‘আমি এখন মরে যেতে চাই’

মার্টিন গাপটিল রান আউট, সুপার ওভারও টাই। বাউন্ডারি বেশি মেরে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ট্রাফালগার স্কয়ারের জনসমুদ্রেও এক যুবক নিজেকে করে ফেললেন আলাদা। খ্যাপাটে ষাঁড়ের মতো দিগ্বিদিক ছুটে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমি এখন মরে যেতে চাই’। তার মতে এরপর নাকি আর বেঁচে দরকারই নেই। না তিনি নিউজিল্যান্ডের কেউ নন। ইংল্যান্ডেরই সমর্থক। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো এত রোমাঞ্চ দেখার পর তরুণ জেমসের মনে হয়েছে, জীবনের শ্রেষ্ঠ আনন্দ উপভোগের পর আর কোন মুহূর্ত না আসুক।
England Fan
ছবি: একুশ তাপাদার

মার্টিন গাপটিল রান আউট, সুপার ওভারও টাই। বাউন্ডারি বেশি মেরে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ট্রাফালগার স্কয়ারের জনসমুদ্রেও এক যুবক নিজেকে করে ফেললেন আলাদা। খ্যাপাটে ষাঁড়ের মতো দিগ্বিদিক ছুটে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমি এখন মরে যেতে চাই’। তার মতে এরপর নাকি আর বেঁচে দরকারই নেই। না তিনি নিউজিল্যান্ডের কেউ নন। ইংল্যান্ডেরই সমর্থক। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো এত রোমাঞ্চ দেখার পর তরুণ জেমসের মনে হয়েছে, জীবনের শ্রেষ্ঠ আনন্দ উপভোগের পর আর কোন মুহূর্ত না আসুক।

অ্যালকোহলে মাতোয়ারা অবস্থায় জেমস হয়ত বাড়াবাড়ি করেছেন। কিন্তু রোববার লর্ডসে ক্রিকেট খেলাটা যা দেখিয়েছে, এরপর কারো এমন পাগলামোকেও অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। এমন কিছু দেখার পর এসবই তো করবে মানুষ।

আসলেই এরচেয়ে বেশি আর কি হতে পারত একটা ফাইনাল ম্যাচে? লন্ডন শহরেই রোববার উইম্বলডন ফাইনালে লড়ছিলেন রজার ফেদেরার আর নোভাক জোকভিচ। সিলভারস্টোনে চলছিল ফরমুলা ওয়ান রেস। গতিময় লন্ডনবাসীর ওসবই পছন্দ বেশি। কিন্তু না। ১৪ জুলাই, রোববার। ২০১৯ সালের এই দিনটা ক্রিকেট খেলাটার জন্যও তো গৌরবের।

বাকি সব কিছুকে ছাপিয়ে ক্রিকেটও যে উত্তেজনায়, রোমাঞ্চে শ্রেষ্ঠ হতে পারে তা দেখে গেছে লর্ডসের ভরপুর গ্যালারিতে, দেখা গেছে ট্রাফালগার স্কয়ারের জনসমুদ্রে। বাইশ গজে ঘুম পাড়ানি খেলা বলে যার বদনাম গতিময় দুনিয়ায়, তা ঘুচিয়েছেন বেন স্টোকস, জস বাটলার। লুকি ফার্গুসেন, জিমি নিশামরা  দেখিয়েছেন, টানা নয় ঘন্টাও উত্তেজনায় টইটুম্বুর করে মাতিয়ে রাখা যেতে পারে। ক্রিকেট খেলাটা এমনই অবিশ্বাস্য সুন্দর। কেইন উইলিয়ামস দেখিয়েছেন, উত্তেজনার চড়া পারদের মাঝেও কেমন ঠান্ডা মাথায় কঠিন হিসেব নিকেশও করতে হয় এই খেলায়, হতে হয় কতটা ম্যাথমেটিক্যাল।

এমন একটা ম্যাচে আপনি চাইলে তাই গণিত পাবেন, পাবেন শিল্প এমনকি উঠানামার স্রোতের মাপে পাবেন সাহিত্যের রসদ।

ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ড। যুগে যুগে যত আধুনিক ফরম্যাট বেরিয়েছে সেসবের জনকও তারা। টেস্টের পর ওয়ানডেটাও তাদেরই আবিস্কার। অথচ নিজেদের আবিষ্কার করা খেলায় নিজেরাই হতে পারছিল না শ্রেষ্ঠ। এর আগে তিনবার ফাইনালে গিয়েও পারেনি। সব শেষবার তাও ২৭ বছর আগে। এবারের সুযোগটা তাই ছিল বড়। পাওয়ার জন্য যেমন, হারানোর ভয়ও ততটাই।

ফাইনালে পা রেখেই কাপ জয়ের আভাস পেয়ে টেরিস্টরিয়াল সম্প্রচার, ফ্যান জোন বানিয়ে উদযাপনের মঞ্চ প্রস্তুত রাখা বলে দিচ্ছিল ইংল্যান্ড প্রস্তুত। অপেক্ষা কেবল খেলা শেষের। সেই প্রস্তুত মঞ্চও অপ্রস্তুত হয়ে যেত একটুর জন্য। কেউ কাঁপলেন উত্তেজনায়, কেউ ধরে রাখতে পারলেন না আবেগ।

নিউজিল্যান্ড ২৪১ করল, ইংল্যন্ডই তাই। সুপারে ওভারে ইংল্যান্ড ১৫ রান নিল, নিউজিল্যান্ডও তাই। দুই ‘ল্যান্ডেরই’ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কেউ কারো চেয়ে এগিয়ে বা পিছিয়ে যাওয়া যেন বেখাপ্পাই লাগবে। এমনই সুর বেধে তাই চলল সব। তবু নিয়মের খাতা কলমে একজনকে তো চ্যাম্পিয়ন বানানো চাই। তাই হলো। ইংল্যান্ড জিতল কিন্তু নিউজিল্যান্ড হারল না। আর সবচেয়ে বেশি জিতে গেল ক্রিকেট। ঐতিহ্যে মোড়ানো খেলাটার জিতে যাওয়া যে খুব দরকার। 

Comments

The Daily Star  | English

Protesters stage sit-in near Bangabhaban demanding president's resignation

They want Shahabuddin to step down because of his contradictory remarks about Hasina's resignation

41m ago