ডাক্তার-রোগী, সম্পর্কের টানাপড়েন

সমস্যায় জর্জরিত জনমানুষ তাদের ক্ষোভের প্রকাশ ঘটান দেশের চিকিৎসকদের ওপর। অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষোভের যৌক্তিক কারণ থাকলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় চিকিৎসকরা সরাসরি দায়ী নন। দায় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ঠদের। আর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার সঙ্গে ডাক্তারদের সংশ্লিষ্ঠতা খুবই সামান্য।
DMCH
এটি একটি হাসপাতালের চিত্র। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি সংখ্যক রোগীদের সেবা দিতে হয় সরকারি হাসপাতালগুলোকে। সম্প্রতি এমন দৃশ্য দেখা যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

সমস্যায় জর্জরিত জনমানুষ তাদের ক্ষোভের প্রকাশ ঘটান দেশের চিকিৎসকদের ওপর। অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষোভের যৌক্তিক কারণ থাকলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় চিকিৎসকরা সরাসরি দায়ী নন। দায় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ঠদের। আর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার সঙ্গে ডাক্তারদের সংশ্লিষ্ঠতা খুবই সামান্য।

চিকিৎসকরা বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা যে তাদের সামর্থ্যের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক রোগীকে সেবা দিয়ে থাকেন, তা মানুষের বিবেচনায় স্থান পায় না। যেমন সারাদেশের মানুষ ছুটিতে ঈদ উদযাপন করছেন। কিন্তু, সেবা অব্যাহত রাখতে হয়েছে ডাক্তারদের। ডাক্তার-রোগীর পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইন কথা বলেছে সরকারি হাসপাতাল পরিচালকদের সঙ্গে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, “একজন মানুষ যখন অসুস্থ হয়ে যান তখন একটি পরিবারের সবাই উদ্বিগ্ন থাকেন। তারা তখন প্রত্যাশিত সেবা চাইতেই পারেন। তার প্রতি সময় দেওয়া, তার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো যেনো সঙ্গে সঙ্গেই পেয়ে যান, চিকিৎসাটি যেনো দ্রুত হয়- এমন প্রত্যাশা তাদের থাকতেই পারে। তাদের এই স্বাভাবিক চাহিদা মেটানো জন্যে একটি সেটআপ রাখতে হবে। সেই সংখ্যাক জনবল, যন্ত্রপাতি, প্রয়োজনীয় জায়গা ইত্যাদি। আমরা একটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থায় রয়েছি।”

“আমার হাসপাতলে সর্বোচ্চ ১,৬০০ মানুষকে বিছানা দিয়ে রাখতে পারি। কিন্তু, আমার এখানে এখন রোগীর সংখ্যা সাড়ে চার হাজারের ওপরে। আমার এই সীমিত লোক, যন্ত্রপাতি, সীমিত জায়গায় কেমনে সেবা দিবো? কিন্তু, আমি তো কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দিতে পারছি না।”

“এই যে একজন রোগীর সেবা পেতে দেরি হচ্ছে, তার প্রতি যত্নটা হয়তো একটু কম হচ্ছে- এটাতো একটা চরম বাস্তবতা,” উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “ডব্লুএইচও-র মান অনুযায়ী আমার হাসপাতালে চার হাজার রোগীর সেবা দিতে প্রয়োজন ৩৬ হাজার স্টাফ। অথচ আমার রয়েছে সাড়ে তিন হাজার স্টাফ। আবার আমাদের মৃত্যুহারও কম- ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ, ৯৩ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী আমাদের হাসপাতালে এসে ভালো হয়ে ফিরে যান।”

এ প্রসঙ্গে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার বলেন, “এটি সামগ্রিকভাবে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। চিকিৎসকদের ওপর নাগরিকদের যে অসন্তুষ্ঠি এটি সহসা মিটবে না। কারণ, এখানে চাহিদা ও যোগানের মধ্যে বিশাল ভারসাম্যহীনতা কাজ করছে। বাংলাদেশে আড়াই হাজার মানুষের জন্যে একজন ডাক্তার। আট হাজার মানুষের জন্যে একজন নার্স। এমন পরিস্থিতিতে কী ইউরোপ-আমেরিকার মতো সন্তুষ্টি আশা করা যায়? এই আনুপাতিক হার যতোদিন না কমবে ততোদিন চিকিৎসকদের প্রতি রোগীর সন্তুষ্টি পাওয়া যাবে না।”

“আমার হাসপাতাল ৯০০ বেডের। এখানে যদি ১৫০০ রোগী ভর্তি থাকে তাহলে সবাই কী একই রকম সেবা পাবেন? তা পাওয়া সম্ভব না। ডাক্তার ও রোগীর সংখ্যার মধ্যে ভারসাম্যহীতার কারণে এমনটি হচ্ছে।”

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “এমন পরিস্থিতি আমরা অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। এখন অনেকেই মনে করেন যে ডাক্তার-নার্সরা শত শত রোগীকে সেবা দিচ্ছেন। তাদের ঈদের আনন্দ মাটি করে কাজের মাধ্যমে রোগীদের সঙ্গে ঈদ ভাগ করে নিয়েছেন। এমন দৃশ্য মিডিয়ার মাধ্যমে অনেকে দেখছেন। অনেকে বিষয়টি বুঝতে পারছেন। অনেকের ধারণা বদলে যাচ্ছে।”

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ বলেন, “আমাদের কাজই হলো রোগীদের সেবা দেওয়া। রোগীরা মাঝে-মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারেন। কারণ, কেউ অসুস্থ থাকলে তার মানসিক অবস্থা হয়তো স্বাভাবিক থাকে না। যে কারণে হয়তো একটু ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারপরও বলবো- চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা দিতে দিনরাত কাজ করছেন। আমাদের ইনডোর খোলা রয়েছে সবসময়ের জন্যেই।”

হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এজাজ আহমেদ বলেন, “আমার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে যে ধারণক্ষমতা তার থেকে ১০০-র বেশি রোগীকে আমরা সেবা দিচ্ছি। হাসপাতালে এলে প্রতিটি মানুষ একটু দুশ্চিন্তায় থাকেন। এটিই স্বাভাবিক। অনেক সময় বেশি রোগী থাকার কারণে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বেশি সময় লেগে যায়। আমরা যদি তাদেরকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলি তাহলে অধিকাংশ মানুষ তা বোঝেন। প্রতিটি হাসপাতালে এই একই চিত্র।”

তবে এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে তিনি বলেন, “আমাদের ভূলভ্রান্তি নিয়ে যদি কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলেন তাহলে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। আমরাও তো মানুষ। ক্লান্ত অবস্থায় একটা-দুটা ভুল হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সঙ্গে কথা বলে সেই বিষয়গুলো সমাধান করা আসলেই সম্ভব। হাতের পাঁচ আঙ্গুল সমান না। কেউ হয়তো কোনো কারণে বাজে ব্যবহার করে ফেলতে পারেন। কিন্তু, এগুলো শোধরানো সম্ভব।”

আরো পড়ুন:

‘আমরা রোগীদের কাছে দায়বদ্ধ’

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

Now