সামর্থ্যে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ
ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বৈরথের নাম- ভারত বনাম পাকিস্তান। দুই বৈরি প্রতিবেশী দেশের ম্যাচ হলেই উত্তেজনায় কাঁপতে থাকেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই চলে কথার লড়াই। খেলোয়াড়, কোচ, বোর্ড কর্মকর্তা কেউই বাদ যান না তর্কযুদ্ধে অংশ নিতে। কারণ এ ম্যাচের সঙ্গে কেবল মাঠের জয়-পরাজয়ই জড়িয়ে থাকে না, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে দুদলের জন্য এটা মর্যাদার লড়াই। এই লড়াইয়ে 'হার' নামক শব্দটার যেন কোনো অস্তিত্ব নেই!
কালের পরিক্রমায় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আবেদন বেশ কমেছে। পাকিস্তানের আগের মতো শক্তিশালী দল না থাকায় একপেশেই হয় অধিকাংশ ম্যাচ। ভারত যেতে অনায়াসে। ফলে অনেকাংশে এই জায়গাটা বর্তমানে দখল করে নিয়েছেন ভারত বনাম বাংলাদেশ ম্যাচটি। শুধু পাকিস্তানের দুর্বলতার জন্যই এমনটা ঘটেছে, তা ভাববার অবকাশ নেই। বাংলাদেশের শেষ কয়েক বছরের পারফরম্যান্স ও উন্নতির গ্রাফটা চোখে পড়ার মতো। তাই সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথকেও টেক্কা দেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায় ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে।
পাকিস্তানের কাছে হারটা যেমন ভারতের কাছে কাম্য নয়, সেই তালিকায় তেমনি নতুন একটি নাম হিসেবে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশও। এটাও এখন মর্যাদার লড়াই। এই ম্যাচের আগে দুদেশের সমর্থকরা যেভাবে একে অপরকে তির্যক বাক্যবাণে জর্জরিত করেন, তাতে ম্যাচ নিয়ে তৈরি হয় বাড়তি উত্তেজনা-রোমাঞ্চ। তাছাড়া ক্রিকেট ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলা। তাই দেশটির গণমাধ্যম সবসময়ই থাকে সরব। ফলে বাড়তি একটা চাপ থাকে তাদের ওপর। 'স্নায়ুচাপ'টা নিঃসন্দেহে এবারও থাকবে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়।
বিশ্বমঞ্চে আরও একবার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। এখন পর্যন্ত দুদলই খেলেছে সমান সাত ম্যাচ। ১১ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনাল প্রায় নিশ্চিত ভারতের। আর ৭ পয়েন্ট নিয়ে এখনও সেরা চারের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ের ভেন্যু বার্মিংহামের এজবাস্টনে। মঙ্গলবার (২ জুলাই) এই মাঠে বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায় শুরু হবে খেলা। সেমিফাইনালে খেলতে হলে এ ম্যাচে ভারতকে হারানো ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই টাইগারদের অর্থাৎ ম্যাচটা 'ডু অর ডাই'।
ভারত শক্তিশালী দল। বাংলাদেশকেও পিছিয়ে রাখার উপায় নেই। দুদলের দলীয় শক্তি-দুর্বলতার পাশাপাশি এজবাস্টনের উইকেটও এ ম্যাচের ফল গড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। নজর দেওয়া যাক সেসব বিষয়ের দিকে।
মাঠের আকৃতি:
এজবাস্টনের মাঠের আকৃতি নিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের আগের ম্যাচ শেষে প্রশ্ন তুলেছিলেন ভারতীয় দলনেতা বিরাট কোহলি। একদিকের বাউন্ডারি সর্বোচ্চ ৮২ মিটার হলেও আরেক দিকে সর্বনিম্ন ৫৯ মিটারের বাউন্ডারি রয়েছে। কোহলির আপত্তির জায়গা ছিল সেখানেই। এই ছোট বাউন্ডারি ভাবাচ্ছে বাংলাদেশকেও।
