পদ্মা-গঙ্গার ইলিশে মিলে গেলো দুই বাংলা

এখন আর বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ পৌঁছায় না ভারতের কোনো রাজ্যে। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই পদ্মার ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির রসনা।

তাই বলে কি ইলিশ খাওয়া ছেড়ে দেবেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা, কিংবা দুই বাংলার মধ্যে ইলিশ মাছের স্বাদের সাঁকোতে পা রাখতে ভুলে যাবেন? একদম নয়।

পদ্মার ইলিশ আসুক কিংবা না-ই-আসুক গঙ্গার ইলিশের দুই বাংলার মানুষের মধ্যে বাঙালিয়ানা বাঁচিয়ে রাখতে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে কলকাতাসহ গোটা রাজ্যের বিভিন্নভাবে আয়োজন হতে দেখা যায় দুই বাংলার ইলিশ উৎসবের। এবারও একটুও ব্যতিক্রম হয়নি।

তবে এবার যে আয়োজনের সাক্ষী হলাম আমরা, সেখানে কিন্তু শুধু দুই দেশ “ভারত-বাংলাদেশ” বলা ভালো প্রতিবেশী দুই বাংলার মানুষ কিংবা প্রতিনিধরাই নন। বরং জাপান, ইতালি, যুক্তরাজ্যের কূটনীতিকরাও উপস্থিত হয়ে ইলিশের স্বাদ চেখে দেখেছেন।

শুধু একটি মাছের সঙ্গে দুই বাংলার মানুষের মধ্যে যে “যোগসূত্র” তৈরি হয় সেটা দেখেও বিস্মিত অবাঙালি অতিথি কূটনীতিকরা।

শনিবার কলকাতা থেকে প্রায় ৪০ কিলোটিমার দূরের হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া মহকুমার পাঁচলায় কান্ট্রি রোড নামের একটি রিসোর্টে দুদিনের দুই বাংলার ইলিশ উৎসবের সূচনা করেন ভারতের বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার তৌফিক হাসান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ উপ-রাষ্ট্রদূত ব্রুশ বাকনেল, জাপানের কনসাল জেনারেল মাসাউকি তাগা, ইতালির কনসাল জেনারেল ডামিয়াগো ফ্রাংকো ভিগ সহ ভারতীয় রেল, ভারতের ন্যশালনাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, বিভিন্ন রাষ্ট্রত্বব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং কলকাতার বেশ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক।

অনুষ্ঠানের সূচানার পরই বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্যেই ইলিশের বিচরণ নিয়ে একটা সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র উপস্থাপনা করে শোনান বাউলের কর্ণধার সম্রাট চৌধুরী। তিনি ঘোষণা করেন, এই আয়োজনের বাংলাদেশের ইলিশই শুধু নয় এখানে খোদ উপস্থিত হয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন পদ্মার প্রধান কুক মহম্মদ জামাল হোসেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অতিথিদের কাটাবিহীন ইলিশ মাছ খাইয়ে যার নাম দেশ বিদেশে বহুল পরিচিত।

এবার তিনি সবার সামনেই কিভাবে একটি ইলিশ মাছ কাটাবিহীন অবস্থায় রান্না করে পরিবেশণ করা হয় সেটা দেখান এবং তখন যেমন চারদিক থেকে হৈ-হৈ শোনা যায়, বিস্মিত হয়ে অনেকেই তার সঙ্গে সেলফি তোলেন।

অন্যদিকে ভারতের গঙ্গার ইলিশের ডিশ রান্না করেন ভারতীয় কুক নিখিল চন্দ্র বণিক। তাকে ঘিরেও চলে কৌতুলী ইলিশ প্রিয় বাঙালিদের ছবি তোলার ভিড়।

এই উৎসবের সূচনা করতে গিয়ে কলকাতার বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার তৌফিক হাসান বলেন, ইলিশ মানেই বাংলাদেশ। ইলিশ মানেই বাঙালি। ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। একইভাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে সমান ভাবে প্রিয় ইলিশ। দুই বাংলার মানুষের মধ্যে বরাবরই ইলিশ একটা সেতুর ভূমিকা নিয়ে থাকে। আর এই ধরনের আয়োজনের মাধ্যমেও তৈরি হয় মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক।

একইভাবে বৃটিশ উপরাষ্ট্রদূত ব্রশ বাকনেল বলেন, ইলিশ মাছের কথা শুনেছি আমরা। কিন্তু এই মাছকে ঘিরে যে দুটি দেশের মানুষের মধ্যে এতো নিবিড় সম্পর্ক সেটা আজ প্রথম দেখার সুযোগ হলো।

জাপানের কনসাল জেনারেল মাসাউকি তাগা সূচনার সময় নিজেই ইলিশ কেটে রান্নার উদ্বোধন করেছিলেন। এবার তার হাতে বাংলাদেশের কুক জামাল হোসেনের বোনলেস ইলিশ। সেটা খেতে খেতেই বললেন, অসাধারণ।

অনুষ্ঠানের প্রধান আয়োজক কান্ট্রি রোডস এর কর্ণধার তমাল ঘোষাল জানান, দুই বাংলার মানুষের মধ্যে সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এমন আয়োজন। বাংলার মানুষের জিভ ইলিশ মাছ ছাড়া তার স্বাদের পূর্ণতা আসেনি। সেটা এপার বাংলার হোক কিংবা ওপারের ইলিশ। ইলিশই বাঙালিদের অন্যতম যোগসূত্র। 

শনি এবং রোববার দুদিনের এই ইলিশ উৎসবের আয়োজনে যুক্ত ছিল ভারতের পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার, ভারতীয় পর্যটন মন্ত্রণালয়, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন বা আইসিসিআর, বিস্পোকেন আর্কিটেকচার অ্যান্ড ইউনিক ল্যাংগুয়েজ বা বাউল এবং কান্ট্রি রোডস।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women defend SAFF title with 2-1 win against Nepal

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

11m ago