রোমাঞ্চকর জয়ে বিশ্বকাপ জমিয়ে দিল শ্রীলঙ্কা
বয়সটা ৩৫ পেরিয়ে ৩৬ ছুঁইছুঁই। কিন্তু তাতে বোলিংয়ের ধার কমেনি বিন্দুমাত্র। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এদিন বুড়ো লাসিথ মালিঙ্গাই এনে দিলেন অবিশ্বাস্য এক জয়। ইংলিশদের টপ অর্ডার ভেঙেছেন। এমনকি প্রয়োজনীয় সময়ে ব্রেক থ্রু এনে ভেঙেছেন জুটি। তাতে স্বল্প পুঁজি নিয়ে ২০ রানের রোমাঞ্চকর জয়ে নিজেদের সেমিফাইনালের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখেনি শ্রীলঙ্কা, জমিয়ে দিয়েছে বিশ্বকাপও।
মালিঙ্গার পাশাপাশি দলের জয়ের অন্যতম নায়ক সাবেক অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজও। শেষ পর্যন্ত লড়াই করে অনবদ্য এক ইনিংস খেলে শ্রীলঙ্কাকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছেন তিনিই।
জোফরা আর্চার যখন আউট হলেন তখন জয় থেকে ৪৭ রান দূরে ইংল্যান্ড। এরপর এক প্রান্ত ধরে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছিলেন বেন স্টোকস। মার্ক উডকে নিয়ে ২৬ রানের জুটিও গড়েছিলেন। ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে চার ছক্কায় ম্যাচকে কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ৪৭তম ওভারের পঞ্চম বলে সিঙ্গেল নিয়েই ভুলটা করে ফেলেন স্টোকস। শেষ বলে খোঁচা মেরে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনেন উড। তাতে রোমাঞ্চকর জয় পায় লঙ্কানরা।
শ্রীলঙ্কার জয়ে লাভবান হয়েছে বাংলাদেশও। কারণ ইংলিশদের শেষ তিনটি প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও নিউজিল্যান্ড। যাদের বিপক্ষে গত ২৭ বছরে বিশ্বকাপে কোন জয় নেই ইংলিশদের। দুটি ম্যাচে হারলে আর বাংলাদেশ নিজেদের শেষ তিনটি ম্যাচে জিতলে শেষ চারে উঠতে পারবে টাইগাররা।
তবে মালিঙ্গার তোপে লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি ইংল্যান্ডের। দলীয় ২৬ রানেই দুই ওপেনারকে বিদায় করেন এ পেসার। এরপর জো রুটের সঙ্গে ৪৭ রানের জুটি গড়ে সে চাপ সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক ইয়ন মরগান। কিন্তু ইশুরু উদানার বলে তার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ইংলিশ অধিনায়ক। তাতে ম্যাচে ফিরে আসে লঙ্কানরা।
তবে চতুর্থ উইকেটে বেন স্টোকসকে নিয়ে দলের হাল ধরেন দারুণ ছন্দে থাকা রুট। গড়েন ৫৪ রানের জুটি। এ জুটিও ভাঙেন মালিঙ্গা। তুলে নেন বিশ্বকাপে নিজের ৫০তম উইকেট। এরপর ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান জস বাটলারকেও তুলে নেন তিনি। তাতে দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসে শ্রীলঙ্কা। মালিঙ্গার তোপ শেষ না হতে ঘূর্ণি জাদু দেখান ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। ৮ রানের ব্যবধানে তুলে নেন ৩ উইকেট। তখনই কার্যত জয় দেখতে শুরু করে লঙ্কানরা।
বেন স্টোকস শেষ দিকে প্রতিরোধ গড়ে লঙ্কানদের অপেক্ষা বাড়ান। মালিঙ্গার করা ৪৫তম ওভারে ক্যাচও তুলে দিয়েছিলেন। তবে অল্পের জন্য নাগাল পাননি কুশল মেন্ডিস। আঙুলে লাগলেও তালুবন্দি করতে পারেননি। তবে স্টোকস টিকে থাকলেও অন্য প্রান্তের উইকেট তুলে নিয়ে জয় পায় শ্রীলঙ্কাই।
৮৯ বলে ৭টি চার ও ৪টি ছক্কার সাহায্যে ৮২ রানের হার না মানা দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন স্টোকস। যেভাবে খেলেছেন তাতে সতীর্থদের সহায়তা পেলে দলের জয়ের সঙ্গে নিজের সেঞ্চুরিও পেতে পারতেন। ৮৯ বলে ৫৭ রানের দায়িত্বশীল এক ইনিংস খেলেছেন রুটও। এ দুই ব্যাটসম্যান ছাড়া আর কোন ব্যাটসম্যান দায়িত্ব নিতে পারেননি।
৪৩ রানের খরচায় ৪টি উইকেট নিয়েছেন মালিঙ্গা। ভাগ্য সঙ্গে থাকলে বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় ফাইফারটা পেতে পারতেন। তবে দলের জয়ের জন্য যা দরকার তার ষোলোআনাই করেছেন তিনি। ৩২ রানের বিনিময়ে ৩টি উইকেট ধনাঞ্জয়ার। এছাড়া উশুরু উদানা পান ২টি উইকেট।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি শ্রীলঙ্কার। দলীয় ৩ রানেই নেই দুই ওপেনার। তবে দ্বিতীয় উইকেটে আভিস্কা ফের্নান্ডোকে নিয়ে দলের হাল ধরেন কুশল মেন্ডিস। ৫৯ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক চাপ সামলে নেন তারা। এরপর আভিস্কার বিদায়ের পর ম্যাথিউজের সঙ্গে আরও একটি ভালো জুটি গড়েন কুশল মেন্ডিস। স্কোর বোর্ডে ৭১ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটসম্যান।
কুশল মেন্ডিসকে অধিনায়ক ইয়ন মরগানের তালুবন্দি করে এ জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ। এমনকি পরের বলে জীবন মেন্ডিসকে আউট করে বড় চাপে ফেলে দেন লঙ্কানদের। এরপর ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজে নামেন ম্যাথিউজ। ৫৭ রানের জুটি গড়েন তারা।
শেষ পর্যন্ত লড়াই করে ৮৫ রান করে অপরাজিত থাকেন ম্যাথিউজ। খেলেন ৮৫ রানের ইনিংস। ১১৫ বলে ৫টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে এ রান করেন তিনি। উইকেটে নেমেই বেশ হাত খুলে ব্যাটিং করে মাত্র ৩৯ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৯ রান তোলেন আভিস্কা। কিছুটা ধীর গতিতে ব্যাট করে ১১০ বলে ৪৬ রান করেন কুশল মেন্ডিস। এছাড়া ধনাঞ্জয়ার ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান।
Comments