রোমাঞ্চকর লর্ডসে বিষণ্ণতার রেশ

Steve Rhodes-Mashrafe

লর্ডসে ঢুকে সাংবাদিকরা তো বটেই রোমাঞ্চ লুকোতে পারলেন না ক্রিকেটাররাও। যারা প্রথমবার এসেছেন তারা তো থাকবেনই, আগেও যারা এসেছেন তারাও যেন শিহরিত! ক্রিকেটের তীর্থস্থান বলে কথা! বিখ্যাত ব্যালকনিতে, যেখানে দাঁড়িয়ে সৌরভ গাঙ্গুলি জার্সি খুলে নাচিয়েছিলেন। তাই মেহেদী হাসান মিরাজ, সৌম্য সরকারদের ছবি তোলা চলল। প্যাভিলিয়ন আর প্রেসবক্স পেছনে রেখে সাংবাদিকদেরও চলল স্মৃতি ধরে রাখার আয়োজন। কেউ কেউ বিখ্যাত সব ম্যাচের স্মারকে ভরা মিউজিয়ামে ঢুঁ মারলেন। বাংলাদেশ দলের অনুশীলনের ফাঁকে-ফোকরে লর্ডসের আভিজাত্য আর ঐতিহ্যই গায়ে মাখছিলেন সবাই। নিয়মরক্ষার ম্যাচের আগে সবই চলছিল ঢিমেতালে। তবে একজনের জন্য রোদ ঝলমলে এমন দিনেও গোটা পরিবেশেই থাকল একটা বিষণ্ণতার রেশ।

সকাল থেকেই তার দেখা মিলছিল না। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা আসলে কোথায়? অনুশীলনে তো নামেনইনি, সংবাদ সম্মেলনেও আসেননি। মাঠে এসেও নিজেকে কোন আড়ালে গুটিয়ে রেখেছিলেন, কেউ দেখতে পায়নি। মুখে শুকনো হাসি নিয়ে একবার ব্যালকনিতে বেরিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে ছবি তুলেছেন। মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কোচের সঙ্গে কি একটা বিষয় নিয়ে আলাপ করেছেন। পুরো দিনে তাকে দেখা গেছে এরকম দু-এক পলক। অনেকটা নিজেকে লুকিয়ে রাখার যেন প্রাণান্তকর চেষ্টা!

কিন্তু মাশরাফি তো এই চরিত্রের মানুষ নন। সারাক্ষণই প্রাণখোলা এমন মানুষের মনের ভেতরে কোন পর্যায়ের ঝড় চললে অমন গুটিয়ে যেতে পারেন!

বাতাসে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে, লর্ডসেই ইতি টানছেন মাশরাফি। যদিও দেশে ফিরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরিস্থিতি যেন সেই সুযোগ তাকে দিতে চাইছে না। মাশরাফি ‘বিদায়’ বলে ফেলুন, এইজন্য যেন তর সইছে না কারও! বিশ্বকাপে দুই-তিন ম্যাচ যাওয়ার পরই ধীরলয়ে আওয়াজ উঠেছিল। ভারতের কাছে হেরে ছিটকে যাওয়ার পর সেই আওয়াজ হয়েছে চড়া। নানান তেতো কথায় গলা ভারী করতে হবে বলেই হয়তো আসেননি গণমাধ্যমের সামনে।

সাত ম্যাচে কেবল ১ উইকেট পেয়েছেন। বোলিংয়ে ধার নেই। কেন আর তবে খেলা চালিয়ে যাবেন? এই প্রশ্ন প্রকট। এতটা বছর ধরে দুই পায়ে অসংখ্য চোট নিয়ে খেলে গেছেন, সাফল্যও এসেছে। মিলেছে বাহবা। সংকট বইবার সামর্থ্যের কারণেই বিশ্বকাপে হ্যামস্ট্রিংয়ের বাজে চোটকেও তোয়াক্কা করেননি। চোট উপেক্ষা করে বরাবরই দেশের নামে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, এবার কি করে তবে পিছু হটেন? কিন্তু শরীর সব বারই মেনে নিলেও এবার কেন বিদ্রোহ করবে না? করলও বটে, তাতে মাশরাফি কাবু। এত হ্যাপা নিয়ে বোলিংটা হয় না। হলোও না।

এতদিন বিশ্বকাপ লক্ষ্য রেখে খেলা চালিয়ে গেছেন। ঘনিষ্ঠজনরা এবার পরামর্শ দিচ্ছেন, সামনে তো বড় কোনো ইভেন্ট নেই। তবে কিসের জন্য আর অপেক্ষা। বরং বাইশ গজ থেকে বিদায়ই বলা যাক। চাইলে অবশ্য ঘরের মাঠে কোনো সিরিজ আয়োজন করে বিদায় মঞ্চ বানানো যায়। কিংবা চলতি মাসের শেষে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে টি-টোয়েন্টির মতো ওয়ানডেকেও বলা যায় ‘গুডবাই’। কিন্তু লঙ্কনদের মাটিতে ওই ম্যাচে বিশ্বকাপের মঞ্চ কিংবা লর্ডসের আভিজাত্যের পরশ কি আর একবিন্দুতে মেলে?

বাংলাদেশ-পাকিস্তান নিয়মরক্ষার ম্যাচটাই এখন মাশরাফি অবসর নিচ্ছেন না-কি নিচ্ছেন না, এই প্রশ্নে বন্দি। টি-টোয়েন্টির মতো টস করতে গিয়েই কি ঘোষণাটা দেবেন না-কি ম্যাচ খেলে এসে সম্পর্ক চুকানোর কথা বলবেন ১৮ বছরের দীর্ঘ পথচলার? নাকি গুঞ্জন মিথ্যা প্রমাণ করে ফিরবেন দেশে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে আর কয়েক ঘন্টারই তো অপেক্ষা।

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

3h ago