যখন এক বিন্দুতে মিলছে তিন দেশের সমর্থন

কোন পাকিস্তানি ভারতের জয় চাইতে পারেন? কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে এতখানি তেতো সম্পর্কের পর কোন বাংলাদেশিও কি আর ভারতের জয় চান? উপমহাদেশের এই তিনদেশের মানুষ বিলেতে একসঙ্গে উঠেবসে বটে, কিন্তু একে অন্যের সাফল্য চায় কদাচিৎ। ক্রিকেট খেলা হলে বিরোধের মাত্রা হয় আরও চড়া। কিন্তু সেই ক্রিকেটই ভিন্ন এক বাস্তবতায় সাময়িকভাবে মিলিয়ে দিয়েছে তিন দেশের সমর্থকদের।
BD, IND & PAK fan

কোন পাকিস্তানি ভারতের জয় চাইতে পারেন? কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে এতখানি তেতো সম্পর্কের পর কোন বাংলাদেশিও কি আর ভারতের জয় চান? উপমহাদেশের এই তিনদেশের মানুষ বিলেতে একসঙ্গে উঠেবসে বটে, কিন্তু একে অন্যের সাফল্য চায় কদাচিৎ। ক্রিকেট খেলা হলে বিরোধের মাত্রা হয় আরও চড়া। কিন্তু সেই ক্রিকেটই ভিন্ন এক বাস্তবতায় সাময়িকভাবে মিলিয়ে দিয়েছে তিন দেশের সমর্থকদের।

বার্মিংহামের কলেজ আর্মস বাস স্টপে বসেছিলেন বয়স্ক ভদ্রলোক। যাবেন সিটি সেন্টার। পাকিস্তানের লাহোর থেকে বছর ত্রিশেক আগে এদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। ক্রিকেট খেলার সমস্ত খবর নখদর্পণে। বিশ্বকাপের প্রতিম্যাচেরই খোঁজ রাখছেন মোহাম্মদ গুফরান। আগের দিন পাকিস্তানের জয়টা মাঠে বসেই দেখেছেন। আলাপ এগুতেই বললেন, ‘আমাদের দল কিন্তু ১৯৯২ বিশ্বকাপের ধারাতেই খেলছে...(কাকতালীয় মিল রেখে) এখন ভারতের কাছে ইংল্যান্ড হারলেই হয়।’ ভারতের জয় চাইছেন! জিজ্ঞেস করতেই মুচকি হাসিতে জবাব, ‘নিজেদের স্বার্থে চাইতে হয়। ৩০ তারিখ আমরা সবাই ভারতকে সাপোর্ট করব’।

গুফরানের পরিবার দেশভাগের সময় অমৃতসর থেকে লাহোর চলে আসে। সে হিসেবে ভারতেও তার শেকড় আছে। কিন্তু সে তো বহুযুগ আগের কথা। আদতে তো এখন তিনি পাকিস্তানি। পাকিস্তানি হয়েও ‘চিরশত্রু’ দেশের জয় চাইবার কারণ তাতে যদি সেমিফাইনালের পথটা সুগম হয় নিজেদের।

ভারত তো সেমিফাইনালে এক পা দিয়েই রেখেছে। এবার ঝুলে থাকা ইংল্যান্ডকে যদি তারা ঠেলে সরিয়ে দিতে পারে, তাহলে একটা জায়গা আরও ফাঁকা হয়ে যায়। সেখান দিয়েই যদি ঢুকে পড়া যায়।

কার্স লেনে সেলুনের কর্মী ফোরকানের কথাও তাই, ‘ভারত এখন জিতলে ভালো, আমাদের লাভ। ওদের ধরব সেমিফাইনাল বা ফাইনালে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো।’

বাংলাদেশিদের পরিস্থিতি একইরকম, তবে আরেকটু বৈচিত্র্যময়। জহির হোসেনের যেমন সোজা হিসাব, ‘ভারতের বিপক্ষে আমাদের জিততে হবে, কিন্তু তার আগে ভারতের জিততে হবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, এরপর আমরা হারাব পাকিস্তানকেও।’ ক্রিকেটীয় মাতব্বরির জন্য জহির বাদবাকি সময় কখনো ভারত সমর্থন করেন না। কিন্তু ৩০ তারিখ তিনিও চাইছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত জিতে যাক। তাহলে অন্তত একটু আশা টিকে রইবে বাংলাদেশের।

জহিরের বন্ধু শাহজাহানেরও কথা, ‘ভারত সিরিয়াসলি খেললে জিতবে, তারা শক্তিশালী দল।’ রোববার বার্মিংহামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রচুর পরিমাণ ভারতীয় তো দর্শক আসনে থাকছেনই, পরিস্থিতি আভাস দিচ্ছে পাকিস্তানি আর বাংলাদেশিদেরও সেদিন সমর্থন পাবে ভারত। স্বাগতিক দল হয়েও সেদিন তাই দর্শক সমর্থনে কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারে বরং ইংলিশরাই।

ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় এই বৃহত্তম নগরীতে অভিবাসীদের মধ্যে অধিকাংশই পাকিস্তান ও ভারতের। এদের তুলনায় বাংলাদেশি বাঙালিরা সংখ্যায় কম, কিন্তু তাও বেশ বড় কমিউনিটি। বিশ্বকাপে নিজেদের দল নিয়ে কথা আদান প্রদান, তর্ক বিতর্ক চলছে রোজই। সেমিতে উঠার গাণিতিক জটিল হিসাব সেই তর্ক থামিয়ে আপাতত সাময়িক ঐক্যের গান গাইছে।

এবার বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচের চারটা জিতে ৮ পয়েন্ট ইংল্যান্ডের, তারা আছে টেবিলের চারে। সমান ম্যাচে ৭ পয়েন্ট করে নিয়ে যথাক্রমে পাঁচ ও ছয়ে বাংলাদেশ আর পাকিস্তান। চারে জায়গা নিতে ইংল্যান্ডকে সরাতে চায় দু’দলই।

ইংল্যান্ড যদি বাকি দুই ম্যাচ ভারত আর নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে হেরে যায় তাহলেই কেবল পথ খুলবে বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের। ইংল্যান্ড কোন একটা ম্যাচ জিতে গেলেও কাজটা কঠিন হবে দুদলের। সেমিতে যেতে হলে পাকিস্তান বা বাংলাদেশকে জিততে হবে নিজেদের বাকি সব ম্যাচ। তখন ৫ জুলাই বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ পরিণত হবে অলিখিত কোয়ার্টার ফাইনালে।

এসব জটিল হিসাব তো পরে। তার আগে ইংল্যান্ডের হারা চাই, জেতা চাই ভারতের। এমনটাই চাইছেন উপমহাদেশীয় সমর্থকরা। বিশ্বকাপের বাজারও বোধহয় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কোন রোমাঞ্চের প্রত্যাশায়।

Comments

The Daily Star  | English
Dengue deaths in Bangladesh 2024

4 more die of dengue

660 patients were also hospitalised during this time

43m ago