দানের চামড়া পচছে রাজশাহীর মাদ্রাসা ও এতিমখানায়

ভালো দাম না পেয়ে রাজশাহী শহরের অনেকেই তাদের কোরবানির পশুর চামড়া বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করে দিয়েছিলেন। দানের সেই চামড়াগুলো নিয়ে মাদ্রাসা ও এতিমখানার কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়েছে।

তারা কোথাও চামড়া বেচতে পারছেন না। কোনো কোনো মাদ্রাসায় চামড়া পচে যাচ্ছে। সেখানে এমনকি সাড়ে তিন টাকা দরে খাসির চামড়া বিক্রি করার ঘটনাও ঘটেছে।

রাজশাহী দরগাপাড়ায় জামিয়া ইসলামিয়া শাহ মাখদুম দরগা মাদ্রাসা ও এতিমখানা এরকম একটি ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠান। এই মাদ্রাসায় অন্য বছরগুলোতে নিলামে চামড়া বিক্রি হলেও এ বছরের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঈদের দিন সারারাত ধরে রাজশাহীর বিভিন্ন জায়গায় চামড়া বিক্রি হলেও এই মাদ্রাসায় আসেননি কোনো ক্রেতা। মঙ্গলবার দুপুরে মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের কয়েকজন পুরো বারান্দা জুড়ে কোরবানির পশুর চামড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিয়ে মন খারাপ করে বসে আছেন। বারান্দার একপাশে কয়েকজন শিক্ষক কর্মচারী কিছু চামড়ায় লবণ মাখাচ্ছেন।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি শাহাদত আলী জানালেন, ছয় শতাধিক চামড়া দান পেয়েছেন তারা। এই চামড়া বিক্রির টাকায় প্রায় ৩০০ ছাত্রের অনেক দিনের খাবারের সংস্থান হয়। কিন্তু ক্রেতা না পাওয়ায় চামড়াগুলোতে পচন ধরেছে। “চামড়াগুলো মানুষের দান করা সম্পদ। এগুলোর রক্ষার জন্য বিশ হাজার টাকার লবণ কেনা হয়েছে। এই অতিরিক্ত খরচ আমাদের গলার কাঁটার মত বিঁধে আছে।”

“কয়েকজন ক্রেতা এসেছিল। তারা খাসির চামড়া ৩০ টাকা, গরুর চামড়া ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দাম বলে পরে আসব বলে চলে গেছে। কিন্তু ওই ক্রেতারা আর ফিরে আসেনি, ডাকতে গেলে তারা বলেছে তারা কিনতে পারবেন না। আবার চামড়াতে লবণ দেওয়ার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। যারা লবণ দিচ্ছেন তারা আমাদেরই সহকর্মী।”

তিনি জানান, তিন বছর আগেও তারা মাদ্রাসার চামড়া নিলামে বিক্রি করেছেন। কিন্তু এ বছর ডেকেও চামড়া ব্যবসায়ীদের কোনো সাড়া মিলছে না।

রাজশাহীর রেলগেটে চামড়া আড়তে গিয়ে দেখা হলো নিউ মার্কেট এলাকার কাসেমী মাদ্রাসার শিক্ষক খায়রুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানালেন তাদের মাদ্রাসার ৪০০ পিস খাসির চামড়া সাড়ে তিন টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে। গরুর চামড়ার দাম পেয়েছেন ১০০ ও ৪০০টাকার মধ্যে।

“এ রকম একটা বাজে অবস্থার অভিজ্ঞতা আমার এবারই প্রথম,” খায়রুল বলছিলেন।

শহরের কাদিরগণ্জ থেকে খাসির চামড়া বেচতে এসেছিলেন মোহাম্মদ আনোয়ার। তিনি জানান, বাইশ হাজার টাকা দামের খাসির চামড়ার দাম পেয়েছেন ১০ টাকা। তিনি টাকা না নিয়েই ফিরে যেতে চাইছিলেন। চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম তাকে থামিয়ে টাকা হাতে তুলে দিলেন। হাকিম বলেছেন, চামড়াটির এক জায়গায় কাটা আছে। নিখুঁত হলে চামড়াটির দাম ৫০/৬০ টাকা হতো।

চামড়া ব্যবসায়ী জাহিদ হোসেন বলছিলেন চামড়ার রপ্তানিকারকরা তাদের যে দাম বেঁধে দিয়েছেন তার চেয়ে বেশি দামে তারা চামড়া কিনতে পারছেন না। দরগা মাদ্রাসার উদাহরণ দিলে তিনি বললেন, ব্যবসায়ীদের হাতে টাকা না থাকায় তারা এক সাথে বেশি চামড়া কিনতে পারছেন না।

নাটোরের ও রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তারা খাসীর চামড়া ১০ থেকে ৯০ টাকা দরে কেনা বেচা করছেন। গরুর চামড়া বেচা কেনা হচ্ছে ১০০ থেকে ৯০০ টাকায়।

Comments

The Daily Star  | English
Govt Guarantees To Loans of State Enterprises

Sovereign guarantee rules to be revised

The government plans to amend the existing sovereign guarantee guidelines to streamline the process and mitigate fiscal risks if public entities fail to make repayments on time, according to a finance ministry report.

13h ago