বাঁধের ওপর সংসার

Lalmonirhat flood victims
২৬ জুলাই ২০১৯, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা পাড়ের সানিয়াজান গ্রামের বানভাসি আকলিমা বেগম (২৮)। ছবি: সংগৃহীত

“বুধবার বিকাল থেকে আবারো বাঁধের ওপর সংসার পেতেছি। এর আগে ছিলাম ১১ দিন। জানি না এভাবে বাঁধের উপর কতোদিন সংসার চলবে,”- এমনটি জানালেন হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা পাড়ের সানিয়াজান গ্রামের বানভাসি আকলিমা বেগম (২৮)।

তিন সন্তানের জননী আকলিমার স্বামী পেশায় একজন ভ্যানচালক। “তিস্তায় পানি বাড়লে বাড়িতে উঠে যায় বানের পানি। থাকতে পারি না। চলে আসি নিরাপদ আশ্রয়ে। এমনিভাবে বানভাসি হয়ে স্বামীর সংসারে আছি গেলো ১২ বছর ধরে। শিশুকালেই বাবার বাড়িতে বানভাসি হওয়ার অভ্যাসটা হয়েছিলো,” এমনটি জানালেন আকলিমা।

বানভাসি হওয়ার কষ্ট অনেক। কিন্তু, কষ্টকে আর অনুভব করতে ইচ্ছে করে না। কারণ, তাদের কষ্ট কোনোদিনই লাঘব হবে। বানভাসি হলে কিছু চাল, ডাল, চিড়া-মুড়ি, গুড়, তেল, দিয়াশলাই, ত্রাণ পাওয়া যায় আর এ ত্রাণ কখনোই বানভাসিদের দুঃখ লাঘব করবার মতো নয় বলে আকলিমার বক্তব্য।

তার মতে বানভাসিদের দুঃখ চিরতরে লাঘব করতে হলে তিস্তা খনন করতে হবে আর তিস্তার তীর করতে হবে সংরক্ষণ। তবেই বন্যা ও নদীভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে তিস্তা পাড়ের মানুষের বাড়িঘর, আবাদি জমি।

আকলিমার মতোই বাঁধে অস্থায়ী ডেরা করে বানভাসি হেলেনা বেগম (৪৬) জানালেন, বার বার বন্যা আসে আর তারা বার বার বানভাসি হয়ে বাঁধের উপর চলে আসেন। কিন্তু, তাদের দুঃখ লাঘবে কেউ এগিয়ে আসেন না। “হাতে করে কয়টা চাল, চিড়া নিয়ে আসলে কি আমাদের দুঃখ শেষ হবে, কোনোদিন হবে না।”

আকলিমার কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় হেলেনার কণ্ঠে। হেলেনা বলেন, “আমরা ত্রাণ চাই না। না খেয়ে থাকবো। তবু আমরা তিস্তার খনন চাই, তীর সংরক্ষণ চাই, বাঁধ চাই।”

“ঠিকমতো চোখে ঘুম থাকে না। বাঁধের উপর আছি। কখন জানি বাড়ি ভাসি যায় বানের পানিতে,” এমন ধারণার কথা জানালেন বাঁধের উপর আশ্রয় নেওয়া বানভাসি কৃষক দেলোয়ার হোসেন (৫০)। একই গ্রামের বানভাসি এই কৃষক জানালেন, প্রতি বছর আয় করে কিছু টাকা জমান আর বর্ষাকালে বন্যা ও ভাঙ্গনের ধকল সামলাতে তার খরচ করে হয়ে যান হা-ভাতে। “এভাবে চলতেছি বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। আমার পূর্ব-পুরুষরা দুর্ভোগে ছিলেন। এখন আমি দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। এরপর আমার পরের প্রজন্মরা এভাবে দুর্ভোগের ঘানি টানবে,” তিনি জানান।

আজ (২৬ জুলাই) সকাল থেকে লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় এ বন্যায় বানভাসিদের অনেকে রয়েছেন সরকারি রাস্তা, বাঁধ ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে। বাড়িঘর থেকে বানের পানি পুরোপুরি না নামা পর্যন্ত তারা এভাবেই অস্থায়ী ডেরায় থাকবেন।

দ্বিতীয় দফার বন্যায় তিস্তা ও ধরলার পানি বেড়েছিলো আকস্মিকভাবে আর নেমেও গেছে আকস্মিকভাবে- এমনটি জানালেন লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী বজলে করিম। “বৃষ্টিপাত ও উজানের পানি না থাকায় আপাতত নদীর পানি বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা নেই,” যোগ করেন তিনি।

এস দিলীপ রায়, দ্য ডেইলি স্টারের লালমনিরহাট সংবাদদাতা

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women defend SAFF title with 2-1 win against Nepal

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

11m ago