মাশরাফিকে নিয়ে মন্তব্য ও চিকিৎসক বদলি বিতর্ক

Mashrafe and Karim
জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজা (বামে) এবং চিকিৎসক একেএম রেজাউল করিম। ছবি: সংগৃহীত

দেশের তিনজন সেরা শিশু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের একজন তিনি। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে বদলি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাঙ্গামাটি হাসপাতালে।

তাকে বদলি করা হয়েছে ‘সতর্কতামূলক’ পদক্ষেপ হিসেবে। কেননা, তিনি একজন সংসদ সদস্য এবং জাতীয় ক্রিকেটদলের ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করেছিলেন।

তার এই বদলির ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন চমেকের রোগীরা।

ফেসবুকে সংসদ সদস্য মাশরাফি সম্পর্কে করা এক মন্তব্যের ওপর গত ২৮ এপ্রিল চিকিৎসক একেএম রেজাউল করিম মন্তব্য করেন। এর চারদিন আগে মাশরাফি নড়াইল সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে চারজন চিকিৎসকের অনুপস্থিতি দেখতে পেয়েছিলেন। এর প্রেক্ষিতে এমন মন্তব্য করেছিলেন রেজাউল করিম।

মাশরাফির হাসপাতাল পরিদর্শনের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এরপর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সেই চার চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করে।

হাসপাতালে অনুপস্থিত চার চিকিৎসকের একজনের সঙ্গে মাশরাফি টেলিফোনে যে ভাষায় কথা বলেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কয়েকজন চিকিৎসক। অনেকে তাদের অসন্তোষও প্রকাশ করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

গত ৬ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চমেকের চিকিৎসক একেএম রেজাউল করিমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। আপত্তিকর মন্তব্য করার জন্যে কেনো তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।

সেসময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. মুরাদ হাসান বলেন যে আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার করে কয়েকজন চিকিৎসক যে মন্তব্য করেছেন তা দুঃখজনক। এমনকি, এর ফলে প্রধানমন্ত্রীও বিরক্ত হয়েছেন।

গত ২৬ জুন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চমেকের পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসক একেএম রেজাউল করিমকে চমেক থেকে রাঙ্গামাটি কলেজ হাসপাতালে বদলি করে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেন, “আমি একে শাস্তিমূলক বদলি বলবো না। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে তাই একে একটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেখা যেতে পারে।”

একজন আইনপ্রণেতা সম্পর্কে এমন মন্তব্য ‘অশোভন’ বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব এহতেশামুল হক দুলাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “ডাক্তার করিমকে রাঙ্গামাটিতে বদলির খবর শুনে আমরা অবাক হয়েছি। সেখানে তার জ্ঞান-অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর কোনো সুযোগ নেই। কেননা, সেখানে কোনো ক্যান্সারের রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয় না।”

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের অধ্যাপক ইকবাল আরসালান মন্ত্রণালয়ের কাছে সেই বদলির আদেশ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। কেননা, তিনি মনে করেন যে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেই আদেশ দেওয়া হয়নি।

চমেকের একাধিক সূত্র জানায়, আগে বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় অথবা বিদেশে নিয়ে যাওয়া হতো। ২০১৩ সালে চমেকে পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেই দৃশ্য বদলে যায়।

ডাক্তার করিম এখনো তার নতুন কাজে যোগ দেননি। সম্প্রতি তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে তাকে দেশের যেকোনো জায়গায় বদলি করা যেতে পারে। “যাহোক, রাঙ্গামাটিতে আমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সুযোগ কম থাকবে। কেননা, সেখানে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই।”

গত ৪ জুলাই, একেএম রেজাউল করিমকে বদলি আদেশ তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়ে শতাধিক ক্যান্সার রোগী ও তাদের অভিভাবকরা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আহ্বান জানান।

তিশা নামের ১০ বছরের একটি ক্যান্সার রোগীর বাবা আবু তাহের বলেন, “এই বিভাগে ডাক্তার করিমই একমাত্র চিকিৎসক। তার এই বদলি চিকিৎসাসেবায় বাধাগ্রস্ত করছে।”

Comments

The Daily Star  | English

Is the govt backing the wrongdoers?

BNP acting Chairman Tarique Rahman yesterday questioned whether the government is being lenient on the killers of a scrap trader in front of Mitford hospital due to what he said its silent support for such incidents of mob violence.

7h ago