গোটা টুর্নামেন্টেই প্রশ্নবিদ্ধ তামিমের অ্যাপ্রোচ

পরিসংখ্যান বলছে, এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তৃতীয় সেরা রান সংগ্রহ করা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। অবিশ্বাস্য ছন্দ দেখানো সাকিব আল হাসান আর বিরতি দিয়ে রান পাওয়া মুশফিকুর রহিমের পরেই তিনি। ৮ ম্যাচে করেছেন ২৩৫ রান, গড় ২৯.৩৭। তার পাড় ভক্তরা এই পরিসংখ্যান নিয়ে আহ্লাদিত হতে পারেন। আগের কোনো বিশ্বকাপেই তো এতরান করতে পারেননি তামিম। কিন্তু এই রানের পাশেই যে মুচকি হাসছে ৭১.৬৪ স্ট্রাইক রেট। স্ট্রাইক রেটের কথাও না হয় তুলে রাখা যাক। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুসারে সেটাও তো আলাদা দাবি মেনে চলে। কেবল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ ছাড়া বাকি সব ম্যাচে পরিস্থিতির বিচারেও দলের চাহিদা কতটা মিটিয়েছেন তামিম?
Tamim Iqbal
ছবি: রয়টার্স

পরিসংখ্যান বলছে, এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তৃতীয় সেরা রান সংগ্রহ করা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। অবিশ্বাস্য ছন্দ দেখানো সাকিব আল হাসান আর বিরতি দিয়ে রান পাওয়া মুশফিকুর রহিমের পরেই তিনি। ৮ ম্যাচে করেছেন ২৩৫ রান, গড় ২৯.৩৭। তার পাড় ভক্তরা এই পরিসংখ্যান নিয়ে আহ্লাদিত হতে পারেন। আগের কোনো বিশ্বকাপেই তো এতরান করতে পারেননি তামিম। কিন্তু এই রানের পাশেই যে মুচকি হাসছে ৭১.৬৪ স্ট্রাইক রেট। স্ট্রাইক রেটের কথাও না হয় তুলে রাখা যাক। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুসারে সেটাও তো আলাদা দাবি মেনে চলে। কেবল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ ছাড়া বাকি সব ম্যাচে পরিস্থিতির বিচারেও দলের চাহিদা কতটা মিটিয়েছেন তামিম?

প্রতিপক্ষ- দক্ষিণ আফ্রিকা

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একদম প্রথম ম্যাচে দারুণ জয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন। সে ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৮.২ ওভারে আসে ৬০ রান। একপাশে সৌম্য সরকারের (৩০ বলে ৪২) আগ্রাসী শুরুর পাশে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন তামিম। পরে ডানা ঠিকই মেলবেন– ভক্তদের এই অপেক্ষায় জল ঢেলে আশাহত করে থামান দৌড়। ২৯ বলে ১৬ রান। ওই ইনিংসে ব্যাট করতে নামা বাকিদের প্রায় অর্ধেক (৫৫.১৭) স্ট্রাইক রেট ছিল তামিমের। বাকি সবাই এতটাই সাবলীল ছিলেন বলে রক্ষা। তামিমের ইনিংস তাই প্রভাব ফেলেনি ম্যাচে। দল ঠিকই ৩৩০ করে জিতে যায় ২১ রানে।

প্রতিপক্ষ- নিউজিল্যান্ড

এই ম্যাচেও দেখেশুনে সময় নিয়ে শুরু করেছিলেন তামিম। আরেক পাশে সৌম্যর সাবলীল ব্যাটিং টেকেনি বেশিক্ষণ। তামিম রয়ে-সয়ে থেকেও টেকেননি। এই ইনিংসে ৩৮ বলে করেন ২৪। সৌম্য ফেরেন ২৫ বলে ২৫ করে। এদিন শেষেও ঝড় ওঠেনি। কিছুটা মন্থর উইকেটে ২৪৪ করে খেলা জমিয়েও আফসোস বাড়ে বাংলাদেশের। ম্যাচ শেষে উইকেট বুঝতে ভুল করার হা-হুতাশ শোনা গেছে দলের। ব্যাটিংয়ের ধরনের সুবিধা নিয়ে এমন উইকেটে সেদিন লম্বা সময় ব্যাট করার সুযোগ নিতে পারতেন তামিম।

