মেয়রের ‘চা’র আমন্ত্রণ-পুলিশের ‘আশ্বাস’ দিনভর রিকশা চালকদের অবরোধ

আলোচনার মাধ্যমে রিকশা চালকদের আন্দোলন থেকে সরিয়ে আনতে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। অবরোধ তুলতে পুলিশের পক্ষ থেকেও কিছু আশ্বাসের কথা শোনানো হয়েছে। এভাবে কিছু জায়গা থেকে আন্দোলনকারীদের পুলিশ সরাতে পারলেও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ তিন সড়কে দিনভর অবরোধ চলেছে।
রিকশা চালকদের অবরোধের কারণে হাতিরঝিল ইউলুপের নিচের সড়কে নেই কোনো যানবাহন। ছবি: প্রবীর দাশ

আলোচনার মাধ্যমে রিকশা চালকদের আন্দোলন থেকে সরিয়ে আনতে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। অবরোধ তুলতে পুলিশের পক্ষ থেকেও কিছু আশ্বাসের কথা শোনানো হয়েছে। এভাবে কিছু জায়গা থেকে আন্দোলনকারীদের পুলিশ সরাতে পারলেও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ তিন সড়কে দিনভর অবরোধ চলেছে।

সাধারণ মানুষকে জিম্মি না করে রিকশা চালক ও মালিকদের আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। সকালে সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠান শেষে মেয়র বলেন, “রিকশা বন্ধ করা হয়েছে যেন এখনকার কনস্ট্রাকশনের সময়টাতে সহজে চলাচল করতে পারি। কোটি জনগণের ভোগান্তিকে লাঘব করার জন্য এটা করা হয়েছে।”

রিকশা চালকদের আলোচনার টেবিলে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বৈধ রিকশা চালকদের যাদের আমরা লাইসেন্স দিয়েছি আপনারা আসুন, আমাদের সঙ্গে বসুন, আমরা আপনাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলি আমরা আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করি। আমি সাদরে আপনাদের চায়ের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

সকাল থেকে সায়েদাবাদ, কমলাপুর, মুগদা, খিলগাঁও, তালতলা, মালিবাগ রেলগেট, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, রামপুরা বাজার, টিভি সেন্টার এলাকা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত অবরোধ করেন হাজারো রিকশা চালক ও মালিক। এর মধ্যে সকাল ১১টার কিছু পর সবুজবাগ থানার ওসি সোহরাব হোসেন রিকশা চলার আশ্বাস দিলে মালিবাগ রেলগেট, মুগদা, খিলগাঁও এলাকায় অবরোধ শিথিল হয়। তবে বিকেলে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্যান্য জায়গায় অবরোধ চলেছে।

রিকশা চলাচল খুলে দেওয়ার দাবিতে রাস্তায় আগুন দিয়ে অবরোধ করেন রিকশা চালকরা। ছবি: প্রবীর দাশ

রিকশা চালকদের দেওয়া আশ্বাসের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ওসি সোহরাব হোসেন অবশ্য দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “রিকশা চলাচল পুরোপুরিভাবে আমরা বন্ধ করিনি। তিনটি রাস্তায় রিকশা বন্ধ করা হয়েছে। এটা বন্ধ থাকবে।”

সরেজমিনে দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা রাস্তায় খাম্বা, বালুর বস্তা ও আবর্জনা ফেলে সকাল সাতটা থেকে যান চলাচল আটকে দেন। অনেক জায়গায় রিকশা চালকরা রাস্তায় বসে ও শুয়ে বসে পড়েন। এই অবস্থায় মোটরসাইকেল পর্যন্ত চলাচল করতে পারেনি। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন অফিসগামী লোকজন ও শিক্ষার্থীরা।

সবুজবাগ থানার বৌদ্ধমন্দির এলাকায় সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাসের জন্য অপেক্ষা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিম, আনিকা, নীলা, জাইম। তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের জন্য সকাল ১০টা থেকে তারা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে। বাসের দেখা তো মেলেইনি দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করে অন্য কোনো যানবাহনও পাওয়া যায়নি। তাদের কয়েকজনের পরীক্ষা ছিল ১২টায়।

দুপুর ১টার দিকে মালিবাগের চৌধুরীপাড়ায় কথা হয় পিক-আপ ট্রাক চালক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, চট্টগ্রাম রোড থেকে এসে সকাল ৯টায় অবরোধে আটকা পড়েছেন তিনি। এর পর আর সামনেও যাওয়া যায়নি পেছানোও যায়নি। চার ঘণ্টা ধরে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। পাশের এক উবার চালকও জানান তিনিও প্রায় চার ঘণ্টা ধরে এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে।

মুগদা থেকে মধ্যবয়সী শামীমা মেয়েকে নিয়ে মোহাম্মদপুরে যাবেন বলে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন। পৌনে দুই ঘণ্টায় কোনো যানবাহন না পায়ে বাসায় ফিরে যান তিনি। নিজে ভোগান্তিতে পড়লেও আন্দোলনকারীদের দাবির পক্ষে মত দেন তিনি। বলেন, রিকশা চালকরা বেকার হয়ে গেলে বিপদে পড়ে যাবে এই পরিবারগুলো। আবার যাত্রীদের সবার তো ব্যক্তিগত গাড়ি নেই। নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তদের প্রতিদিন রাইড শেয়ারিং সেবাও নেওয়ারও সামর্থ্য নেই। ফলে রিকশা বন্ধ থাকলে এই এলাকার মানুষেরই ভোগান্তি বাড়বে।

চৌধুরীপাড়ায় আবুল হোটেল এলাকায় রিকশা চালকদের নেতৃত্ব দেওয়া নূরুল উদ্দিন বলেন, রিকশা যদি চলতে না-ই দেয় তাহলে সরকারের উচিত রিকশা চালকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। আর যাত্রীরাও বলছেন, স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের জন্য বিকল্প যানবাহনের ব্যবস্থা করার পরই কেবল রিকশা তুলে দেওয়ার কথা চিন্তা করা উচিত।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago