নিউজিল্যান্ডকে প্রথম হারের স্বাদ দিল পাকিস্তান
বোলারদের সৌজন্যে লক্ষ্যটা থাকল সাধ্যের মধ্যেই। এরপর দলের সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজমের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। সঙ্গে হারিস সোহেলের টানা দ্বিতীয় ফিফটিতে সহজ জয়ই পেয়েছে পাকিস্তান। নিউজিল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে তারা। ফলে টিকে রইল সেমি-ফাইনালের আশা।
গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে না চাইলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের কোন বিকল্প ছিল না পাকিস্তানের। অন্যদিকে এ ম্যাচে জিতলে সেমি-ফাইনাল আজই নিশ্চিত হয়ে যেত কিউইদের। তবে হারলেও বিপদের কোন শঙ্কা নেই। রান রেট নিয়ন্ত্রণে রাখায় সেমি-ফাইনালে এক পা দিয়েই রেখেছে তারা। সপ্তম ম্যাচে এসে প্রথম হার দেখা দলটি পয়েন্ট ১১। সাত ম্যাচে পাকিস্তানের সংগ্রহ ৭।
দিনের শুরুটাই এদিন ভালো হয়েছে পাকিস্তানের। ম্যাচের আগে তাদের বড় দুশ্চিন্তা ছিল ক্যাচিং নিয়ে। আসর জুড়ে একের পর এক ক্যাচ মিসে বেশ ভুগতে থাকা দলটির ফিল্ডিং নিয়েই দুশ্চিন্তায় ছিলেন অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। সে দলটিই এদিন দারুণ ফিল্ডিং দিয়েছে। আর তার নেতৃত্ব দিয়েছেন সরফরাজ নিজেই।
যদিও টসটা জিতেছিল নিউজিল্যান্ডই। তবে বেছে নেয় ব্যাটিং। আর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই মোহাম্মদ আমিরের তোপে পড়ে দলটি। নিজের প্রথম বলেই মার্টিন গাপটিলকে বোল্ড করে দেন তিনি। অবশ্য তার বল খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন এ কিউই ওপেনার।
তবে নিউজিল্যান্ড শিবিরে মূল তোপ দাগান ১৯ বছর বয়সী শাহিন শাহ আফ্রিদি। কলিন মুনরোকে হারিস সোহেলের ক্যাচে পরিণত করেন। এরপর রস টেইলর ও টম লাথামকে পরিণত করেন উইকেটরক্ষক সরফরাজের।
কিউই শিবিরে অবশ্য সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দেন লেগ স্পিনার সাদাব আহমেদ। নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে ফেরান তিনি। চলতি বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে চলেছেন কিউই অধিনায়ক। এদিনও ৬৯ বলে ৪১ রান করেছিলেন। দলের হাল ধরে ইনিংস মেরামতের পথে ছিলেন। অবশ্য উইকেটের পেছনে দারুণ ক্যাচ লুফে নিয়েছেন সরফরাজও।
এরপরই নিশাম ও গ্রান্ডহোমের প্রতিরোধ। ষষ্ঠ উইকেটে ১৩২ রানের জুটি গড়েন তারা। জুটিটি হয়তো লম্বা হতো আরও। তবে রানআউটে কাটা পড়েন গ্রান্ডহোম। অবশ্য ততক্ষণে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৩৭ রান তোলে দলটি।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯৭ রানের ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকেছেন নিশাম। ১১২ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কার সাহায্যে এ রান করেন তিনি। ৭১ বলে ৬৪ রানের কার্যকরী ইনিংস আসে গ্রান্ডহোমের ব্যাট থেকে। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় এ রান করেছেন তিনি। পাকিস্তানের পক্ষে ২৮ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নিয়েছেন আফ্রিদি।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি পাকিস্তানের। দলীয় ১৯ রানেই ফখর জামানকে হারায় দলটি। এরপর স্কোরবোর্ডে আর ২৫ রান যোগ করতে আরেক ওপেনার ইমাম-উল-হককেও হারায় দলটি। তবে তৃতীয় উইকেটে মোহাম্মদ হাফিজকে নিয়ে দলের হাল ধরেন বাবর আজম। গড়েন ৬৬ রানের জুটি। এরপর উইলিয়ামসনের বলে হাফিজ ফিরে গেলে আগের ম্যাচের সেরা হারিস সোহেলকে জুটি বাঁধেন বাবর।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১০১ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন বাবর। ১১টি চারের সাহায্যে এ রান করেছেন তিনি। চলতি বিশ্বকাপে এটা তার প্রথম সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের দশম। বিশ্বকাপে প্রায় প্রতি ম্যাচে ভালো সূচনা পেলেও ইনিংস লম্বা করতে পারছিলেন না তিনি। এদিন দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়েই জ্বলে উঠলেন এ ব্যাটসম্যান।
দারুণ খেলেছেন হারিসও। ৭৬ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় করেন ৬৮ রান। বাবরের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির জেরে শেষ দিকে এসে রানআউট হন তিনি। হাফিজ করেন ৩২ রান। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে একটি করে উইকেট নিয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট, লোকি ফার্গুসন ও কেন উইলিয়ামসন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৩৭/৬ (গাপটিল ৫, মুনরো ১২, উইলিয়ামসন ৪১, টেইলর ৩, ল্যাথাম ১, নিশাম ৯৭*, ডি গ্র্যান্ডহোম ৬৪, স্যান্টনার ৫*; হাফিজ ০/২২, আমির ১/৬৭, আফ্রিদি ৩/২৮, ওয়াসিম ০/১৭, শাদাব ১/৪৩, ওয়াহাব ০/৫৫)।
পাকিস্তান: ৪৯.১ ওভারে ২৪১/৪ (ইমাম ১৯, ফখর ৯, বাবর ১০১*, হাফিজ ৩২, সোহেল ৬৮, সরফরাজ ৫*; বোল্ট ১/৪৮, হেনরি ০/২৫, ফার্গুসন ১/৫০, ডি গ্র্যান্ডহোম ০/১২, স্যান্টনার ০/৩৮, নিশাম ০/২০, উইলিয়ামসন ১/৩৯, মুনরো ০/৯)।
ফলাফল: পাকিস্তান ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: বাবর আজম (পাকিস্তান)।
Comments