৬ উইকেটে ৩৮৬ রান ছিল সর্বোচ্চ। ইনিংসে সব মিলিয়ে এলো ২৫টি ছক্কা। যাও এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড।
৯৯ বলে ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৯০ রানের ইনিংস খেলেছেন বেয়ারস্টো। জো রুট ৮২ বলে ৮৮ রান করেন। রানের গতি বাড়াতে গিয়ে আউট হন তিনি। অন্যথায় এবারের আসরে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরিটা প্রায় তুলে ফেলেছিলেন। শেষ দিকে মাত্র ৯ বলে ১টি চার ও ৪টি ছক্কায় অপরাজিত ৩১ রান করেন মইন আলি। আফগানিস্তানের পক্ষে ৩টি করে উইকেট পেয়েছেন গুলবাদিন ও দৌলত জাদরান।
এদিন বিব্রতকর এক রেকর্ড গড়েছেন রশিদ খান। ৯ ওভারে ১১০ রান খরচ করেছেন তিনি। তাতে বিশ্বকাপে সবচেয়ে খরুচে বোলার হিসেবে নাম লিখিয়েছেন এ লেগি। ১০ ওভারে সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার রেকর্ডটি অসি পেসার মিক লুইসের। ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০ ওভারে ১১৩ রান দিয়েছিলেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৯৭/৬ (ভিন্স ২৬, বেয়ারস্টো ৯০, রুট ৮৮, মরগান ১৪৮, বাটলার ২, স্টোকস ২, মইন ৩১*, ওকস ১*; মুজিব ০/৪৪, দৌলত ৩/৮৫, নবি ০/৭০, গুলবাদিন ৩/৬৮, রহমত ০/১৯, রশিদ ০/১১০)।
আফগানিস্তান: ৫০ ওভারে ২৪৭/৮ (নুর আলি ০, গুলবাদিন ৩৭, রহমত ৪৬, হাসমত ৭৬, আসগর ৪৪, নবি ৯, নজিবুল্লাহ ১৫, রশিদ ৮, ইকরাম ৩*, দৌলত ০*; ওকস ০/৪১, আর্চার ৩/৫২, মইন ০/৩৫, উড ২/৪০, স্টোকস ০/১২, আদিল ৩/৬৬)।
ফলাফল: ইংল্যান্ড ১৫০ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ইয়ন মরগান (ইংল্যান্ড)।
Comments