এজবাস্টনের উইকেট আবার ফ্ল্যাট (পাটা), যা রান তোলার বিশেষ উপযোগী। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা মন্থর হয়ে আসে। কিন্তু একদিকে বাউন্ডারি ছোট হওয়ায় স্পিনাররা খুব বেশি সুবিধা করতে পারেন না। বলে-ব্যাটে সংযোগটা মোটামুটি হলেই ছয় নিশ্চিত। ইংলিশদের বিপক্ষে ভারতের দুই স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল ও কুলদীপ যাদব মিলে ২০ ওভারে দিয়েছিলেন ১৬০ রান।
যেহেতু ভারতের ব্যাটসম্যানরা স্পিন খেলায় বিশেষ পারদর্শী এবং উইকেট তাদের চেনা (আগের ম্যাচের উইকেট ব্যবহৃত হবে এ ম্যাচেও), তাই বাংলাদেশের স্পিনারদের কঠিন পরীক্ষাই দিতে হতে পারে। আর আগের ম্যাচের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে একই পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে চাহাল-কুলদীপদের।
ভারতের মিডল অর্ডার:
টপ অর্ডারের মতো শক্তিশালী নয় ভারতের মিডল অর্ডার। ব্যাটিং লাইনআপের শুরুতে লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা ও অধিনায়ক কোহলি থাকলেও পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা তেমন ভালো করতে পারেননি এবারের আসরে।
মিডল অর্ডারে ভরসা দেওয়ার জন্য অভিজ্ঞ মহেন্দ্র সিং ধোনি থাকলেও বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান করতে পারছেন না তিনি। ধীরগতিতে ব্যাটিংয়ের জন্য আসর চলাকালেই বেশ কয়েকটি ম্যাচে (আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে) সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। চার নম্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে ভারতের কেউ এখনও থিতু হতে পারেননি। বিজয় শঙ্কর চোটের কারণে ছিটকে যাওয়ায় ইংলিশদের বিপক্ষে এই পজিশনে খেলেছিলেন তরুণ ব্যাটসম্যান রিশভ পান্ট।
ভারতের মিডল অর্ডারে হার্দিক পান্ডিয়া ও কেদার যাদবও আছেন। হার্দিক ইনিংসের শেষ ভাগে বেশ কয়েকটি ক্যামিও ইনিংস খেললেও কেদার নিজেকে আলাদা করে চেনানোর মতো কিছু করে দেখাতে পারেননি। ভারতের এই দুর্বল জায়গাটি থেকে সুবিধা আদায় করে নিতে পারে বাংলাদেশ।
ভারতের পেস বোলিং:
নিঃসন্দেহে ভারতের পেস আক্রমণ বিশ্বের অন্যতম সেরা। শেষ তিনটি ম্যাচে দলের নিয়মিত পেসার ভুবনেশ্বর কুমারকে ছাড়াই খেলেছে দলটি। চোট পাওয়া ভুবনেশ্বরের জায়গায় একাদশে ঢুকে ৩ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ শামি। তিনি আফগানিস্তানের বিপক্ষে করেন হ্যাটট্রিক, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নেন ৫ উইকেট। এতেই ধারণা মেলে ভারতের পেস আক্রমণ সম্পর্কে।
তাছাড়া ভারতীয় শিবিরে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর বোলার জাসপ্রিত বুমরাহ তো আছেনই। উইকেট শিকার করা-রানের লাগাম আটকে রাখায় তার জুড়ি মেলা ভার। চতুর্থ পেসার হিসেবে হার্দিক পান্ডিয়াও দারুণ খেলছেন বিশ্বকাপে।
ভালো মানের পেসারদের সহায়তা করার জন্য ভারতীয় দলে দুই রিস্ট স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল ও কুলদীপ যাদবও আছেন। এমন একটি শক্তিশালী বোলিং ইউনিটের বিপরীতে বড় স্কোর গড়াটা যে কোনো দলের জন্যই কঠিন। তবে এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশকেও হালকা করে দেখার উপায় নেই। নতুন বলের সুবিধাটা এখনও আদায় করতে না পারলেও মোস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন সমান ১০ উইকেট করে নিয়েছেন। তাদের কাজটা সহজ করতে সাকিব আল হাসান তো আছেনই।
পরিসংখ্যান:
মোট ম্যাচ: ৩৫, বাংলাদেশ জয়ী: ৫, ভারত জয়ী: ২৯, টাই: ০, পরিত্যক্ত: ১।
বিশ্বকাপ পরিসংখ্যান:
মোট ম্যাচ: ৩, বাংলাদেশ জয়ী: ১, ভারত জয়ী: ২।
Comments