কত দূর যাবেন সাকিব?

ব্যাটে-বলে সমান দক্ষতার ছাপ রেখে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন ল্যান্স ক্লুজনার। ১২ বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকান তারকার মতো একই রকম নৈপুণ্য দেখিয়ে টুর্নামেন্ট সেরার মুকুট জিতেছিলেন ভারতের যুবরাজ সিং। তাদেরও আগে এই কীর্তি গড়ে দেখিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়সুরিয়া, ১৯৯৬ বিশ্বকাপে। এবার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে এখন পর্যন্ত তাদের পথেই হাঁটার স্বাক্ষর রেখেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
shakib al hasan
ছবি: এএফপি

ব্যাটে-বলে সমান দক্ষতার ছাপ রেখে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন ল্যান্স ক্লুজনার। ১২ বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকান তারকার মতো একই রকম নৈপুণ্য দেখিয়ে টুর্নামেন্ট সেরার মুকুট জিতেছিলেন ভারতের যুবরাজ সিং। তাদেরও আগে এই কীর্তি গড়ে দেখিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়সুরিয়া, ১৯৯৬ বিশ্বকাপে। এবার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে এখন পর্যন্ত তাদের পথেই হাঁটার স্বাক্ষর রেখেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে পণ্ড হওয়ায় ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশ মাঠে নামতে পেরেছে ছয়বার। সবকটিতে খেলেছেন সাকিব। তার সামর্থ্য নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না কোনোকালেই। তবে এবার যেন নিজেকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। ছয় ইনিংসে ব্যাট হাতে তার সংগ্রহ ৪৭৬ রান। সেঞ্চুরি দুটি। হাফসেঞ্চুরি তিনটি। কেবল একটি ম্যাচেই ছুঁতে পারেননি ফিফটি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আউট হয়েছিলেন ৪১ বলে ৪১ রান করে। বাংলাদেশের তো বটেই, আসরের শীর্ষ রান সংগ্রাহক হওয়ার দৌড়েও অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার-অ্যারন ফিঞ্চ ও ইংল্যান্ডের জো রুটের সঙ্গে তার লড়াইটা জমেছে বেশ। এবারের আসরে এই চারজনের ব্যাট থেকেই এসেছে চারশোর বেশি রান।

সাকিবের নামের পাশে উইকেট সংখ্যা ১০টি। উইকেট দখলের তালিকায় বাংলাদেশের পক্ষে যৌথভাবে শীর্ষে তিনি। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন আর মোস্তাফিজুর রহমান নিয়েছেন সমান সংখ্যক উইকেট। আরেক দিক থেকে সব বোলারকেই ছাড়িয়ে গেছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত সেরা বোলিং পারফরম্যান্স সাকিবের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৯ রানে পেয়েছেন ৫ উইকেট।

টানা চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে থাকা সাকিব আগের তিন আসর মিলিয়ে করেছিলেন ৫৪০ রান। এবার এক আসরেই সেই রান টপকে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছেন তিনি। নিজের পছন্দের তিন নম্বর পজিশনে দেখাচ্ছেন চোখ ধাঁধানো ধারাবাহিকতা। ঘূর্ণি বোলিংয়ে জাদু দেখিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বমঞ্চে ইনিংসে ৫ উইকেট দখল করেছেন সাকিব। আগের তিন আসরে যথাক্রমে ৭, ৮ ও ৮ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এবারই প্রথম পৌঁছেছেন ডাবল ফিগারে।

পরিসংখ্যানের কচকচানি তো অনেক হলো। দৃষ্টি দেওয়া যাক সাকিবের পারফরম্যান্স ম্যাচে কতটা প্রভাব রাখে তার ওপর। শুধু এই তথ্যটা থেকেই সেটা বুঝে নেওয়া যায়- বাংলাদেশ বিশ্বকাপে যে তিনটি ম্যাচ জিতেছে তার প্রতিটিতে ম্যাচসেরা হয়েছেন সাকিব।

ক্লুজনারের দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে গিয়েছিল। ভাগ্য সহায় হলে উঠতে পারত ফাইনালেও। তবে যুবরাজরা সেমিফাইনালের বাধা ঠিকই পাড়ি দিয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন ফাইনালে। ২০১১ সালে নিজেদের মাটিতে তার দল ভারত বিশ্বকাপ শিরোপাই জিতে নেয়। ১৯৯৬ সালে জয়সুরিয়ার শ্রীলঙ্কাও হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন। তবে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে পৌঁছাতে পারবে কি-না তা নিয়ে রয়েছে অনেক জটিল মারপ্যাঁচ। হাতে থাকা প্রতিটি ম্যাচই বাঁচা-মরার। পা হড়কালেই শেষ। তার সঙ্গে নজর রাখতে হবে অন্য ম্যাচগুলোর ফলের দিকেও।

প্রসঙ্গ এভাবে পাল্টে ফেলার কারণটাও সাকিব। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত সেরা পারফর্মার তিনি। তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আরও অন্তত দুটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছেন সাকিব, ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। আগের ম্যাচগুলোর ফর্ম ধরে রাখলে এই দুটি ম্যাচেও জ্বলবে তার ব্যাট, আগুনের গোলা হয়ে উঠবে তার বল। আরও ফুলে-ফেঁপে উঠবে তার রান-উইকেটের খাতা। কিন্তু পয়েন্ট তালিকার এই মুহূর্তের অবস্থান বলছে পাঁচে থাকা বাংলাদেশের চেয়ে সেমির দৌড়ে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে শীর্ষ চার দল-নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও ইংল্যান্ড।

তাই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত ‘সাকিবময়’ হয়ে থাকা বিশ্বকাপে শেষ পর্যন্ত সাকিবই ‘সেরা’ থাকবেন তো? বাংলাদেশ অন্তত সেমিফাইনালে পৌঁছালে সে দাবিটা জোরের সঙ্গেই রাখতে পারেন তিনি। তার সামনে উদাহরণ হয়ে জয়সুরিয়া-ক্লুজনার-যুবরাজরা তো আছেনই!

বিশ্বকাপের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট:

১৯৯২- মার্টিন ক্রো (নিউজিল্যান্ড), ৪৫৬ রান

১৯৯৬- সনাথ জয়সুরিয়া (শ্রীলঙ্কা), ২২১ রান ও ৭ উইকেট

১৯৯৯- ল্যান্স ক্লুজনার (দক্ষিণ আফ্রিকা), ২৮১ ও ১৭ উইকেট

২০০৩- শচীন টেন্ডুলকার (ভারত), ৬৭৩ রান ও ২ উইকেট

২০০৭- গ্লেন ম্যাকগ্রা (অস্ট্রেলিয়া), ২৬ উইকেট

২০১১- যুবরাজ সিং (ভারত), ৩৬২ রান ও ১৫ উইকেট

২০১৫- মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া), ২২ উইকেট।

Comments

The Daily Star  | English
Gross FDI Flow to Bangladesh

Uncertainty shrouds business recovery

The uphill battle to restore confidence among the business community is progressing slowly as the Prof Muhammad Yunus-led interim government marks its second month in office.

14h ago