সাকিবের ঝলকে পাত্তা পেল না আফগানিস্তান

ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ব্যাটিংয়ে পেয়েছিলেন হাফসেঞ্চুরি। এরপর বোলিংয়ে এসে গড়লেন রেকর্ড। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে ৫ উইকেট শিকার করলেন সাকিব আল হাসান। তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে আফগানিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালে খেলার আশা টিকিয়ে রাখল বাংলাদেশ।
ছবি; রয়টার্স

ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ব্যাটিংয়ে পেয়েছিলেন বিশ্বকাপের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি (সেঞ্চুরি দুটি)। এরপর বোলিংয়ে এসে গড়লেন রেকর্ড। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে ৫ উইকেট শিকার করলেন সাকিব আল হাসান। তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে উড়ে গেল আফগানিস্তান। সাকিবময় ম্যাচে ৬২ রানে দুরন্ত জয়ে সেমিফাইনালে খেলার আশা টিকিয়ে রাখল বাংলাদেশ।

সোমবার (২৪ জুন) সাউদাম্পটনের রোজ বোলে বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ২৬৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৪৭ ওভারে আফগানিস্তান অলআউট হয়েছে ২০০ রানে। ১০ ওভারের কোটা পূরণ করে একটি মেডেনসহ মাত্র ২৯ রান দিয়ে ৫ উইকেট পান সাকিব। এই জয়ে ৭ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপের পয়েন্ট তালিকায় পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।

জবাব দিতে নেমে অবশ্য আফগানদের শুরুটা হয় দারুণ। প্রথম দশ ওভার প্রায় নির্বিঘ্নেই পার করে দিয়ে স্কোরবোর্ডে বিনা উইকেটে ৪৮ রান তুলে ফেলে তারা। দুই ওপেনার গুলবাদিন নাইব ও রহমত শাহের বিপরীতে খুব একটা সুবিধা আদায় করতে পারছিলেন না বাংলাদেশের তিন পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তখন টাইগাররাই কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছিল।

তবে মুহূর্তের মধ্যে মোড় ঘুরে যায় সাকিবের নৈপুণ্যে। ইনিংসের ১১তম ওভারে বল হাতে আক্রমণে এসে পঞ্চম বলেই ফেরান রহমতকে। উইকেট উল্লাসে মাতান বাংলাদেশকে। তামিম ইকবালের হাতে মিড অনে ধরা পড়ার আগে ৩৫ বলে ২৪ রান করেন রহমত।

উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর আফগানদের রানের চাকা শ্লথ হয়ে যায়। সাকিবের পর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজ মিলে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে চেপে ধরেন প্রতিপক্ষকে।

নাইবকে সঙ্গ দিতে নামা হাশমতউল্লাহ শহিদিকে রানআউট করার সুবর্ণ সুযোগ বাংলাদেশ হাতছাড়া করে ২১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে। এই আক্ষেপে পুড়তে হয়নি বেশিক্ষণ। দুই বল পরই চাপ আলগা করতে গিয়ে ক্রিজ ছেড়ে মোসাদ্দেককে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন হাশমতউল্লাহ। কিন্তু ব্যাটে-বলে সংযোগ না হওয়ায় মুশফিকুর রহিমের স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন তিনি। ৩১ বলে ১১ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে আরও রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন সাকিব। ২৯তম ওভারে জোড়া শিকার করে আফগানদের জোর ধাক্কা দেন এই বাঁহাতি। এক প্রান্ত আগলে থাকা অধিনায়ক নাইব আউট হন ৭৫ বলে ৪৭ রান করে। মোহাম্মদ নবি ২ বল খেলে করেন শূন্য। এরপর আসগর আফগানকেও সাকিব ফিরিয়ে দিলে ২ উইকেটে ১০৪ রান থেকে ৫ উইকেটে ১১৭ রানের দলে পরিণত হয় আফগানিস্তান। আফগান ৩৮ বলে করেন ২০ রান।

কিছু পরেই দুর্দান্ত থ্রোতে ইকরাম আলি খিলকে রানআউট করেন লিটন দাস। ১৩২ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। ইকরাম করেন ১২ বলে ১১ রান। বাংলাদেশের বড় ব্যবধানে জয়ের সম্ভাবনা তখনই তৈরি হয়ে যায়।

