কেবল বাংলাদেশেরই হার নয়

Tamim Iqbal-Mushfiqur Rahim
ছবি: রয়টার্স

ইনিংস বিরতিতে ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন ডাইনিংয়ে আড্ডা জমালেন সাবেক অসি পেসার ডেমিয়েন ফ্লেমিংয়ের সঙ্গে। অস্ট্রেলিয়া ৩৮১ রান করে ফেলার পরই ম্যাচের ফল নিয়ে কারওর উত্তেজনা নেই। ভনের কথা, বাংলাদেশ জিততে পারলে টুর্নামেন্টরই তো বরং লাভ হতো। মানুষের মধ্যে চড়া থাকত উত্তেজনার পারদ। সেমিফাইনালে কারা যাচ্ছে তা নিয়ে থাকত আগ্রহ। এখন তো সব অনেকটাই পরিস্কার ।

ফ্লেমিংও দ্বিমত করলেন না। ট্রেন্ট ব্রিজের প্রেসবক্সে ভারতীয় সাংবাদিকদেরও একই কথা। বিশ্বকাপটা কেমন একপেশে হয়ে পড়ছে। যদিও এখনো কারওরই সেমি নিশ্চিত হয়নি। বাকি সময়ে অনেক নাটকীয় কিছুও হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পর গতিপথ ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনা যে আসলেই খুব ক্ষীণ। যাদের সেমিতে যাওয়ার কথা তারাই এগিয়ে যাচ্ছে। আপাতত কোনো চমকের আভাস নেই।

সেদিন সেরা চারে একটা উলট-পালট চাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন কার্টলি অ্যাম্ব্রোসও। ওই চার দলের পাড় সমর্থক ছাড়া রোমাঞ্চ চাইছেন বোধহয় ক্রিকেট-ভক্ত সবাই। কিন্তু ভক্তদের চাওয়া মতোই তো ক্রিকেট চলে না। এখানে শেষ বিচারে শক্তির তারতম্যই চড়া হয়ে যায়। স্কিল, ভারসাম্য, ফর্ম সব বিচারেই অস্ট্রেলিয়া ঢের এগিয়ে ছিল বাংলাদেশের চেয়ে। সে কথা জানতেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে পাওয়া আত্মবিশ্বাসকেই জ্বালানি বানিয়েছিলেন। মনের জোরে কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার আশা দেখেছিলেন। কিন্তু এই ম্যাচ দেখাল, বাস্তবে আসলে দুই দলের ব্যবধান ঠিক কতটা।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) ট্রেন্ট ব্রিজে ৩৮২ রান তাড়ায় ৩৩৩ পর্যন্ত যেতে পেরেছে বাংলাদেশ। হারটা ৪৮ রানের। এইটুকুতেই বাহবা পেয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতবড় রান তাড়ায় ভারত হলেও ফলটা ভিন্ন হওয়া কঠিন ছিল বলে মত খোদ ভারতীয়দেরই। বাংলাদেশের ব্যাটিং আক্ষেপ বাড়িয়েছে, হতাশা জাগায়নি।

অসিরা ৭০ ভাগ খেললে বাংলাদেশকে জিততে ১২০ ভাগ দিয়ে খেলতে হবে। কিন্তু পেশাদার অসিরা কেন প্রতিপক্ষকে সুযোগ দেবে। তারা উজাড় করেই খেলল। তাতে বার্তাটাই এই, বাংলাদেশকে হারাতে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকেও উজাড় করে খেলতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ টসটা জিতে অ্যারন ফিঞ্চ ব্যাটিং নিলেন। উইকেটে বোলারদের জন্য তেমন কিছু নেই। শুরুর আর্দ্রতা অল্প বিস্তর ভোগাতে পারে। এরপর ধুমধাম পেটানো যাবে। এমন উইকেটে স্পিনে কিছু হয়ই না, খুব গতিময় পেসার হলে হয়ত কিছু একটা করা যায়। গড়পড়তা বোলিং আক্রমণ নিয়ে টেক্কা দেওয়া একেবারেই মুশকিল। বাংলাদেশের সাদামাটা বোলিং ধন্দে ফেলার কাছাকাছিও ছিল না। যে কটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল, ফিল্ডারদের ক্ষিপ্রতার অভাবে তাও ভেস্তে গেছে।

মাশরাফির বলে মাত্র ১০ রানে সাব্বির রহমান ডেভিড ওয়ার্নারের ক্যাচ ফেললেন। ওয়ার্নার জীবন পেয়ে থামলেন ১৬৬ করে। তিনি শুরুতে আউট হলে হয়তোবা ভিন্ন পথে আগাতে হতো অসিদের। ফিফটি পেরিয়ে যাওয়ার পর আরও একবার তাকে রান আউটের সুযোগ এসেছিল। তখনো সাব্বির সময়মত বল হাতেই নিতে পারেননি।

ফিল্ডাররা তাদের সেরাটা দিতে পারলে আরও অন্তত ১০-১৫ রান ঠেকানো যেত। তবু অসিদের সাড়ে তিনশোর আগে ঠেকানো যেত না বটে। এই ধরনের উইকেটে বিস্ময়কর কোনো স্পেল কিংবা প্রতিপক্ষের ভুল না হলে বড় রান ঠেকানো মুশকিল।

বোলিংয়ের পরই ম্যাচের ফল নিয়ে মাতামাতি কমে যাওয়ার কারণ আসলে সামর্থ্য। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণকে শাসিয়ে ৩৮২ রান টপকে জেতা যে কোনো ব্যাটিং লাইনআপের জন্যও ভীষণ কঠিন। ম্যাচটা যদি হয় বিশ্বকাপ তাহলে চাপ সামলে সেটা আরও কঠিন।

একই উইকেটে আগে ব্যাট করলে যেমন নির্ভার খেলা যায়, রান তাড়ায় হয় ঠিক উলটো। তবু ৩০ ওভার পর্যন্ত রানরেট জুতসই রেখে আবার উইকেট না হারিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে তবু সাহস জমে অবিশ্বাস্য কিছু ঘটিয়ে ফেলার। বাংলাদেশ এমন কিছু মাথায় নিয়েই শুরু করেছিল বলে জানান তামিম ইকবাল। কিন্তু ২৩ রানে গিয়েই তার সঙ্গে সৌম্য সরকারের ভুল বোঝাবুঝিতে গড়বড়। এরপর তামিমের সঙ্গে দুরন্ত ছন্দে থাকা সাকিব আল হাসানের ৭৯ রানের একটা জুটি হয়েছে বটে। কিন্তু সাকিবের আউটে অবিশ্বাস্য কিছুর সম্ভাবনা ‘নেই’ হয়ে যায়। তামিম থিতু হয়ে ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন। যখনই হাত খুলে মারতে যাবেন তখনই বিদায়, পুষিয়ে দিতে পারেননি। তবু বাংলাদেশ এত রান করেছে মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জন্য। রানে-বলে পাল্লা দিয়ে ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি করে অপরাজিত মুশফিক। মাহমুদউল্লাহ ৫০ বলে ৬৯ কেবল আফসোসই বাড়াল।

বাংলাদেশের হেরে যাওয়ায় ঠিক যেমনটা আফসোস বেড়েছে নিরপেক্ষ কিন্তু রোমাঞ্চপ্রিয় ক্রিকেটপ্রেমীদেরও। বিশ্বকাপটা কি তবে একপেশে হয়ে খুব অনুমেয় কিছুর দিকেই যাচ্ছে?

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women defend SAFF title with 2-1 win against Nepal

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

10m ago