প্রতিপক্ষ- ইংল্যান্ড

লক্ষ্য ৩৮৭। পাটা (ফ্ল্যাট) উইকেট হলেও সামর্থ্যের বিচারে তাড়া করা প্রায় অসম্ভব। তাই বলে চেষ্টা করা তো আর অসম্ভব না। এমন পাহাড় তাড়ায় শুরুতেই নেই সৌম্য। দল ভূমিকা দিয়েছে সৌম্যকে এক পাশে মারার, আরেক পাশে তামিমকে ধরে খেলার। সৌম্য যখন শুরুতে আউট তখনও কি ভূমিকা বদলাবে না? তামিম করলেন ২৯ বলে ১৯। ডট বলে নিজেকে জড়সড় রাখলেন পুরোটা সময়। ধুঁকে ধুঁকে আউট হলেন। তার আগে চাপ বাড়িয়ে গেলেন বাকিদের ওপর।

প্রতিপক্ষ- ওয়েস্ট ইন্ডিজ

পুরো বিশ্বকাপে এই একটা ম্যাচে তামিমকে পাওয়া গেল ফুরফুরে মেজাজে। উইন্ডিজ ৩২১ রান তোলার পর তার ব্যাটেই মূলত লক্ষ্য তাড়ার বারুদ পায় বাংলাদেশ। এদিন সৌম্য ২৩ বলে ২৯ করে ফেরার পর তার ভূমিকাটাই নিতে পেরেছিলেন তামিম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট না হলে ৫৩ বলে ৪৮ রানের ইনিংস পাখা মেলতে পারত অনেক দূর।

প্রতিপক্ষ- অস্ট্রেলিয়া

টুর্নামেন্টে একমাত্র ফিফটি এই ম্যাচেই করেছিলেন তামিম। কিন্তু তিনি নিজেও কি এই ইনিংসে সন্তুষ্ট থাকবেন? শুরুটা করেছিলেন ধীর লয়ে। প্রথম ৪৪ বলে করেন ২৮ রান। পরে গতি বাড়িয়েছেন, ৬৫ বলে পৌঁছান ফিফটিতে। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে কিসের জন্য ব্যাট করছিল বাংলাদেশ? এই পর্যায়ে এসে সম্মানজনক হার? না হলে ৩৮২ রান তাড়ায় তার অ্যাপ্রোচ কি যথেষ্ট ইতিবাচক ছিল? তেড়েফুঁড়ে না মারুন, কিন্তু এক-দুই করে চাকা সচল রাখতেও পারেননি। মেরে-টেরে যখন শুরুর মন্থর অবস্থা পুষিয়ে দেওয়ার কথা তখনই আউট হয়েছেন। ৭৪ বলে ৬২ রানের এই ফিগার এমনিতে বেশ জুতসই লাগতে পারে। কিন্তু ৩৮২ রানের লক্ষ্যে খেলা একটা দলের ওপেনারের এমন রয়ে-সয়ে খেলার অর্থটা বোঝা দুষ্কর।

প্রতিপক্ষ– আফগানিস্তান

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের উইকেটের বিচারে তামিমকে হয়তো অনেকেই একেবারে ব্যর্থ বলবেন না। অফ স্পিন দেখে শুরুতে স্ট্রাইক নেননি, রক্ষণে গিয়ে জুতসই রান তোলার তাড়না ছিল। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে মন্থর উইকেটে সেই চিন্তাটা হয়তো খারাপ ছিল না। শুরুতে ধুঁকলেও পরে সামলে ঠিকই বাড়াতে পারছিলেন রান। কিন্তু ওই অফ স্পিনেই হয়েছে সর্বনাশ। ৫৩ বলে ৩৬ রানের ইনিংসটা অনায়াসে ৬০-৭০ রানের হতে পারত। থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে না পারা যে তার মানের ব্যাটসম্যানের সঙ্গে বড্ড বেমানান, নিশ্চয়ই নিজেও তা বোঝেন।

