উইলিয়ামসনের সেঞ্চুরিতে প্রোটিয়াদের হারাল নিউজিল্যান্ড
ফিল্ডিংয়ে বরাবরই বাড়তি প্রশংসা পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। হাফ চান্সকে ফুল চান্সে পরিণত করতে জুরি নেই তাদের। এদিনও হাফ চান্স পেলেন একের পর এক। কিন্তু তার একটাও লুফে নিতে পারলেন না। মিস করেছেন রানআউটের সহজ সুযোগ। এমনকি কট বিহাইন্ড করে বুঝতে না পেরে আবেদন না করায় আউটও পাননি। এর আগে ব্যাটিংও ছিল ছন্নছাড়া। আর তার খেসারৎ দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। নিউজিল্যান্ডের কাছে ৫ উইকেটে হেরেছে তারা। তাতে বিশ্বকাপ থেকে গ্রুপ পর্বে বিদায় এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে গেছে দলটির।
তবে নিউজিল্যান্ডের জয়ের মূল কৃতিত্বই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের। বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন শেষ পর্যন্ত। করেছেন আসরে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি। মূলত তার কাছেই হার মানে প্রোটিয়ারা। তবে কম যাননি কলিন ডি গ্রান্ডহোম। ঝড়ো এক ফিফটিতে রানের গতি বাড়িয়ে দিয়ে গেছেন তিনি। উইলিয়ামসন তার রেশ ধরে দিয়েছেন নিখুঁত ফিনিশিং।
আগে ব্যাট করে খুব বেশি রান সংগ্রহ করতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।২৪১ রানের সাদামাটা সংগ্রহে দরকার ছিল দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং। তা অবশ্য করতে পেরেছিল দলটি। কিন্তু ফিল্ডিংই পিছিয়ে দেয় তাদের। লো স্কোরিং ম্যাচে কিউইদের বেশ চেপে ধরেছিল প্রোটিয়ারা। কিন্তু উইলিয়ামসনের অধিনায়কোচিত ইনিংসে সব বাধাই উতরে যায় নিউজিল্যান্ড। অবশ্য ভাগ্যও সঙ্গে ছিল। পাওয়া সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি নিউজিল্যান্ডের। দলীয় ১২ রানেই কলিন মুনরোকে হারিয়ে চাপে দলটি। তবে দ্বিতীয় উইকেটে আরেক ওপেনার মার্টিন গাপটিলকে নিয়ে সে চাপ সামলে নেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন। গড়েন ৬০ রানের জুটি। এরপর হিট উইকেট হয়ে মাঠ ছাড়েন গাপটিল। এরপর দ্রুত আরও দুটি উইকেট তুলে নিলে দারুণভাবেই ম্যাচে ফিরে দক্ষিণ আফ্রিকা। দলীয় ১৩৭ রানে কিউইদের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে ফেরালে জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে দলটি।
কিন্তু ষষ্ঠ উইকেটে কলিন ডি গ্রান্ডহোমকে নিয়ে সে স্বপ্ন ফিকে করে দেন উইলিয়ামসন। এ দুই ব্যাটসম্যান স্কোরবোর্ডে ৯১ রান যোগ করেন। সবচেয়ে বড় কথা উইকেটে নেমেই বেশ মারমুখী মেজাজে ব্যাট করতে থাকেন গ্রান্ডহোম। তাকে ফিরিয়ে ম্যাচে বেশ রোমাঞ্চ ছড়িয়েছিলেন পেসার লুঙ্গি এনডিগি। কিন্তু উইলিয়ামসনের প্রতিরোধে তা যথেষ্ট হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য।
১০৬ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলেছেন উইলিয়ামসন। ১৩৮ বলের এ ইনিংস ৯টি চারের সঙ্গে রয়েছে ১টি ছক্কা। ৪৭ বলে ৬০ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেন গ্রান্ডহোম। এছাড়া গাপটিল ৩৫ ও জেমস নিশাম ২৩ রান করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে দারুণ বোলিং করেছেন ক্রিস মরিস। ৪৯ রানের খরচায় নিয়েছেন ৩টি উইকেট।
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে এদিন নির্ধারিত সময়ে মাঠ খেলার উপযোগী করতে পারেনি মাঠকর্মীরা। তাই শুরুতে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর অনুষ্ঠিত হয় টস। তাতে ম্যাচের দৈর্ঘ্যও কমে আসে। ৪৯ ওভারে নির্ধারণ করা হয় খেলা। আর টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। দলীয় ৯ রানেই ইনফর্ম ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কককে হারিয়ে চাপে পরে দলটি।
দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসিকে নিয়ে দলের হাল ধরেন হাশিম আমলা। গড়েন ৫০ রানের জুটি। কিন্তু রানের গতি সে অর্থে বাড়াতে পারেননি। এরপর দু প্লেসি বিদায় নিলে এইডেন মার্করামকে নিয়ে ৫২ রানের আরও একটি ভালো জুটি গড়েন আমলা। কিন্তু এ জুটিও রানের গতি বাড়াতে পারেনি।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে অবশ্য কিছুটা খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করে দলটি। ৭৪ বলে ৭৪ রানের জুটি গড়েন ভ্যান ডার ডুসান ও ডেভিড মিলার। তবে এ জুটি ভাঙার পর খুব বেশি আগাতে পারেনি দলটি। ফলে নির্ধারিত ৪৯ ওভারে ৬ উইকেটে ২৪১ রান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় দলটিকে।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন ডুসেন। ৬৪ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। ৮৩ বলে ৪টি চারের সাহায্যে ৫৫ রান করেন আমলা। এছাড়া মার্করাম ৩৮ ও মিলার ৩৬ রান করেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ৫৯ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নেন লোকি ফার্গুসন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৯ ওভারে ২৪১/৬ (ডি কক ৫, আমলা ৫৫, দু প্লেসি ২৩, মার্করাম ৩৮, ডুসেন ৬৭*, মিলার ৩৬, ফেলুকুয়ায়ো ০, মরিস ৬*; হেনরি ০/৩৪, বোল্ট ১/৬৩, ফার্গুসন ৩/৫৯, গ্রান্ডহোম ১/৩৩, স্যান্টনার ১/৪৫)।
নিউজিল্যান্ড: ৪৮.৩ ওভারে ২৪৫/৬ (গাপটিল ৩৫, মুনরো ৯, উইলিয়ামসন ১০৬*, টেইলর ১, লাথাম ১, নিশাম ২৩, গ্রান্ডহোম ৬০, স্যান্টনার ২*; রাবাদা ১/৪২, এনগিডি ১/৪৭, মরিস ৩/৪৯, ফেলুকাওয়ো ১/৭৩, তাহির ০/৩৩)।
ফলাফল: নিউজিল্যান্ড ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কেন উইলিয়ামসন (নিউজিল্যান্ড)
Comments