ভারতীয় গরু-ছাগল না আসায় খুশি যশোরের খামারিরা

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছরে বেনাপোল ও শার্শা সীমান্ত এলাকা দিয়ে বৈধ ও অবৈধ পথে ভারত থেকে গরু-ছাগল কম আসায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন যশোরের খামারিরা।
স্টার ফাইল ফটো

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছরে বেনাপোল ও শার্শা সীমান্ত এলাকা দিয়ে বৈধ ও অবৈধ পথে ভারত থেকে গরু-ছাগল কম আসায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন যশোরের খামারিরা।

অবৈধ পথে ভারত থেকে আসা গরু-ছাগলের সঠিক হিসেব না থাকলেও বৈধ পথে আসা পশুর একটি হিসেব রয়েছে শার্শা উপজেলার নাভারন কাস্টমস করিডোরে। কাস্টমসের তথ্য মতে, জুলাই মাসে ৯৯টি গরু ও ৫টি ছাগল বৈধভাবে ভারত থেকে এসেছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব মতে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে যশোরের আট উপজেলায় প্রায় পাঁচ হাজার ৮০০ খামারে ৭০ হাজারের মতো পশু হৃষ্টপুষ্ট করা হচ্ছে। যার মধ্যে প্রায় ৩১ হাজার গরু, ৩৪ হাজার ছাগল এবং ৫ হাজার ভেড়া রয়েছে।

কোরবানির ঈদে জেলায় ৬৩ হাজার পশুর চাহিদা থাকলেও এ জেলার চাহিদা মিটিয়ে গরু, ছাগল ও ভেড়া মিলে প্রায় ৫ হাজার পশু বাইরের জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

যশোরের পশ্চিম প্রান্তজুড়ে ভারত সীমান্ত। সীমান্তের বেশিরভাগ স্থানে ভারতীয়দের দেওয়া কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। তবে যে স্থানে বেড়া নেই সে পথে অনায়াসে গরু ও ছাগল আসে। আর যে পথে কাঁটাতারের বেড়া, সেখান থেকে গরু আনা হয় বিভিন্ন কৌশলে।

বৈধ পথে গরু, ছাগল ও ভেড়া আনার জন্য যশোর সীমান্তে শার্শার গোগা ও বেনাপোলের পুটখালীতে দুটি খাটালের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। খাটাল দুটি দিয়ে থেকে এখন সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫টি গরু আসছে। যেখান আগের বছরগুলোতে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার গরু, ছাগল ও ভেড়া আসতো।

বেনাপোলের পুটখালী ও শার্শা সীমান্ত এলাকায় বড় বড় দেশি গরুর খামার রয়েছে প্রায় দেড়শ থেকে ২০০টি। যদি ঈদের আগে ভারত থেকে বেশি সংখ্যক গরু ও ছাগল আসে তবে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করছেন এসব খামারিরা।

তারা বলছেন, যদি ভারত থেকে বেশি সংখ্যক গরু আসে তবে তাদের ব্যবসা ধ্বংসের উপক্রম হবে এবং দেশি গরুর চাহিদা কমে যাবে ও দাম পড়ে যাবে।

বেনাপোলের পুটখালী গ্রামের খামারি সিরাজ আলী বলেন, “সারাবছর গরু লালন পালন করে থাকি কোরবানির সময় কিছু বাড়তি টাকা পাওয়ার আশায়।”

চলতি বছরে ১০টি বড় জাতের গরু পালন করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, গোয়াল ঘরে ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। ভালো খাবার দেওয়া হচ্ছে। দেখা যাক কষ্টের মূল্য পাওয়া যায় কী না।

ভারতীয় গরু যদি পুরোপুরিভাবে আসা শুরু করে, তবে দেশি খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়বে বলেও ধারণা করছেন খামারি সিরাজ আলী।

যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ভবতোষ কান্তি সরকার জানান, জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ২৪টি গরুর হাট রয়েছে। প্রতিটি হাটেই আমাদের ভ্যাটেনারি টিম রয়েছে। যারা সার্বক্ষণিক হাটে আনা পশুগুলোকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।

খুলনা ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, অবৈধ পথে ভারতীয় গরু ও ছাগল যাতে বাংলাদেশে সহজে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য ইতিমধ্যে সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।

যশোরের ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সেলিম রেজা জানান, বিভিন্ন ক্যাম্পের সদস্যরা সীমান্তে কড়া পাহারা দেওয়ার ফলে চোরাকারবারিরা সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধ পথে কোনো গরু-ছাগল নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করাতে পারছে না।

এতে করে কুরবানিতে ভারতীয় গরু ও ছাগলের সংখ্যা অনেক কম হবে বলে ধারণা করছেন বিজিবি’র এই কর্মকর্তা।

Comments