ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটার

সেই গজারিয়া, এই গজারিয়া

Munshganj Gajaria Highway
১১ আগস্ট ২০১৯, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গজারিয়া অংশের দৃশ্য। ছবি: স্টার

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলা অংশের যানজটে ভোগেননি এমন মানুষ এই মহাসড়কটি ব্যবহারকারীদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু, এখনকার গজারিয়ার সঙ্গে সেই গজারিয়ার চিত্র মেলানোও মুশকিল। কেননা, ঈদযাত্রাতেও এখনকার গজারিয়া প্রায় যানজটমুক্ত।

গজারিয়ার সেই ১৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এখন আর মিলছে না সেই যানজট। এবারের কোরবানির ঈদে যাত্রী সাধারণ যানজটমুক্ত পরিবেশে পাড়ি দিচ্ছেন গজারিয়ার ১৩ কিলোমিটার। এক কথায় ঈদে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের দুর্বিষহ ভোগান্তির চির চেনা চিত্রটি পাল্টে গেছে।

দ্বিতীয় মেঘনা সেতু এবং দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু নির্মিত হওয়ার আগে এ পথের যাত্রীদেরকে যানজটে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তা এখন আর নেই। সরেজমিনে দেখা গেছে বিগত দিনগুলোতে সাপ্তাহিক অথবা উৎসবের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষদের মহাসড়কের এ অংশে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হতো। আবার কর্মক্ষেত্রে ফেরার বেলায়ও একই অবস্থা বিরাজ করতো। কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা এবং কখনও সারাদিন চলে যেতো মাত্র ১৩ কিলোমিটার সড়ক পথ পাড়ি দিতে। যানজটের দুর্বিষহ ভোগান্তির কবলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের যাত্রী সাধারণের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যেতো। কিন্তু, বর্তমানে সেই অবস্থা ও দুর্ভোগের চেনা চিত্রটি আর নেই। এখন গজারিয়া অংশের মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে মাত্র ১০ মিনিট।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু যৌথভাবে জাপানের ওবায়েশি কর্পোরেশন, সিমিজু কর্পোরেশন ও জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন ২০১৬ সালের জুলাই মাসে নির্মাণ কাজ শুরু করে। গেলো ২৫ মে সেতু দুটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু দুটির উদ্বোধন করেন তিনি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দিতে গোমতী নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতুর দৈর্ঘ্য ১৪১০ মিটার এবং মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়াতে মেঘনা নদীর ওপর দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৩০ মিটার।

স্থানীয় সূত্র মতে, এ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন ৩৫ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। এই বিপুলসংখ্যক যানবাহন মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা অতিক্রম করতে গিয়ে যানজটের মুখে ফেলতো যাত্রীদের। নিত্যদিনের যানজটের কারণে মহাসড়কটি মহা-ভোগান্তির রূপ নিয়েছিল বিগত পাঁচ-ছয় বছর ধরে।

গজারিয়া অংশে মহাসড়কের যানজট গত বছর কোরবানির ঈদে অনেক ভুগিয়েছিলো দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের যাত্রী ও গাড়িচালকদের। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকা পড়ে ঘরমুখো মানুষের ঈদের আনন্দ ফিকে হয়ে আসলেও এ বছর সেই চিত্রটা আর নেই। কোরবানির ঈদে বদলে গেছে মহাসড়কের সেই চেনা চিত্র। দ্বিতীয় মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর থেকেই বদলে যেতে শুরু করেছিল যানজটের পরিস্থিতি।

জানা যায়, সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে মেঘনা সেতুর সামনে ও পেছনে। কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ওসি কার্যালয় থেকে যানজট বা যানবাহন বিকল হলে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মেঘনা সেতুর পশ্চিম পাশে হাইওয়ে পুলিশের জন্য তৈরি করা হয়েছে হাইওয়ে পুলিশ কমান্ড অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার। ওই সেন্টার থেকেই নজরদারি করা হয় কাঁচপুর, মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতুসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক।

আজ (১১ আগস্ট) বিকালে দেখা যায়, গজারিয়ার অংশে মহাসড়কে কোনো যানজট নেই। দূর-পাল্লার গাড়িগুলো দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে। বিড়ম্বনা নেই কোথাও। আর সময় মতো গন্তব্যে যেতে পারছে ঈদে ঘরমুখো মানুষ। বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ডে লোকাল গাড়িগুলোকে কেবল যাত্রী ওঠা-নামা করতে দেখা গেছে। পুরাতন সেতু দুটির এখনও মেরামতের কাজ চলমান আছে।

হাইওয়ে থানা পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক মো. কবির হোসেন খান বলেন, “মহাসড়কে কোনো প্রকার যানজট, অভিযোগ এবং দুর্ঘটনা নেই। তবুও আমরা ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রত্যেক স্ট্যান্ডে আমাদের ফোর্স দেওয়া হয়েছে। মহাসড়ক থেকে সব ধরনের রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

ফারহানা মির্জা, দ্য ডেইলি স্টারের মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা

Comments

The Daily Star  | English
Vehicle sales decline Bangladesh

Vehicle sales plunged in 2024

This marked the steepest decline since the Covid-19 pandemic, when roughly 3.8 lakh vehicles were registered with the BRTA

12h ago