ইংল্যান্ড না-কি নিউজিল্যান্ড?
১৯৭৫ সালের ২১ জুন। লর্ডসে ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রথম আসরের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েডের সেঞ্চুরির পর কিথ বোয়েসের চার উইকেট আর পাঁচ-পাঁচটি রানআউটের সুবাদে শিরোপা জিতেছিল উইন্ডিজ। এরপর বিশ্বকাপের আরও দশটা আসর গড়িয়ে শেষও হয়ে গেছে। চ্যাম্পিয়ন দলের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও চারটি নাম- ভারত, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। গেল মে মাসে শুরু হওয়া বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরও শেষের ক্ষণ গুণছে। পুরনো কেউ নয়, এবার ফাইনালের মঞ্চে উপস্থিত এমন দুটি দল, যারা আগে কখনও শিরোপা জয়ের স্বাদ নেয়নি।
বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন কে হবে- স্বাগতিক ইংল্যান্ড না আন্ডারডগ নিউজিল্যান্ড? উত্তরটা জানা যাবে কয়েক ঘণ্টা পরই। রবিবার (১৪ জুলাই) মাঠে গড়াতে যাওয়া ফাইনালের ভেন্যু সেই লর্ডসই। খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায়।
নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে ক্রিকেট:
ইংল্যান্ড এর আগে ফাইনাল খেলেছে তিনবার (১৯৭৯, ১৯৮৭ ও ১৯৯২)। নিউজিল্যান্ড একবার (২০১৫)। রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল দুদলকে। ফলে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেতে যাচ্ছে ক্রিকেটবিশ্ব। ২৩ বছর পর। ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কা প্রথমবারের মতো শিরোপা জেতার পর অস্ট্রেলিয়া চারবার এবং ভারত একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
যেভাবে ফাইনাল দুদল:
উদ্বোধনী ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০৪ রানে হারিয়ে দাপটের সঙ্গে আসর শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। তবে পরের ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হেরে যান ইয়ন মরগানরা। তাদেরকে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দিয়েছিল অবশ্য শ্রীলঙ্কা। শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ নিয়েও ২৩২ রান তাড়ায় ইংলিশরা হেরেছিল ২০ রানে। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছেও হেরে যাওয়ায় তাদের সেমিফাইনালে ওঠাটা পড়েছিল হুমকির মুখে।
তবে শেষ দুই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে লিগ পর্বে তৃতীয় হয়ে শেষ চারে নাম লেখায় তারা। আসরে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্সটা সেখানেই দেখায় দলটি। গেলবারের চ্যাম্পিয়ন অসিদের ২২৩ রানে বেঁধে ফেলে ম্যাচ জিতে নেয় ৮ উইকেটে। ২৭ বছর পর তারা পা রাখে ফাইনালে।
নিউজিল্যান্ড আসর শুরু করেছিল দুর্দান্তভাবে। প্রথম ছয় ম্যাচের পাঁচটিতে জেতে তারা। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা ভেসে যায় বৃষ্টিতে। এরপর ছন্দপতন। টানা তিনটি হার যথাক্রমে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের কাছে। তবে কাজের কাজটা কেন উইলিয়ামসনরা আগেই সেরে রেখেছিলেন। পয়েন্ট জমা করে রাখার সঙ্গে সঙ্গে রান রেটটাও বাড়িয়ে নিয়েছিলেন। ফলে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে সেমির টিকিট পান তারাই।
ইংল্যান্ডের মতো নিউজিল্যান্ডও নিজেদের সেরাটা উপহার দেয় ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে। রিজার্ভ ডেতে গড়ানো ম্যাচে মাঝারি স্কোর নিয়ে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স দেখায় তারা। বোলারদের নৈপুণ্যে টপ ফেভারিট ভারতকে হারিয়ে দেয় ১৮ রানে।
ফাইনালে দুদলের লক্ষ্য থাকবে সেমির পারফরম্যান্সকে ছাপিয়ে যাওয়ার। নিজেদেরকে উজাড় করে দেওয়ার। বিশ্বকাপ শিরোপা তবেই না উঁচিয়ে ধরা যাবে!
অধিনায়করা যা বলছেন:
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ইয়ন মরগান বলছেন, ‘আমার জন্য এবং ড্রেসিং রুমের সবার জন্যই এটা অনেক বড় ব্যাপার। চার বছরের নিষ্ঠা, পরিশ্রম আর পরিকল্পনার ফল পাওয়ার চূড়ান্ত ধাপ এটা। বিশ্বকাপ জেতার শ্রেষ্ঠ সুযোগ আমাদের হাতের মুঠোয়।... আমার মনে হয় গোটা দেশের মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে। দল হিসেবে, খেলোয়াড় হিসেবে এই সময়ে তাদের সমর্থন পেয়ে ভীষণ ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। ’
নিউজিল্যান্ড দলনেতা উইলিয়ামসন বলেছেন, ‘অনেক মানুষই নানান সময়ে এটা বলেছে (নিউজিল্যান্ড আন্ডারডগ)। এটা আসলে ভালো। ইংল্যান্ড ফেভারিট তকমা পাওয়ার যোগ্য। আসরের শুরু থেকেই তারা ফেভারিট এবং ভালো ক্রিকেটও খেলছে। কিন্তু যেমন ডগই আমরা হই না কেন গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিজেদের খেলার দিকে মনোযোগী হওয়া। কিন্তু আমরা অনেকদিন ধরেই দেখছি, ডগের ধরন যেমনই হোক না কেন যে কেউ যে কাউকে হারাতে পারে (হাসি)।’
পরিসংখ্যান:
মোট ম্যাচ: ৯০, নিউজিল্যান্ড জয়ী: ৪৩, ইংল্যান্ড জয়ী: ৪১, টাই: ২, পরিত্যক্ত: ৪।
বিশ্বকাপ পরিসংখ্যান:
মোট ম্যাচ: ৯, নিউজিল্যান্ড জয়ী: ৫, ইংল্যান্ড জয়ী: ৪।
Comments