নুসরাত হত্যা মামলা: সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু ২৭ জুন

​ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদ্রসাছাত্রী নুসরাত জাহান হত্যার ঘটনায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আগামী ২৭ জুন মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ মামলার অভিযোগপত্রের ওপর শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
নুসরাত জাহান রাফি

ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদ্রসাছাত্রী নুসরাত জাহান হত্যার ঘটনায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আগামী ২৭ জুন মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ মামলার অভিযোগপত্রের ওপর শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

আদালত সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় আদালতে নুসরাত হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। তার আগে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদেরকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে বাদী পক্ষের ও আসামি পক্ষের আইনজীবী ছাড়া মামলার বাদী নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান এবং অভিযুক্ত ১৬ আসামি উপস্থিত ছিলেন। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সংবাদ কর্মীদেরও এসময় আদালতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

আদালতে শুনানির শুরুতে আসামি পক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিনসহ অন্যরা অভিযোগ করেন, আসামিরা সবাই মামলা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পায়নি এবং সবাই আইনজীবীও নিয়োগ করতে পারেনি। রাষ্ট্র পক্ষ থেকেও তাদেরকে কোন আইনজীবী দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য সময় চেয়ে অভিযোগ গঠনের শুনানি না করার জন্য আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন চলে। এসময় আসামিরা কাঠগড়া থেকে আদালতের উদ্দেশে আত্মপক্ষ সমর্থন করে কিছু কথা শোনার অনুরোধ জানান। আদালত তাদেরকে কথা বলার সুযোগ দেন। আসামিরাও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিসহ তাদের আপত্তির কথা আদালতকে অবহিত করেন। আদালত তাৎক্ষণিকভাবে আসামিদের সবাইকে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবীরা ১১ জন আসামির পক্ষে জামিনের আবেদন জানিয়ে তাদেরকে মামলার অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন।

জামিনের আবেদন করা আসামিরা হলেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রুহুল আমিন,মাদ্রাসার প্রভাষক আফছার উদ্দিন, ছাত্র মো. শামীম, সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, আবদুর রহিম শরীফ, মহি উদ্দিন শাকিল, ইমরান হোসেন মামুন, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন্নাহার মনি,শাহাদাত হোসেন শামীম।

রাষ্ট্রপক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন সরকারি কৌসুলি হাফেজ আহম্মদ, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আক্ররামুজ্জামান, এম শাহ জাহানসহ অন্যরা। তারা আসামি পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্যের বিরোধিতা করে মামলার এজাহার, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও আসামিদের জবানবন্দির কথা উল্লেখ করে মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের দাবি জানান।

আদালত আসামিদের জামিনের আবেদন না মঞ্জুর করেন এবং মামলার অভিযোগ থেকে ১১ আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া আবেদন খারিজ করেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান জানান, আগামী ২৭ জুন মামলার বাদী ও নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান, নুসরাতের দুই সহপাঠী নিশাত সুলতানা ও নাসরিন সুলতানার সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হবে।

এদিকে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইনের আদালতে নুসরাতের শ্লীলতাহানির মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে হাজির করা হয়। মামলার অভিযোগপত্র দাখিল না হওয়ায় আগামী ৪ জুলাই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়।

এর আগে গত ২৮ মে ফেনীর  আমলী আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইনের আদালতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এর পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮৬৯ পৃষ্ঠা সম্বলিত নথি ও অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর গত ৩০ মে মামলার ধার্য তারিখে আসামিদেরকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত শুনানি না করে ওই মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে পাঠানোর আদেশ দেন। গত ১০ জুন মামলাটি আমলে নিয়ে শুনানির শুরু করা হয়।

প্রসঙ্গত, সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে গত ৬ এপ্রিল গায়ে তেল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। পরে ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে মারা যায়। এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে আটজনকে আসামি করে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়। পুলিশ ও পিবিআই এ মামলায় ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে ১২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

গত ২৭ মার্চ নিজ কক্ষে ডেকে নুসরাতকে শ্লীলতাহানির করে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। এ ঘটনায় নুসরাতের মা বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।

Comments

The Daily Star  | English

Power supply may not improve anytime soon

The power supply situation has further deteriorated across the country as another power plant has completely shut and there is no sign of increasing generation in the immediate future.

5h ago