নিয়মরক্ষার ম্যাচে উইন্ডিজকে হারাল শ্রীলঙ্কা
শেষ বার বোলিং করেছিলেন ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। লম্বা সময় পর আবার বল হাতে নিলেন শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। প্রথম বলেই তৈরি করে দিলেন জয়ের রাস্তা। আউট করলেন সেঞ্চুরিয়ান নিকোলাস পুরানকে। এ ব্যাটসম্যানই লঙ্কানদের জয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তার প্রতিরোধ ভেঙে নিয়মরক্ষার ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ২৩ রানের দারুণ জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা।
ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে ক্যারিবিয়ানদের একাই টানছিলেন পুরান। খেলেছেন ১১৮ রানের দারুণ এক ইনিংস। ১০৩ বলে ১১টি চার ও ৪টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা শেষ দিকে উইন্ডিজের ভরসা হয়ে ছিলেন তিনি। তার বিদায়ের পর প্রতিষ্ঠিত কোন ব্যাটসম্যান না থাকায় আর কুলিয়ে উঠতে পারেনি ক্যারিবিয়ানরা।
তবে মাঠে বেশ কিছু ক্যাচ মিস করেছে শ্রীলঙ্কান ফিল্ডাররা। পুরানকেও জীবন দিয়েছেন। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে দারুণ ছিল দলটি। কার্যকরী ৩টি রানআউট করেছে তারা। যদিও ভাগ্যও সঙ্গ দিয়েছে বেশ। কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের উইকেটটা অবিশ্বাস্যভাবেই রান করেছেন উদানা। তবে শেষ পর্যন্ত জয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে পেরেছে এশিয়ার দলটি।
লক্ষ্য তাড়ায় অবশ্য শুরুটা ভালো হয়নি উইন্ডিজের। দলীয় ২২ রানেই দুই উইকেট হারিয়ে বড় চাপে পরে দলটি। তবে তৃতীয় উইকেটে শিমরন হেটমায়েরকে দলের হাল ধরেন অভিজ্ঞ ক্রিস গেইল। ৪৯ রানের জুটি গড়ার পর তরুণ রাজিথার বলে সাজঘরে ফেরেন গেইল। এরপর রানআউটে কাটা পরে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি হেটমায়েরও। ফলে আবারও চাপে পরে যায় দলটি।
এরপর এক প্রান্তে দারুণ ব্যাটিং করে ইনিংস মেরামতের কাজে নামেন নিকোলাস পুরান। পঞ্চম উইকেটে অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের সঙ্গে ৬১ ও ষষ্ঠ উইকেটে ব্র্যাথওয়েটকে নিয়ে ৫৪ রানের জুটি গড়েন তিনি। তবে দলে জয়ের ভিতটা গড়ে দেন সপ্তম উইকেটে ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে নিয়ে। স্কোর বোর্ডে ৮৩ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটসম্যান। ভুল বোঝাবুঝির জেরে নিজের উইকেট বিসর্জন দিয়ে সাজঘরমুখী হন অ্যালেন। ৩২ বলে ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩১৫ রান করে থামে উইন্ডিজ।
এদিন টস জিতেছিল উইন্ডিজই। বেছে নেয় ফিল্ডিং। আগে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই দারুণ খেলতে থাকে শ্রীলঙ্কা। দুই ওপেনার কুশল পেরেরা ও অধিনায়ক দিমুথ কারুনারাত্নের দারুণ ব্যাটিংয়ে উড়ন্ত সূচনা পায় দলটি। ওপেনিং জুটিতে স্কোর বোর্ডে ৯৩ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটসম্যান। এরপর অবশ্য দ্রুত দুই ওপেনারকে হারিয়ে ম্যাচে ফেরে ক্যারিবিয়ানরা। ৫১ বলে ৬৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন কুশল পেরেরা। কারুনারাত্নের ব্যাট থেকে আসে ৩২ রান।
তৃতীয় উইকেটে কুশল মেন্ডিসকে নিয়ে দলের হাল ধরেন আভিস্কা ফের্নান্ডো। গড়েন ৮৫ রানের আরও একটি দারুণ জুটি। ফ্যাবিয়েন অ্যালেনের দুর্দান্ত এক ক্যাচে মেন্ডিস ফিরলে ভাঙে এ জুটি। ব্যক্তিগত ৩৯ রানে বিদায় নেন মেন্ডিস। এরপর উইকেট আসেন সাবেক অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। চতুর্থ উইকেটে ৫৮ রান যোগ করেন ফের্নান্ডোর সঙ্গে।
এ জুটি ভাঙার পর থিরিমান্নেকে নিয়ে আরও একটি দারুণ জুটি গড়েছেন ফের্নান্ডো। স্কোর বোর্ডে ৬৭ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটসম্যান। ফলে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৩৮ রান করে শ্রীলঙ্কা। ৩৩ বলে ৪৫ রান করে অপরাজিত থাকেন থিরিমান্নে।
তবে শ্রীলঙ্কার ইনিংসের মূল ভিত্তি গড়েছেন ১৯ বছর বয়সী আভিস্কা ফের্নান্ডো। তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। রানের গতি সচল রেখে শুরু থেকেই দারুণ ব্যাট করে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১০৪ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। ১০৩ বলে ৯টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে এ রান করেন এ তরুণ।
৮ ম্যাচে শেষে শ্রীলঙ্কার পয়েন্ট ৮। পয়েন্ট তালিকার ছয় নম্বরে তারা। সমান ম্যাচে মাত্র ৩ পয়েন্ট নিয়ে নয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ৩৩৮/৬ (কারুনারাত্নে ৩২, পেরেরা ৬৪, ফের্নান্ডো ১০৪, মেন্ডিস ৩৯, ম্যাথিউজ ২৬, থিরিমান্নে ৪৫*, উদানা ৩, ধনাঞ্জয়া ৬*; কটরেল ১/৬৯, থমাস ০/৫৮, গ্যাব্রিয়েল ০/৪৬, হোল্ডার ২/৫৯, ব্র্যাথওয়েট ০/৫৩, অ্যালেন ১/৪৪)।
উইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ৩১৫/৯ (গেইল ৩৫, আমব্রিস ৫, হোপ ৫, হেটমায়ের ২৯, পুরান ১১৮, হোল্ডার ২৬, ব্র্যাথওয়েট ৮, অ্যালেন ৫১, কটরেল ৭*, থমাস ১, গ্যাব্রিয়েল ৩*; মালিঙ্গা ৩/৫৫, ধনাঞ্জয়া ০/৪৯, উদানা ০/৬৭, রাজিথা ১/৭৬, ভ্যানডারসে ১/৫০, কারুনারাত্নে ০/৭, ম্যাথিউজ ১/৬)।
ফলাফল: শ্রীলঙ্কা ২৩ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আভিস্কা ফের্নান্ডো (শ্রীলঙ্কা)।
Comments