প্রতিপক্ষ- ভারত

ভারতের বিপক্ষে অনেক চাপ ছিল তামিমের মাথার ওপর। ফিল্ডিংয়ে রোহিত শর্মার লোপ্পা ক্যাচ ছেড়ে সমর্থকদের কাছে প্রায় ‘ভিলেন’ বনে ব্যাট করতে নেমেছিলেন। রোহিতের ক্যাচ ফেলার মূল্য কেবল ব্যাট হাতেই পুষিয়ে দিতে পারতেন। স্ট্রাইক নিয়ে খেলে সেটা শুরুও করেছিলেন। তামিমের দুর্ভাগ্য। প্রতিদিন ছোট ইনিংস খেললেও মেরেকেটে রানের চাপ কমান সৌম্য। এদিন সৌম্যও শুরু থেকে খোলসে বন্দি। চাপ তাই কুলিয়ে উঠতে পারলেন না তামিম। মোহাম্মদ শামির নিচু হওয়া বল স্টাম্পে টেনে বোল্ড হয়ে যখন ফিরছেন, তখন গেল চার বছরে তার ভুরি ভুরি রানও আর ঢাল হয়ে যেন দাঁড়াতে পারছিল না।

প্রতিপক্ষ- পাকিস্তান

পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করলেও আগের সব ব্যর্থতা আড়াল করা যেত না। সেমির আশা ফুরিয়ে যাওয়ার পর থাকত তবু সান্ত্বনা। দলের জন্য না হলেও নিজের পথচলার বিশ্বাসের জন্য সেই সান্ত্বনা দরকার ছিল খুব। অথচ এদিন তামিম খেললেন সবচেয়ে আপত্তিকর খেলা। কোনো তাড়নাই দেখা গেল না তার মধ্যে। অফ স্পিন দেখেই ভয়ে গুটিয়ে যেতে হয়, এমন অ্যাপ্রোচে মেডেন দিয়ে শুরু। একের পর এক ডট বলে নাজেহাল হয়েছেন। ৩১৬ রান তাড়ায় দলের ওপর চাপ বাড়িয়েছেন। তার অ্যাপ্রোচে পাক বোলাররা পেয়েছেন তেতে ওঠার বারুদ। ২১ বলে ৮ রান করে আগের ম্যাচের মতোই স্টাম্পে টেনে বোল্ড হয়ে যেন নিস্তার পেলেন তামিম!

দল না-কি তাকে এক পাশে ধরে ৪০ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করার গ্যারান্টি দিয়েছে। তাই শুরুতে সময় নেন তামিম। কিন্তু সেই সময় নিতে নিতেই ফুরিয়ে গেছে তার জ্বলে উঠার সময় । ৪০ ওভার ব্যাট করা তো দূরের কথা, তামিম যতক্ষণ ব্যাট করেছেন ততক্ষণ তার ডট বলের পসরা চাপ বাড়িয়েছে বাকিদের ওপর।

কোনো ব্যাটসম্যান কত রান করলেন তার চেয়ে কীভাবে তা করলেন আর ওই রান দলের কতটুকু কাজে দিল, সেটাই তো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেটীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ‘ইমপ্যাক্ট রান’। তামিমের ২৩৫ রানের মধ্যে ঠিক কত রান আসলে দলের ওপর ইতিবাচক ‘ইমপ্যাক্ট’ ফেলেছে? বিশ্বকাপের পর এই প্রশ্ন জোরালো হওয়া কি খুব অযৌক্তিক?

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago