শেষ দিকে ঘুরে দাঁড়ানোর পরও সামনে বড় লক্ষ্য

ছবি: এএফপি

উপমহাদেশের চিরায়ত পাটা ব্যাটিং উইকেট পেয়ে জ্বলে উঠলেন কুশল পেরেরা, তার সঙ্গে মিলে কুশল মেন্ডিস রাখলেন তাল। দুই কুশলের হম্বিতম্বিতে এক সময় মনে হচ্ছিল সাড়ে তিনশো ছুঁয়ে ফেলবে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এই দুজন থামতেই পুরো উলটো ছবি। শেষ ২০ ওভারে লঙ্কানদের বেঁধে রেখে খেলায় ফিরল বাংলাদেশও। তবু লক্ষ্যটা ঠিকই ছাড়িয়ে গেল তিনশো।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ৩১৪ রান করেছে শ্রীলঙ্কা। আগে কখনো লঙ্কানদের বিপক্ষে এত রান তাড়া করে জেতেনি বাংলাদেশ। তবু এই রান পেয়েও আসলে এখন খুশিই হতে পারে বাংলাদেশ। দুর্বল ফিল্ডিং, ক্যাচ মিস, এলোমেলো বোলিংয়ে প্রথম ৩০ ওভারেই যে দিয়ে দিয়েছিল ১৯৮ রান। শেষ ২০ ওভারে মাত্র ১১৬ রান দেওয়া তাই বোলারদেরই কৃতিত্ব।

ম্যাচ শুরুর আগে পিচ রিপোর্টে রাসেল আর্নল্ড বলছিলেন, উইকেট বেশ শক্তপোক্ত, পরের দিকে বড় রান তাড়াও এখানে কঠিন কিছু হবে না। কিন্তু প্রথম কয়েক ওভার তার কথার অনুরণন মিলছিল না। শফিউল ইসলাম আর মেহেদী হাসান মিরাজের বল মন্থর হয়ে ব্যাটে যাচ্ছিল। তাতে বার কয়েকই টাইমিংয়ে গোলমাল করছিলেন লঙ্কান দুই ওপেনার আবিস্কা ফার্নেন্দো আর দিমুথ করুনারত্নে। দু-একবার ক্যাচ মতনও উঠল।

এই উইকেটে থেমে বল আসবে। উপমহাদেশের চিরায়ত উইকেটে যা হয়, দেরিতে শট অ্যাপ্রোচ করতে হবে। ফার্নেন্দোর তা হয়তো মাথায় ছিল না। শফিউলের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল দ্বিধাগ্রস্ত ভাবে তাড়া করতে  কাটা পড়লেন। প্রায় তিন বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামা শফিউল বাংলাদেশকে তৃতীয় ওভারেই এনে দেন উইকেট। ১০ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।

খনিক পর থেকেই উইকেটের ভাষা পড়ে নিতে পেরেছিলেন করুনারত্নে আর কুশল পেরেরা। লেট শট অ্যাপ্রোচ করে পরের ১২ ওভারে তুললেন ঝড়। শাঁই শাঁই করে এগুতে থাকল লঙ্কার রানের চাকা। রুবেল হোসেন বল করতে এসে দুই ওভারে বেদম মার খেয়ে ফেরত গেলেন। শফিউল শুরুর ছন্দ ভুলে দিতে থাকলেন আলগা বল, তার ফায়দা কড়ায় গণ্ডায় তুলে নেন পেরেরা। দ্বিতীয় উইকেটে মাত্র ৭৩ বলে গড়ে উঠল দুজনের ৯৭ রানের জুটি।

বিস্ময়কর ব্যাপার জুটি ভাঙতে অধিনায়ক তামিম তার সেরা অস্ত্র মোস্তাফিজুর রহমানকে ডাকেননি এই সময়ে। ১৫তম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজ ডট বলে হয়রান করে করুনারত্নকে ছাঁটলে পরের ওভারে বল হাতে আসেন মোস্তাফিজ।

কিন্তু প্রভাব ফেলতে পারেননি অতটা। পেরেরা তেতে ছিলেন, তেতেই থাকলেন। তার সঙ্গে মিলে ইনিংস গড়ার পথে মন দিলেন কুশল মেন্ডিস। মেন্ডিসের কাজ ছিল পেরেরাকে স্ট্রাইক দিয়ে যাওয়া, যাতে ডট বল না হয় সেদিকটা দেখা। তিনি তার কাজ করলেন ঠিকঠাক। জমে উঠল আরেক জুটি। আরও তীব্র গতিতে, আরও বিপজ্জনকভাবে।

রুবেল, মোস্তাফিজ, শফিউল কেউই ধন্দে ফেলতে পারেননি তাদের। উইকেটের মন্থরতা কাজে লাগিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করাতে পারেননি এদের কেউ। পেরেছিলেন সৌম্য সরকার। অনিয়মিত বোলার হিসেবে বিশ্বকাপেও দুই ম্যাচে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছিলেন, শ্রীলঙ্কায় গিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচেও তাই। এদিন বল হাতে নিয়ে প্রথম দুই ওভারে মন্থরতা কাজে লাগিয়ে লঙ্কানদের আটকে রেখেছিলেন তিনি, প্রায় আদায় করে ফেলেছিলেন মেন্ডিসের উইকেটও। তার বল পেটাতে গিয়ে আকাশে তুলে দেওয়া মেন্ডিসের ক্যাচ যে বল হাত দিয়েও রাখতে পারলেন মাহমুদউল্লাহ।

২৮ রানে জীবন পাওয়া মেন্ডিস পরে ফিরেছেন নিজের উদারতায়। রুবেলের বলে আম্পায়ার কট বিহাইন্ড না দিলেও নিজে থেকেই ছাড়েন ক্রিজ।

আরেক দিকে ৮২ বলে বাউন্ডারি মেরে তিন অঙ্কে পৌঁছে পেরেরা বেশি দূর আগাতে পারেননি। তাকে থামিয়েছেন সেই সৌম্য। সৌম্যের বলে সুইপের মতো করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগের ফাঁদে পড়ে ১১১ রানে থামেন পেরেরা।

৩০ ওভারে ২ উইকেটে ১৯৮, ৪০ ওভারে ৪ উইকেটে ২৪৫। মাঝের এই ১০ ওভারে আসে মাত্র ৪৭ রান, পড়ে ২ উইকেট। কিছুটা যেন খেলায় ফেরার ইঙ্গিত বাংলাদেশের। শেষ ১০ ওভারেও এলো ৬৯ রান। শুরুতে মার খাওয়া সব পেসারই শেষ দিকে পেলেন দারুণ তাল। উইকেটের মন্থরতা কাজে লাগিয়ে একের পর এক স্লোয়ারে আটকে রাখলেন ব্যাটসম্যানদের। তাতে মিলল উইকেটও। লঙ্কানরা ছাড়িয়ে যেতে পারল না বাংলাদেশের নাগালের বাইরে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ৩১৪/৮ (ফার্নান্দো ৭, করুনারত্নে ৩৬, পেরেরা ১১১, মেন্ডিস ৪৩, ম্যাথিউস ৪৮, লাহিরু ২৫, থিসারা ২, ধনঞ্জয়া ১৮, মালিঙ্গা ৬*, প্রদীপ ০*; শফিউল  ৩/৬২, মিরাজ ১/৫৬, রুবেল ১/৫৪, মোসাদ্দেক ০/৪৫, মোস্তাফিজ ২/৭৫, সৌম্য ১/১৭, মাহমুদউল্লাহ ০/৪ )।

Comments

The Daily Star  | English
problems in filing complaints in police stations

No scope to verify authenticity when cases are filed: IGP

Instructions have already been issued to ensure that no one is arrested in a harassing manner, he says

2h ago