তৃণমূলের নতুন প্রচার কৌশল ‘দিদিকে বলো’
লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি রাজ্যবাসীর আস্থা কমার ইঙ্গিত আগেই পেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর বছরখানেকের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে দুই শতাধিক পৌরসভার নির্বাচন। এর পরের বছর রাজ্যের শাসন দখলের লড়াই বিধানসভার ভোটও রয়েছে। তাই জনসংযোগ বাড়াতে এবার নতুন পন্থা বেছে নিলেন তৃণমূল নেত্রী।
সোমবার রাজ্যটির শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছু নতুন জনসংযোগ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম ‘দিদিকে বলো’ নামের একটি ডিজিটাল প্লাটফর্ম এবং সার্বক্ষণিক মোবাইল ফোন নম্বর। এছাড়াও মানুষের কাছাকাছি পৌঁছতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল আগামী ১০০ দিনে ১০ হাজার গ্রামে জনসংযোগ যাত্রাও করবে। তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচিত এক হাজার নেতা-নেত্রী প্রত্যেক গ্রামের গিয়ে শুধু জনসংযোগই করবেন না, রাত্রি যাপন করে সেই গ্রামের পরিবেশের আঁচ নেবেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে যাবে ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘দিদিকে বলো ডট কম’। খোলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টা সাত দিনের একটি হটলাইনও।
এখানে শুধু দিদি তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ নয় কেউ চাইলে তৃণমূলের সদস্যপদও নিতে পারবেন।
সোমবার কলকাতার নজরুল মঞ্চে আয়োজিত দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক শুরুর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জনসংযোগের ঘোষণা করেন। মমতার স্বীকার করেন এটা কোনও নির্বাচনী প্রচারণা নয়। বলেন, “পৌনে দুবছর এখনও কাজের সময়। আমরা কাজটাই গুরুত্ব দিচ্ছি।”
মমতা বলেন, একটা নির্দিষ্ট ফোন নম্বর এবং একটি ডিজিটাল মাধ্যম এই দুটো মাধ্যমেও আমরা সংযোগ করব মানুষের সঙ্গে।
তৃণমূল কংগ্রেস গরীব পার্টি বলে মন্তব্য করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, অনেক গণমাধ্যমের খবর দেখলাম তৃণমূল কংগ্রেস পূর্ণসময়ের জন্য কর্মী নিয়োগ করবে। এটা ঠিক নয়। আমরা সেই রকম দল নই।
মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সরকার কিংবা সরকারি দলের সঙ্গে মানুষের সংযোগ বরাবরই ভালো ছিল এবং আছে কিন্তু এই নতুন প্রকল্পের মধ্য দিয়ে সেটা আরও বাড়বে।
তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন এই ফরমুলাকে কটাক্ষ করেছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলগুলো। বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেছেন, তৃণমূলের “দিদিকে বলো” এই ক্যাম্পেইন প্রমাণ করে দলটির সঙ্গে মানুষর আর কোনো সম্পর্ক নেই।
কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, পুরোটাই তৃণমূলের নাটক।
বামফ্রন্ট নেতা সুজন চক্রবর্তী মনে করেন, কমিশনের টাকা (কাটমানি) ফিরিয়ে মানুষের সঙ্গে সংযোগ করতে চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু সেটাতে তৃণমূল আরও তলিয়ে গেছে। এবার নতুন ফর্মুলাতেও কাজ হবে না। এই দলটির সম্পর্কে রাজ্যবাসী বুঝে গিয়েছেন।
লোকসভা নির্বাচনের ৪২ আসনের মধ্যে ২২ টি আসন পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সর্বশেষ ২০১৪ সালের তারা ৩২ আসন পেয়েছিল।
অন্যদিকে ২০১৪ সালে বিজেপি মাত্র দুটি আসন পেয়ে পাঁচ বছর পর সর্বশেষ নির্বাচনের ১৮ আসনে নিজের জয় নিশ্চিত করে।
Comments