এরপরই ইনিংসের সেরা জুটিটি পায় আফগানরা। সামিউল্লাহ শেনওয়ারি ও নাজিবউল্লাহ জাদরান মিলে দ্রুতগতিতে রান তুলতে থাকেন। তাতে হালকা চাপও অনুভব করতে থাকে বাংলাদেশ। এই অস্বস্তি থেকে উদ্ধার করতে ফের ত্রাতার ভূমিকায় সাকিব। মুশফিকের সঙ্গে বোঝাপড়ায় স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন জাদরানকে। পেয়ে যান কাঙ্ক্ষিত পঞ্চম শিকার। ভাঙে আফগানদের ৪৫ বলে ৫৬ রানের সপ্তম উইকেট জুটি। জাদরান করেন ২৩ বলে ২৩ রান।

১৮৮ রানে জাদরানের বিদায়ের পর আফগানরা স্কোরবোর্ডে আর মাত্র ১২ রান যোগ করতেই বাকি ৩ উইকেট হারায়। এক প্রান্তে শেনওয়ারি ৫১ বলে ৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন। অন্যপ্রান্তের রশিদ খান (৩ বলে ২ রান) ও দৌলত খানকে (৮ বলে ০ রান) ফেরান মোস্তাফিজ। মুজিব উর রহমানকে (৪ বলে ০ রান) বোল্ড করে আফগানদের গুটিয়ে দেন সাইফউদ্দিন।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৬২ রান করে বাংলাদেশ। মূলত তিনটি পঞ্চাশোর্ধ্ব এবং একটি পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটিতে স্কোরবোর্ডে এই সংগ্রহ দাঁড় করায় টাইগাররা। সাকিব ৬৯ বলে ৫১ ও মুশফিক ৮৭ বলে ৮৩ রান করেন। শেষ দিকে ২৪ বলে ৩৫ রানের দারুণ একটি ক্যামিও ইনিংস খেলেন মোসাদ্দেক।

এই এক ম্যাচেই অনেকগুলো মাইলফলক স্পর্শ করেছেন সাকিব। বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ছুঁয়েছেন এক হাজার রান। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ইনিংসে ৫ উইকেট তো নিয়েছেনই। ইতিহাসের একমাত্র অলরাউন্ডার হিসেবে বিশ্বকাপে ৩০ উইকেট ও হাজার রানের রেকর্ড গড়ে বসিয়েছেন নিজের একার নতুন রাজত্ব। এখানেই শেষ নয়। যুবরাজ সিংয়ের (২০১১ বিশ্বকাপ) পর ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে একই ম্যাচে ফিফটি ও ৫ উইকেট নেওয়ার বিরল তালিকাতেও নাম উঠেছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের।

এখানেই শেষ নয়! এবার বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায়ও ফের ডেভিড ওয়ার্নারকে হটিয়ে এক নম্বরে উঠে গেছেন তিনি। মোহাম্মদ আমিরকে (৫/৩০) ছাপিয়ে আসরের সেরা বোলিং ফিগারও এখন পর্যন্ত তারই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৬২/৭ (লিটন ১৬, তামিম ৩৬, সাকিব ৫১, মুশফিক ৮৩, সৌম্য ৩, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মোসাদ্দেক ৩৫, সাইফউদ্দিন ২*; মুজিব ৩/৩৯, দৌলত ১/৬৪, নবি ১/৪৪, নাইব ২/৫৬, রশিদ ০/৫২, রহমত ০/৭)

আফগানিস্তান: ৪৭ ওভারে ২০০ (গুলবাদিন ৪৭, রহমত ২৪, শহিদি ১১, আসগর ২০, নবি ০, শেনওয়ারি ৪৯*, ইকরাম ১১, নাজিবউল্লাহ ২৩, রশিদ ২, দৌলত ০, মুজিব ০*; মাশরাফি ০/৩৭, মুস্তাফিজ ২/৩২, সাইফ ১/৩৩, সাকিব ৫/২৯, মিরাজ ০/৩৭, মোসাদ্দেক ১/২৫)।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago