৫ কারণে সুবিধাজনক অবস্থানে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের জন্য প্রতিটি ম্যাচই এখন নক-আউট। জিততে হবে। অন্য যে কোনো ফল হলে বেজে যাবে বিদায় ঘণ্টা। বাঁচা-মরার বিষয়টি মাথায় রেখেই তাই প্রতিটি ম্যাচে মাঠে নামতে হচ্ছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দলকে। লিগ পর্বের বাধা পাড়ি দিয়ে সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্য পূরণের পথে সোমবার (২৪ জুন) সাউদাম্পটনে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে তারা।
bangladesh cricket team
ছবি: রয়টার্স

বাংলাদেশের জন্য প্রতিটি ম্যাচই এখন নক-আউট। জিততে হবে। অন্য যে কোনো ফল হলে বেজে যাবে বিদায় ঘণ্টা। বাঁচা-মরার বিষয়টি মাথায় রেখেই তাই প্রতিটি ম্যাচে মাঠে নামতে হচ্ছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দলকে। লিগ পর্বের বাধা পাড়ি দিয়ে সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্য পূরণের পথে সোমবার (২৪ জুন) সাউদাম্পটনে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে তারা।

বাংলাদেশের হাতে রয়েছে তিনটি ম্যাচ। আফগানিস্তান ম্যাচের পর তারা মাঠে নামবে যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। ওই দুই দলের বিপক্ষে খেলার আগে আফগানদের হারাতে পারলে পয়েন্ট তালিকায় এগিয়ে গিয়ে সেমির স্বপ্ন যেমন উজ্জ্বল হবে, তেমনি ক্রিকেটারদের মেজাজ-মর্জি হবে ফুরফুরে, বাড়বে আত্মবিশ্বাস। গুলবাদিন নাইবের দলের সঙ্গে ম্যাচটি তাই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য।

তবে আফগানদের বিপক্ষে কিছুটা মানসিক চাপে থাকে বাংলাদেশ। কেননা, অস্ট্রেলিয়া-ভারতের মতো বড় বড় দলের কাছে হারলে যতটা না সমালোচনা হয়ে থাকে, তার চেয়ে বহুগুণে হয়ে থাকে আফগানিস্তানের কাছে হারলে। তাছাড়া নিজেদের সবশেষ ম্যাচে প্রাণপণ লড়াই করে ভারতকেই ভড়কে দিয়েছিলেন রশিদ খান-মোহাম্মদ নবিরা।

বাস্তবতা হলো, খেলার মাঠে এসব চাপ থাকেই। এই চাপকে টেক্কা দিয়েই শেষ হাসি হাসতে হয়। আর লক্ষ্যটা যেহেতু সেমিফাইনাল, তাই এসব চাপের কাছে মাথা নত না করে নিজেদের সেরা খেলাটাই খেলতে হবে বাংলাদেশকে। দক্ষিণ আফ্রিকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে এরই মধ্যে সে প্রমাণ রেখেছেন সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিমরা।

ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে কিছুটা এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। দুদলের সাতবারের দেখায় টাইগারদের জয় চারটিতে। বাকি তিনটিতে জিতেছে আফগানরা। পরিসংখ্যানের পাশাপাশি দলীয় সামর্থ্য, অভিজ্ঞতা আর র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকায় বাজির দরটা থাকছে বাংলাদেশের পক্ষে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এগিয়ে থাকার ছাপগুলো মাঠে রাখতে পারলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে পূর্ণ ২ পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়বে মাশরাফি বাহিনী। আর কাগজে-কলমে এমনিতেও তো এ ম্যাচে বাংলাদেশই ফেভারিট।

শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ:

এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটিং নজর কেড়েছে সবার। সাবেক তারকা ক্রিকেটার মাইকেল হাসি তো বলেই ফেলেছেন, টাইগারদের ব্যাটিং সামর্থ্য প্রায় অস্ট্রেলিয়ার সমমানের। সবশেষ ম্যাচে নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজে অসিদের ছুঁড়ে দেওয়া ৩৮২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশ থামে ৮ উইকেটে ৩৩৩ রানে। যা ওয়ানডেতে দলের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। আগের রেকর্ডটাও হয়েছিল এবারের আসরেই। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তুলেছিল ৩৩০ রান। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩২২ রান তাড়া করেও জিতেছিল বাংলাদেশ।

আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকারীদের তালিকায় দুই নম্বরে আছেন সাকিব আল হাসান। ৫ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪২৫ রান। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিকেটের যে কোনো সংস্করণের একক সিরিজ বা টুর্নামেন্টে কমপক্ষে চারশো রান করার কীর্তি গড়েছেন তিনি।

রান সংগ্রাহকদের তালিকায় সাতে মুশফিকুর রহিম। ৫ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৪৪ রান। রানের মধ্যে আছেন তামিম ইকবাল-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। লিটন দাস-সৌম্য সরকার যে কোনো সময়ে প্রতিপক্ষের জন্য ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন। এমন শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ দিয়ে আফগানিস্তানের বোলিংকে কচুকাটা করার ক্ষমতা রাখে বাংলাদেশ।

স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষে সক্ষমতা:

এ ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের বিপক্ষে নিজেদের স্পিন শক্তি দিয়ে লড়াই চালাবে আফগানিস্তান। সাউদাম্পটনের রোজ বোলের উইকেটও স্পিন-বান্ধব। এই মাঠে ভারত-আফগানিস্তানের মধ্যকার শেষ ম্যাচটিতে দেখা গেছে, মন্থর পিচে বল টার্নও করেছে দারুণভাবে। সেই একই উইকেটে রশিদ খান-মুজিব উর রহমানদের মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশকে। এদের সঙ্গে মোহাম্মদ নবি-রহমত শাহও আছেন।

তবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ঘরোয়া পর্যায়ে স্পিন খেলেই বেড়ে উঠেছেন। কোচ স্টিভ রোডস এই বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। ঘূর্ণি বোলিংয়ের বিপক্ষে শিষ্যদের দক্ষতা নিয়ে অগাধ আস্থা রয়েছে তার। তাই আফগান দলে রশিদ-মুজিবের মতো বিশ্বমানের স্পিনার থাকলেও তা নিয়ে ভয়ে থাকবে না টাইগাররা। তাছাড়া ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলার সুবাদে তাদের বোলিং সম্পর্কে ভালোই জানা আছে সাকিবের। দলের বাকিরাও নিশ্চয়ই এতক্ষণে তাদের সম্পর্কে ভালো ধারণা পেয়ে গেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের কাছ থেকে।

রোজ বোলের উইকেট:

উইকেট স্পিন উপযোগী তো কেবল আফগানিস্তানের একার জন্য নয়! তাদের বোলাররা সুবিধা আদায় করে নিতে পারলে বাংলাদেশও কম কীসে। অসিদের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচে সাকিব আল হাসান-মেহেদী হাসান মিরাজরা ভালো করতে পারেননি। তৃতীয় স্পিনারের ঘাটতিও ছিল সেদিন। তবে রোজ বোল বাংলাদেশের স্পিনারদের জন্যও ভালো কিছুর আভাসই দিচ্ছে।

তাছাড়া এ ম্যাচের একাদশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের। এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারের অভাবটা শেষ ম্যাচে ভালোই টের পেয়েছে বাংলাদেশ। তিনি ফিরলে সাকিব-মিরাজরা যেমন বাড়তি একজন সঙ্গী পাবেন, দলও পাবে সময় ও খেলার গতিপথ বুঝে আফগানদের আরও বেশি চেপে ধরার সুযোগ।

অভিজ্ঞতা-দক্ষতা:

মানসিক চাপ সামলে নেওয়ার আগে খেলার মাঠে মূল বিষয় হলো দক্ষতা। টানা ছয় ম্যাচে হারা আফগানিস্তানের জয়ের তীব্র ক্ষুধা-তাড়না রয়েছে ঠিকই। কিন্তু এসব দিয়ে ম্যাচ জেতার চিন্তা করাটা বোকামি। কারণ, ব্যাটিং-বোলিংয়ে দক্ষতা দেখিয়ে ম্যাচ বের করে আনতে হয়।

এই বিচারে, কেবল স্পিন বিভাগের চেয়ে বাকি সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে বাংলাদেশ। টাইগারদের ঘাটতির জায়গাটা কেবল একজন রিস্ট স্পিনারের। তবে সাকিব-মিরাজ-মোসাদ্দেকরা উইকেট থেকে কখনওই খুব বেশি টার্ন আদায় করতে না পারলেও, উইকেটশিকারের কাজটা ঠিকই নিয়মিতভাবে করতে পারেন। ব্যাটসম্যানের প্রবণতা বুঝে ফেলার দক্ষতা তাদের রয়েছে।

আর অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে, আফগানরা নেই বাংলাদেশের ধারে-কাছে। দলটি কেবল দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে খেলছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমরা চতুর্থবারের মতো বিশ্ব মঞ্চে খেলছেন। মাহমুদউল্লাহ ও রুবেল হোসেন এই স্বাদ নিচ্ছেন তৃতীয়বারের মতো।

সাকিবের দুরন্ত পারফরম্যান্স ও মাশরাফির নেতৃত্ব:

‘সাকিব কেবল এই আসরে নয়, গেল দুই বছর থেকেই দারুণ খেলে যাচ্ছে। বাংলাদেশে সেই সেরা। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে তাকে একই দলে পেয়েছে নবি আর রশিদ। চেষ্টা করছি তাকে জানার। কাল (সোমবার) যদি তার দিন হয়, আমাদের জন্য কাজটা সত্যি কঠিন হয়ে যাবে।’

‘মর্তুজা অধিনায়ক হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ গত কয়েক বছর থেকে ভালো করছে। গেল চার বছর থেকেই আসলে তারা তাদের স্কিল দেখিয়ে আসছে। মর্তুজার এই জন্য কৃতিত্ব পাওনা। দলকে সে অসাধারণ নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া মুগ্ধ হয়ে দেখতে হয়। বিশ্বকাপে তারা দারুণ। আমাদের কাজটা একেবারেই সহজ হবে না।’

কথাগুলো আফগান দলনেতা নাইবের। বাংলাদেশের যে দুই তারকাকে নিয়ে মাথাব্যথা, তারা হলেন- সাকিব ও মাশরাফি। বাঁহাতি তারকা সাকিব এরই মধ্যে নিজের জাত চেনানোর কাজটা করে দেখিয়েছেন। মাশরাফি বল হাতে সেরাটা এখনও দিতে পারলেও বিগত ম্যাচগুলোতে তার নেতৃত্ব বরাবরের মতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে তার জুড়ি নেই।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago