ডেঙ্গু মোকাবিলায় এই অঞ্চলের দৃষ্টান্ত কলকাতা
ডেঙ্গু যখন দেশের প্রায় সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে আর ঢাকায় যখন এটি মহামারির রূপ নিয়েছে, তখন ভারতের কলকাতা শহর ডেঙ্গু মোকাবিলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
গত পাঁচ বছর ধরে কলকাতা সিটি করপোরেশন বছরজুড়ে সাফল্যের সঙ্গে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা নিধন করে আসছে।
এর আগে কলকাতার চিত্র ঢাকার চেয়ে খুব একটা আলাদা কিছু ছিলো না। অভিযোগ অস্বীকার করার প্রবণতা কলকাতার রাজনীতিতেও ছিলো। কলকাতা সিটি করপোরেশন শুধু বর্ষা এলেই নামতো এডিস মশা নিধন কার্যক্রমে। কিন্তু, করপোরেশনের কর্মীরা মাঠে নামার আগেই ডেঙ্গু জ্বর ছড়িয়ে পড়তো।
কাজের এই ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছে কলকাতা সিটি করপোরেশন। এখন তারা সারাবছর তৎপর থাকে এডিস মশা প্রতিরোধে।
করপোরেশন কর্মীরা সারাবছর চোখ রাখেন নালা-ডোবা, জমে থাকা পানির ওপর। হাসপাতালগুলোও রাখেন নজরদারিতে। কলকাতার এই সাফল্য নিয়ে বিবিসি বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
কলকাতা সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে পর্যাপ্ত জনবল নিশ্চিত করেছে। এমনকী, ড্রোন ব্যবহার করার কথাও ভাবছে কলকাতা।
কলকাতার উপ-মেয়র ও স্বাস্থ্য বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্যানেল মেয়র অতিন ঘোষ বিবিসি বাংলাকে বলেন, করপোরেশন সার্বক্ষণিক ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
তিনি আরো জানান, ১৫ থেকে ২০ জন কর্মী দুটি দলে বিভক্ত হয়ে ১৪৪টি ওয়ার্ডে কাজ করেন। একটি দলের কাজ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা, অন্যটির কাজ এলাকায় ডেঙ্গু মশার জন্ম নিতে পারে এমন জমানো পানি শনাক্ত করা।
৮ থেকে ১০ জনের আরেকটি দলকে প্রস্তুত রাখা হয় জরুরি সেবার জন্যে। খবর পেয়ে তারা গিয়ে এডিস মশার জন্মস্থল ধ্বংস করেন।
যদি কোনো ভবনে জমানো পানি দেখতে পান যেখানে এডিস মশার জন্ম হতে পারে, তাহলে সেই ভবনের মালিককে ১ লাখ রুপি জরিমানা করা হয়। পানি সরানোর খরচও জুড়ে দেওয়া হয় করের টাকার সঙ্গে।
ডেঙ্গু পর্যবেক্ষণে করপোরেশন ড্রোন ব্যবহারের কথাও ভাবছে। যাতে দ্রুত মশা মারার ওষুধ ছিটিয়ে দেওয়া যায়।
নগরীর ১৪৪টি ওয়ার্ডের সবগুলোতেই ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অতিন ঘোষ বলেন, যেহেতু ভারতের অধিকাংশ গবেষণাগার বেসরকারি, তাই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া মুশকিল। তথাপি, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে ডেঙ্গু বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার জন্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেসব তথ্য দ্রুত মশা নিধনকারী দলগুলোর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে অতিন বলেন, তিনি বিষয়টি পত্রিকায় পড়েছেন। “এটি আমাদের জন্যেও উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশ থেকে অনেককে কলকাতায় আসেন। তাদের কেউ ডেঙ্গুর ভাইরাস বহন করে নিয়ে এলে তা কলকাতাতেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই যদি বাংলাদেশ চায় তাহলে আমরা সহযোগিতা করতে পারি।”
Comments