‘আমরা রোগীদের কাছে দায়বদ্ধ’

স্টার ফাইল ফটো

দেশে সব ডাক্তারদের ঈদুল আজহার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের এই মুহূর্তে চিকিৎসক-নার্সরা দাঁড়িয়েছেন দুর্গতদের পাশে। রোগীদের সেবার মধ্যেই উপভোগ করছেন ঈদের আনন্দ। এ বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের কথা হয় ঢাকার ছয়টি সরকারি হাসপাতালে পরিচালকদের সঙ্গে। তারা জানান তাদের অনুভূতি। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঈদে ছুটিতে বাড়ি যাওয়া মানুষদের উদ্দেশে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমার হাসপাতাল পুরো প্রস্তুত যেকোনো ক্যাজুয়ালটির রোগীকে রিসিভ করার জন্যে। সব বিভাগ খোলা রয়েছে। ডাক্তার-নার্সরা কাজ করছেন। আমি এখন হাসপাতাল রাউন্ড দিচ্ছি।”

যারা গ্রামে গিয়েছেন তাদের জন্যে নাসির উদ্দিনের পরামর্শ: কারো জ্বর হলে যেনো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়। চিকিৎসক না পেলে নিজেরাই যেনো স্পঞ্জিং করে তাপমাত্রা কমিয়ে রাখেন। ডাবের পানি, স্যালাইন বা ফলের রস খাবেন। এতে শরীর তুলনামূলকভাবে ভালো থাকে। ঝুঁকি কমে যায়।

চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা হলো- চিকিৎসকরা যখন কোনো রোগীকে কোনো হাসপাতালে রেফার করবেন তখন তারা যেনো রোগীর জন্য অ্যাম্বুলেন্সে স্যালাইনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করেন। তাহলে রাস্তায় পাঁচ-ছয় ঘণ্টা জার্নির সময় শরীরে স্যালাইনের অভাব হবে না। সেসব রোগীদের দ্রুত সুস্থ করে তোলা সম্ভব।”

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার বলেন, “ঈদের ছুটি বাতিল করে মানুষের সেবা করা আমাদের কাজের অংশ। আমাদের ইমাজেন্সি ডিউটিতো করতে হয়। জাতি একটা দুর্যোগময় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যার যার অবস্থান থেকে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় অবদান রাখা দরকার। চিকিৎসক হিসেবে ডেঙ্গু রোগীদের সেবা করা আমাদেরই কাজ। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে কেউ ছুটিতে যাবেন না। আমরা কেউ ছুটিতে যাই নাই।”

“আমরা চেষ্টা করছি পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্যে। আমাদের যতটুকু রিসোর্স রয়েছে তা দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইনডোর এবং ক্যাজুয়ালটি সারাবছর খোলা রয়েছে। শুধু আজকে একদিনের জন্যে আউটডোর বন্ধ। জরুরি বিভাগ তো খোলা রয়েছেই। সাধারণত ঈদে আউটডোর তিনদিন বন্ধ থাকে। এবার আমরা শুধু তা একদিন বন্ধ রেখেছি।”

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্টাফরা ফুলটাইম ডিউটি করছেন। ঈদের জন্যে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।”

“অনেকেই দেখছেন যে ঈদের মধ্যেও ডাক্তার নার্স ও অন্যান্য স্টাফরা কাজ করছেন এমন দৃশ্য দেখে রোগী ও তাদের আত্মীয়রা খুশি। আমরা সবাই রোগীদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।”

যারা ঢাকার বাইরে গেছেন তাদের জন্যে অধ্যাপক ডা. বড়ুয়ার পরামর্শ: “অন্তত ৫০ ভাগ রোগীকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। তবে, কারো শারীরিক অবস্থা যদি একটু খারাপ হয় তাহলে তারা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন। যদি সেখানে সম্ভব না হয় তাহলে জেলা হাসপাতালগুলোকে বলা রয়েছে তাদেরকে আমাদের এখানে পাঠানোর জন্যে। আমরা এখানে প্রস্তুত রয়েছি। আমরা তাদেরকে ভর্তি করে নিবো।”

হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এজাজ আহমেদ বলেন, “এটি আমাদের কাজের আওতার মধ্যেই পড়ে। সকালে স্বাভাবিক দিনের মতোই ছিলো। চিকিৎসকরা এসেছেন, রাউন্ড দিয়েছেন।”

ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া ব্যক্তিদের প্রতি অধ্যাপক ডা. এজাজ আহমেদের পরামর্শ: “সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বাড়ির আনাচে-কানাচে যেখানে স্যাঁতস্যাঁতে পানি জমে থাকে সেসগুলোকে পরিষ্কার করতে হবে। যারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন তাদেরকে অবশ্যই নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। জটিল পরিস্থিতিতে বড় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। যদি জ্বর প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতেই মশারির নিচে থাকতে হবে। যাতে তার কারণে অন্যরা ডেঙ্গু আক্রান্ত না হয়।”

“ফুলহাতা জামাকাপড় পড়ে নিজেকে নিরাপদ রাখতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এটি ডেঙ্গু থেকে নিজেকে দূরে রাখার প্রথম শর্ত। আসলে নিজেকে রক্ষা করাটাই মূল জিনিস। আমার মনে হয়, এগুলো একটু সচেতন হলে ডেঙ্গু কোনো কষ্টের বিষয় হবে না,” যোগ করেন তিনি।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ বলেন, “এখন পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৪৬৮ ডেঙ্গু রোগীকে আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছি। এখনো ডেঙ্গু জ্বরে এখানে কেউ মারা যাননি। তবুও আমরা কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। যেমন আলাদা একটি ‘ফিভার ক্লিনিক’ খুলেছি। এখানে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের আলাদাভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আলাদাভাবে রোগীদের জন্যে ‘ডে কেয়ার’ সেকশন খুলেছি।”

“পুরুষ, নারী ও শিশু বিভাগে আমরা অতিরিক্ত ৩০০ বেড যোগ করেছি। কোনো রোগীকে মেঝেতে রাখিনি। জনবল পুনর্বণ্টন করে ডেঙ্গু রোগীদের বিশেষ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।”

“সবাই যখন ঈদের ছুটি থেকে শহরে ফিরে আসবেন তখন একটা চাপ সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেও আমরা সেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছি।”

গ্রামে যাওয়া মানুষদের জন্যে জামিল আহমেদের পরামর্শ: “এডিস শহুরে এবং গৃহপালিত মশা। এখন যেহেতু বর্ষাকাল তাই বাসায় কোথাও যেনো পানি জমে না থাকে। জ্বর হলে দ্রুত পরীক্ষা করে নিতে হবে। এটিকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। ডেঙ্গু ধরা পড়লে অতিদ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যে বাসায় ডেঙ্গু রোগী রয়েছেন সে বাসায় পরিচ্ছন্নতা ও মশা নিধন অভিযান চালানো উচিত। কেননা, সেখানে এডিস মশার উপস্থিতি রয়েছে তা নিশ্চিত।”

“প্যারাসিটামল ছাড়া কোনো রকমের ব্যথার ওষুধ খাওয়া যাবে না আর প্রচুর পরিমাণে ফ্লুইড তথা ডাবের পানি, ফলের রস ইত্যাদি খাবে। এটিই হলো প্রাথমিক চিকিৎসা। আর রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হলে স্যালাইন দিতে হবে। আরও বেশি খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।”

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. আমিন আহমেদ খান বলেন, “আমাদের সব চিকিৎসক উপস্থিত রয়েছেন। সরকারি নির্দেশনা মতো প্রয়োজনীয় বিভাগগুলো খোলা রয়েছে। মেডিসিন, শিশু ওয়ার্ডের ডাক্তর রয়েছেন। এক্সরে, প্যাথলজি বিভাগ খোলা রয়েছে। জরুরি বিভাগের মাধ্যমে রোগীরা ভর্তি হবেন। দেশের সঙ্কটময় মুহূর্তে আমরা পাশে দাঁড়াবো এটাই স্বাভাবিক। দেশের নাগরিক হিসেবে এটিই আমার দায়িত্ব। এখানে প্রশংসা পাওয়ার কিছু নেই।”

ঈদের ছুটিতে গ্রামে যাওয়া মানুষগুলো জন্যে তার পরামর্শ: “কারো যদি জ্বর হয় তিনি অবশ্যই মশারির মধ্যে থাকবেন। জ্বর হলে তরল খাবার খাবেন। প্যারাসিটামল ছাড়া কোনো ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাবেন না। ওর স্যালাইন, ডাবের পানি, ঘরে তৈরি ফলের রস খাবেন। দিনে-রাতে মশারির নিচে থাকবেন। যদি পথের পাশে কোনো ডাবের খোল দেখেন তাহলে তা উল্টো করে রাখবেন। ফেলে দেওয়া বোতলে যেনো পানি না জমতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।”

আরো পড়ুন:

ডাক্তার-রোগী, সম্পর্কের টানাপড়েন

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women retain SAFF glory

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

12m ago