ব্ল্যাকমেইল করে ২০ জনের বেশি ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ: ২ শিক্ষক আটক

স্কুলছাত্রীদের ধর্ষণের অভিযোগে র‍্যাবের হাতে আটক দুই শিক্ষক। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষককে আটক করেছে র‌্যাব-১১। তাদের মধ্যে একজন মোবাইলে আপত্তিকর ছবি তুলে ২০ জনের বেশি ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করে ধর্ষণ করেছে। আর অন্যজন অপরাধে সহযোগিতা করেছেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি কান্দাপাড়ার ‘অক্সফোর্ড হাইস্কুল’ নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের আটক করা হয়। তাদের মোবাইল ফোন থেকে ছাত্রীদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

আটককৃতরা হলেন, মাদারিপুর শিলপাড়া এলাকার মৃত নিয়াজুল ইসলামের ছেলে আরিফুল ইসলাম (৩০) ও ফরিদপুর বটচর এলাকার মৃত সৈয়দবদিন শেখের ছেলে রফিকুল ইসলাম জুলফিকার (৫৫)।

এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে র‌্যাব-১১ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক আলেপ উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের অক্সফোর্ড হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক আরিফুল ইসলাম আট বছর ধরে স্কুলটিতে অংক ও ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকতা করে আসছে। ছাত্রীদের কোচিংয়ের জন্য তার ভাড়া বাসা ছাড়াও স্কুলের পাশে বুকস গার্ডেন এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। তার স্ত্রী, সন্তান না থাকলেও ফ্ল্যাটে তিনটি বিছানা ছিল বলে জানায় ফ্ল্যাটের দারোয়ান। সেখানেই আরিফুল ইসলাম অসংখ্য ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করে আপত্তিকর ছবি তুলে ধর্ষণ করে। আর স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জুলফিকার শিক্ষক আরিফুল ইসলামকে সহযোগিতা করছিল। এসব জানতে পেরে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী স্কুলে হামলা চালিয়ে আরিফুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম জুলফিকারকে গণপিটুনি দেয়।

আলেপ উদ্দিন আরও জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে আরিফুল ইসলামকে আটক করি। তার জব্দ করা মোবাইল থেকে ছাত্রীদর ধর্ষণের ছবি ও ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে। আর সব কিছু জেনেও নীরব থেকে সহযোগিতা করায় প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জুলফিকারকে আটক করা হয়েছে।

তিনি বলেন, র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ২০ জনের বেশি ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে আরিফুল ইসলাম। এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

এলাকাবাসী জানায়, ২০০৩ সালে কান্দাপাড়া এলাকায় বাড়ি ভাড়া করে ছোট্ট একটি কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠা করেন রফিকুল ইসলাম জুলুফিকার। পরবর্তীতে স্কুলের লাভের টাকা দিয়ে বর্তমান স্কুলের জমিসহ চারতলা ভবনটি কেনেন তিনি। আর সেখানে শিশু শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণির পর্যন্ত পড়ানো হয়। আট বছর আগে এ স্কুলে অংক ও ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান আরিফুল ইসলাম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর বাবা সাংবাদিকদের জানান, তার মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় শিক্ষকের যৌন হয়রানির শিকার হয়। মেয়ে এখন ৯ম শ্রেণিতে পড়ছে। এখনও লম্পট শিক্ষক থেকে রক্ষা পায়নি। কিন্তু ঘটনার এত বছর পেরিয়ে গেলেও আমার মেয়ে বিষয়টি চেয়ে রাখায় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনি। দুদিন আগে ব্যাপারটি জানতে পেরে এলাকার যুবকদের বলেছি। এলাকাবাসী বৃহস্পতিবার দুপুরে স্কুলে যায়। তখন আরিফু ইসলাম তার মোবাইলে থাকা আপত্তিকর ছবিগুলো মুছে ফেলে। এলাকাবাসী তার মোবাইল জব্দ করে এলাকার একটি মোবাইল দোকানে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ছবিগুলো উদ্ধার করে। এসময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী দুই শিক্ষককে গণপিটুনি দেয়।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন শাহ পারভেজ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পড়ানোর সময় ব্ল্যাকমেইল করে একাধিক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের কথা এলাকাবাসী, র‌্যাব ও পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন শিক্ষক আরিফুল ইসলাম। ঘটনাস্থলে কয়েকজন ধর্ষণের মৌখিক অভিযোগ দিলেও এর আগে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।

Comments

The Daily Star  | English

All 3 major parties backed Yunus' leadership: press secretary

All three major political parties reiterated their confidence in the leadership of Chief Adviser Prof Muhammad Yunus and expressed their support for a free, fair, and peaceful election under his administration, said CA's press secretary Shafiqul Alam today. .Speaking to reporters after a s

5m ago