ডেঙ্গু সনাক্তকরণ কিট সংকটে মানিকগঞ্জে চিকিৎসা ব্যাহত

ফাইল ছবি

এনএস-১ কিট ও স্যালাইন সংকটের কারণে মানিকগঞ্জে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এই জেলার সাতটি উপজেলার কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই এনএস-১ কিট সরবরাহ না থাকায় ডেঙ্গু শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। একারণে জেলা শহরে এসে রোগ নির্ণয় করতে হচ্ছে উপজেলাগুলোর ৬৫টি ইউনিয়নের অঞ্চলের রোগীদের।

ঘিওর উপজেলার গোলাপনগর এলাকার ৭০ বছর বয়সী আলমগীর হোসেন রোববার সকালে জ্বর নিয়ে ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। চিকিৎসক তাকে মঙ্গলবার সকালে আবার যেতে বলেন। মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসক তার রোগের লক্ষণ দেখে মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিলে তিনি বেলা ১টায় জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা পেলে তাকে কষ্ট করে জেলা হাসপাতালে যেতে হতো না।

সিঙ্গাইর উপজেলার বাইমাইল গ্রামের ফরিদ হোসেন জানান, তিনি রাজধানীর তেজগাঁও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী। জর নিয়ে তিনি শুক্রবার বিকেলে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। জ্বরের কারণ পরীক্ষা করতে শনিবার সকালে গিয়েছিলেন সিঙ্গাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু সেখানে এনএস-১ এন্টিজেন কিট না থাকায় বিকেলে জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এখানে ভর্তি আছেন এমন আরও বেশ কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে স্থানীয় পর্যায়ে চিকিৎসা না পেয়ে তাদেরকে জেলা শহরে আসতে হয়েছে। তারা বলেন, সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও স্যালাইন ও ওষুধ তাদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। তবে জেলা হাসপাতাল এবং কর্নেল মালেক সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ডেঙ্গু নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কোন টাকা লাগছে না বলেও জানান তারা।

মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের পেয়িং ওয়ার্ডের নার্সিং কর্মকর্তা বিলকিস আক্তার বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য চার ধরনের স্যালাইনের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে হার্টম্যান সল্যুশন এর সরবরাহ নেই। দশমিক নয় শতাংশ নরমাল স্যালাইন, পাঁচ শতাংশ ডিএনএস এবং পাঁচ শতাংশ ডিএ স্যালাইনও শেষ হয়ে গেছে। বুধবার দেওয়ার মতো স্যালাইন হাতে নেই।

এদিকে, জেলা হাসপাতালের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট আব্দুস সালাম জানান, গত ২২ জুলাই থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৯৪ জনের এনএস-১ পরীক্ষা করা হয়। সোমবার ৩৩ জন এবং মঙ্গলবার ২৫ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন তার হাতে আছে মাত্র ২২টি কিট। বুধবার রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে সবার পরীক্ষা করানো সম্ভব হবে না। জরুরিভিত্তিতে যদি কিট না পাওয়া যায় তাহলে সমস্যায় পড়বেন তারা।

এদিকে, কর্নেল মালেক সরকারি মেডিক্যাল কলেজের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ২৯ জুলাই থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬৭৫ জন রোগীর এনএস-১ পরীক্ষা করা হয় এবং এর মধ্যে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। গত তিনদিনে পরীক্ষা করা হয় ৩৪৬ জনের। তবে সময়মত তারা এনএস-১ কিট পেয়ে যাচ্ছেন।

মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ জানান, প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগী জেলা হাসপাতালে এবং কর্নেল মালেক সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভিড় করছেন। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সাধ্যমত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিট সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এদিকে, মানিকগঞ্জে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজু খান (৪০) নামে এক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মাহবুবুল হাসান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, রাজু ৩ আগস্ট জ্বর নিয়ে ভর্তি হন। পরদিন বিকেলে পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। সোমবার ভোর ৫ টায় হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মানিকগঞ্জে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর এটাই প্রথম ঘটনা।

বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত মানিকগঞ্জে ২৪৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ১১১ জন ভর্তি আছেন এবং ২০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অন্যরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

6h ago