এমন চোটে অনেকে হাঁটতেই পারে না, মাশরাফি খেলছেন!
হাঁটুর চোট তার পুরনো। সেটা সামলেই মাশরাফি বিন মর্তুজা পার করেছেন বছরের পর বছর। ভেসেছেন সাফল্যের আলোতেও। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে চোট যোগ হয় উরুর পেছনের দিকে। তাও ছিল সামলানোর মতো। কিন্তু ওই টুর্নামেন্টের ফাইনালে হ্যামস্ট্রিংয়ে নতুন করে পাওয়া চোট তাকে ভোগাচ্ছে বিস্তর। গ্রেড-২ টিয়ার মাত্রার চোট হলেও মনের জোরে তা নিয়েই খেলে যাচ্ছেন তিনি।
বিশ্বকাপে নিজের বোলিং আর চোট নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। পুরো রানআপে বোলিং করতে পারছেন না। অনুশীলনেও খাটতে পারছেন না অতো। ছয় ম্যাচে মাত্র ১ উইকেট পাওয়ায় তার পারফরম্যান্স নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে উইকেট না পাওয়ায় ভাগ্যকে দুষছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। চোট আর পারফরম্যান্সের গ্রাফ নিয়ে কীভাবে লড়াই চালাচ্ছেন তিনি?
চোটের হালচাল বোঝাতে ফিরে গেলেন আয়ারল্যান্ড সফরে সময়টায়, ‘আমার শরীর ঠিক ছিল। কিন্তু আয়ারল্যান্ডে এত ঠাণ্ডা ছিল। আমার তো মূলত সমস্যা হাঁটুতে। আয়ারল্যান্ডে যোগ হয় গ্লুটজে। ওটাও সামলানোর মত ছিল। কিন্তু ফাইনালে ম্যাচে গিয়ে চোট পাই হ্যামস্ট্রিংয়ে। ওটা আমাকে কাবু করে দিয়েছে। কিন্তু বিশ্বকাপের মতো জায়গায় এসে আর ওটা নিয়ে ভাবিনি। ওটা নিয়েই খেলে গেছি। ম্যানেজ করে খেলছি মানে ভাবি না, আমার একটা ব্যাপার হলো ব্যথাটা নিতে পারি মাথায়। আমি জানি আমার খেলতে গেলে ওইগুলা সামলাতে হবে। মানসিকভাবে আমি ওইভাবে নিয়েছি আরকি।’
হ্যামস্ট্রিংয়ের এই চোট আসলে কোন মাত্রার? স্ক্যান করলে যদি বড় কিছু ধরা পড়ে তাই ও পথে যাননি মাশরাফি। তবে খালি চোখের দেখায় ফিজিও থিহান চন্দ্রমোহনের মনে হয়েছে এটা গ্রেড-২। এই চোটে খেলা দূরে থাকা, অনেকের হাঁটাচলাতেও সমস্যা হয়, ‘আমাকে ফিজিও যেটা বলছে গ্রেড-২। পরীক্ষা করা হয়নি যদিও। গ্রেড-২ হলে অনেকে হাঁটতেও পারে না। আমি খেলতে পারছি। তারমানে এক্সট্রিম পর্যন্ত আমি নিতে পারছি। তবে আমাকে ভোগাচ্ছে। ভোগাচ্ছে না তা না। আমি শর্ট রানআপে বোলিং করছি। আমি আসলে হাল ছেড়ে দিতে চাই না। ব্যথা করে। কিন্তু মাথায় নিতে চাই না। এটা হয়ত ক্যারিয়ারের শেষ দিক তাই যা আছে তা নিয়েই খেলে যেতে চাইছি।’
চোট ভোগাচ্ছে, সে কারণেই কি বোলিংটা হচ্ছে না ঠিকমতো? মাশরাফি অবশ্য তা মনে করেন না, ‘উইকেট পেতে ভাই ভাগ্য লাগে। অজুহাত দিব না। যখন পেয়েছি (উইকেট) তখনো এই কথাই বলেছি, এখনো তাই বলব। ছয় ম্যাচে ছয় উইকেট পাওয়ার মতো একটা বলও কি আমার হয়নি? হয়েছে তো। কিন্তু ভাগ্য পক্ষে ছিল না। অনেক সময় তো ফুলটস বলেও উইকেট পাওয়া যায়। ভালো বোলিং এক জিনিস, উইকেট পাওয়া আরেক জিনিস। স্রেফ উইকেটের কথা বললে আমার ভাগ্য নাই।’
অবশ্য ভাগ্যকে দোষতেও পারেন মাশরাফি। টুর্নামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ দুই ধাপে তার বোলিং থেকে খসেছে একাধিক ক্যাচ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শুরুতে দারুণ বল করলেও জেসন রয়ের ক্যাচ পড়েছে মাশরাফির বলে। রয় পরে সেট হয়ে চালান তাণ্ডব, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ১০ রানেই ডেভিড ওয়ার্নারকে কাবু করেছিলেন মাশরাফি। পয়েন্টে সেই ক্যাচ রাখতে পারেননি সাব্বির রহমান। পরে ওয়ার্নারই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন বাংলাদেশকে।
উইকেট পাচ্ছেন না। কিন্তু বোলিংটাও থাকেনি ধারাবাহিক। জায়গা বল করতে না পারায় মার খেয়েছেন। কোটা পূরণ করতে পারেননি। বোলিং ঠিকমতো না হলে অনুশীলনে খাটুনি বাড়ানোর অভ্যাস তার। এমনিতে করেন প্রচুর স্পট বোলিং অনুশীলন। কিন্তু চোটের কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জিমের পরিমাণ বাড়িয়ে শরীরকে পোক্ত রাখার মরিয়া চেষ্টা করছেন। আপাতত উইকেট পাওয়া ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে জায়গায় বল ফেলার পর জোর দিচ্ছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘গত তিন চার ম্যাচে জায়গায় বল করার হার বেড়েছে। উইকেটের হিসাবে হয়ত শূন্য। কিন্তু জায়গায় ফেলার হার বাড়ছে। ’
Comments