ঈদ নেই মিনু শেখের পরিবারে

এবারের ঈদে আনন্দ নেই ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার টেপিবাড়ি গ্রামের কুরবান আলীর ছেলে রিকশাভ্যানচালক মিনু শেখের পরিবারে।
Minu Sheikh family
ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনিতে নিহত মিনু শেখের স্ত্রী রিনা আক্তার ও তাদের পাঁচ বছরের ছেলে রাহাত। ছবি: স্টার

এবারের ঈদে আনন্দ নেই ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার টেপিবাড়ি গ্রামের কুরবান আলীর ছেলে রিকশাভ্যানচালক মিনু শেখের পরিবারে।

গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে বন্যায় বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাওয়ায় ভ্যান চালাতে না পেরে পাঁচ বছরের ছেলে ও ছয়মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর মুখে খাবার তুলে দিতে জাল দিয়ে মাছ ধরে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো মিনু শেখ (৩০)।

প্রতিবেশীর কাছ থেকে টাকা ধার করে জুলাই মাসের ২১ তারিখে পার্শ্ববর্তী কালিহাতী উপজেলার সয়াহাটে গিয়েছিলো মাছ ধরার জাল কিনতে। হাটে একটি অল্প বয়সী ছেলে হাত দেয় মিনু মিয়ার পকেটে। মিনু ছেলেটির হাত চেপে ধরলে ছেলেটি চিৎকার দেয়। সাথে সাথে ছেলেধরা সন্দেহে হাটে উপস্থিত একদল লোক মারতে শুরু করে মিনুকে।

নির্মম পিটুনিতে রক্তাক্ত মিনু বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবী করার পরও থামেনি নিষ্ঠুর মানুষগুলো। একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েন তিনি। পরে পুলিশ এসে গুরুতর আহত মিনুকে নিয়ে যায় কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে সেদিনই নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বেড খালি না থাকায় প্রথম তিনদিন হাসপাতালের সিঁড়িতে পড়ে ছিলো মিনু। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ জুলাই মারা যান তিনি।

সম্প্রতি, সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় মিনুর পুরো বাড়িটি জুড়ে বিরাজ করছে কবরের নিস্তব্ধতা। বাড়ির এক কোণায় পড়ে রয়েছে তার রিকশাভ্যানটি। মিনুর স্ত্রী রিনা আক্তার তার পাঁচ বছরের ছেলে রাহাতকে নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন।

সাংবাদিকরা কথা বলতে চান শুনে ছেলেকে নিয়ে দোচালা ঘরটির বাইরে বেড়িয়ে আসে তারা। রিনা জানতে চান- “আর কথা বলে কী হবে? যিনি চলে গেছেন তিনি কি আর ফিরে আসবেন? আমার অনাগত সন্তান কি জন্মের পর তার বাবাকে দেখতে পাবে? পাবে না। তার বাবা আর ফিরে আসবে না জানার পরও আমার পাঁচ বছর বয়সী ছেলেটা শুধু পথের দিকে চেয়ে থাকে। শুধু ঈদ কেনো, আমাদের তো সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিনা আরো বলেন, “আমার স্বামী অনেক পরিশ্রম করে সংসারটা চালাতো। তিনি কোনো অপকর্মের জন্য মারা যাননি। তিনি গুজবের শিকার হয়েছেন। গুজব ঠেকানোর দায়িত্ব সরকারের। তাই অমার স্বামী দেশের জন্যই মারা গেছেন। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার স্বামীকে হত্যার বিচার এবং ক্ষতিপুরণ দাবী করছি।”

মিনুর ছেলে রাহাত জানালো- রোজার ঈদে তার বাবা তাকে নতুন জামাকাপড় কিনে দিয়েছিলো। ঈদের দিন বাইরে ঘুরতেও নিয়ে গিয়েছিলো।

মিনুর বাবা কুরবান আলী কাঁদতে কাঁদেতে বলেন, “আমার মিনু কোনোদিন কারো কোনো ক্ষতি করে নাই। তবু কেনো তাকে এভাবে মরতে হলো? এখন আমাদের কে দেখবে? মিনুর বিধবা স্ত্রী এবং তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী?”

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরিফূল আলম সোহেল জানান, গরীব হলেও ভালো মানুষ ছিলো মিনু শেখ। তার এমন মৃত্যুতে পুরো এলাকার মানুষ শোকসন্তপ্ত এবং বিক্ষুব্ধ। তারা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের উপযুক্ত বিচার চায়।

সোহেল আরো বলেন, একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে মিনুর পরিবারের সদস্যরা আজ দিশাহারা। মিনুর অবর্তমানে পুরো পরিবারটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাই সরকারের উচিত এমন কিছু করা যাতে পরিবারটি বাকি জীবন কিছু করে খেতে পারে। মিনুর সন্তানদের যেনো লেখাপড়ার ব্যবস্থা হয়।

কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান আল মামুন জানান, গণপিটুনির ঘটনায় নিহত মিনুর ভাই রাজিবের দায়ের করা মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

মির্জা শাকিল, দ্য ডেইলি স্টারের টাঙ্গাইল সংবাদদাতা

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

Now