বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার নিয়মিত না খেলা ‘লজ্জার’

ছবি: এএফপি

বাংলাদেশের বিপক্ষে ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাওয়াজা জুটি বেঁধে দলকে বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে নেওয়ার পথে একটা ইতিহাসও গড়ে ফেলেন।

সেদিন দ্বিতীয় উইকেটে ১৪২ বলে ১৯২ রান যোগ করেছিলেন তারা। ওয়ানডেতে যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ রানের জুটি। পারফরম্যান্সটা অসাধারণ ছিল কিন্তু রেকর্ড গড়তে তাদের খুব বেশি বেগও পেতে হয়নি (আগের রেকর্ড ছিল অবিচ্ছিন্ন ১৭০ রানের; ২০১১ সালে রিকি পন্টিং ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টের)। কারণ এই দুই দল এখন পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে কেবল ২২টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে।

ট্রেন্ট ব্রিজে বৃহস্পতিবারের (২০ জুন) ম্যাচের আগে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ সবশেষ যে সম্পূর্ণ ওয়ানডে ম্যাচটি খেলেছিল, তা হয়েছিল সেই ২০১১ সালে (২০১৫ বিশ্বকাপ ও ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচ দুটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়)। ব্যস্ত ক্রিকেট সূচির এই যুগে যখন দলগুলো একে অপরের বিপক্ষে বছর জুড়ে খেলে থাকে, তখন খুবই আশ্চর্যজনক বিষয় যে, এই দুটি দলের মধ্যে লম্বা সময় ধরে দেখা হচ্ছেই না!

ওই ম্যাচের আগের দিন জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোর প্রখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান ক্রীড়া সাংবাদিক মেলিন্ডা ফ্যারেল বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে এত কম সংখ্যক ম্যাচ হওয়ার বিষয়টিকে ‘লজ্জার’ বলে উল্লেখ করেন। নিজ দেশের ক্রিকেট বোর্ডের দিকে অভিযোগের আঙুল তাক করে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে জানান, ‘টাইগারদের সঙ্গে খুবই বাজে আচরণ করছে সিএ।’

তিনি আরও লেখেন, ‘বাংলাদেশ (অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে) খেলার সুযোগ পেলে নিঃসন্দেহে খুশিই হবে। কিন্তু দায়ী হলো সিএ যারা সূচিগুলো বাতিল করে দেয়।’

সাদা পোশাকে দুই দলের খেলার নজির আরও আরও নগণ্য। ২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো নিজেদের মধ্যে টেস্ট ম্যাচ খেলেছিল তারা। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়টি টেস্ট হয়েছে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে।

গেল বছর আগস্ট-সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বাংলাদেশের দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলার কথা ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড (সিএ) তা বাতিল করে দেয়। যুক্তি হিসেবে আর্থিক বিষয়টিকে উল্লেখ করা হয়। কারণ, এই সিরিজ থেকে অস্ট্রেলিয়া খুব বেশি লাভবান হতো না। শুধু তাই-ই নয়, আইসিসির ২০২৩ সাল পর্যন্ত তৈরি করে রাখা ক্রিকেট সূচিতে (এফটিপি) অস্ট্রেলিয়ার মাঠে বাংলাদেশের কোনো টেস্ট ম্যাচ নেই।

২০০৩ সালেই প্রথম ও শেষবারের মতো অস্ট্রেলিয়াতে টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। আর ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল ২০০৮ সালে। সেবার ৩-০ ব্যবধানে জিতেছিল অসিরা। এই গ্রীষ্মে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে একটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু সেটাও সরিয়ে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যেন চলতি মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজে কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারে তারা।

কিংবদন্তি অসি ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার জিম ম্যাক্সওয়েলও একই বিষয় নিয়ে নিজের খেদ গোপন করেননি। বিখ্যাত সংবাদ সংস্থা বিবিসির হয়ে বিশ্বকাপ ম্যাচটির ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘যদি আপনি অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যকার ক্রিকেট ইতিহাসের দিকে তাকান, তবে দেখবেন এটা খুব দীর্ঘ নয়।’

‘তারা খুব কম ক্ষেত্রেই অস্ট্রেলিয়াতে খেলার সুযোগ পেয়েছে। আর আপনি চাইলেই তার কারণ খুঁজে বের করতে পারেন,’ যোগ করে বলেন তিনি।

ইংল্যান্ডের বিখ্যাত দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের ইসাবেল ওয়েস্টবুরির মতে, এটা বোধগম্য যে, দুই দলের মুখোমুখি হওয়া ম্যাচের সংখ্যা খুব কম। কারণ, বাংলাদেশ কয়েক বছর আগেও একটা উদীয়মান দলই ছিল। কিন্তু তারা এখন আর আগের মতো দুর্বল নয়।

তিনি লেখেন, ‘গত দুই দশক ধরে বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে ধরা হয়েছে কলার খোসাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পিচ্ছিলটি হিসেবে (অর্থাৎ যাদের বিপক্ষে বড় দলগুলোর পা হড়কানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি)। এই ধারণা এখন বাতিলের খাতায়।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘বাংলাদেশ গেল চার বছরে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তারা যতবার হেরেছে, তার চেয়ে বেশিবার জিতেছে (ট্রেন্ট ব্রিজ ম্যাচের আগ পর্যন্ত)। তারা গেল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল আর কদিন আগেই ত্রিদেশীয় সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নাস্তানাবুদ করেছে।’

সবশেষে তিনি লেখেন, ‘তারা হয়তো বিশ্বকাপ জয়ের দাবিদার না। কিন্তু তারা এগিয়ে গেছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে আমাদের পুরনো ধারণাকেও ঝেড়ে ফেলে নতুন করে ভাবা উচিত।’

সূত্র: ক্রিকেট ডট কম ডট এইউ (অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম)

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women defend SAFF title with 2-1 win against Nepal

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

10m ago