ট্রেনের টিকিট: কালোবাজারে অসাধ্য সাধন

স্টার ফাইল ছবি

রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী শুক্রবারের ট্রেনের দুটো টিকিটের দরকার ছিল আয়নাল হকের। যাত্রার মাত্র একদিন আগে এই টিকিট জোগাড় করা ছিল এক রকম অসাধ্য একটা ব্যাপার। কারণ অন্তত দশদিন আগেই অনলাইনে ও স্টেশনের বুকিং কাউন্টারগুলো থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে শুক্রবারের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আয়নাল টিকিট পেয়েছেন। তিনি এটা পেয়েছেন কালোবাজারে, সরকার নির্ধারিত মূল্যের দ্বিগুণেরও বেশি দাম দিয়ে।

শহরের হড়গ্রাম এলাকার ৫৫ বছরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আয়নালের মেয়ে তার স্বামীর সঙ্গে ঈদের ছুটিতে বেড়াতে এসেছে বাবার বাড়ি। শুক্রবারের ট্রেনের দুটো টিকিটের কথা জামাই বলার পর শশব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন আয়নাল।

কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহের চেষ্টার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, “ঈদের দুই দিন আগে জামাই টিকিটের কথা বলার পর থেকে কতবার যে স্টেশনে এসেছি। লাইনে দাঁড়িয়েছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু শেষে গিয়ে শুনতে হয়েছে যে টিকিট নেই।”

“আজ আমি মরিয়া হয়ে গিয়েছিলাম। একজন বললেন, স্টেশনের কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট দেবে না। বাইরে ওদের লোক আছে, তাদের ধরেন, পেয়ে যাবেন।”

কালোবাজারে টিকিট কেনার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে আয়নাল বলেন, “স্টেশনের স্টলগুলোতে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করলাম কে কালোবাজারে টিকিট বিক্রি করে। প্রথমে কেউ আমার মুখের দিকেও তাকাল না, জবাব দেওয়া তো পরের কথা। কিছুক্ষণ পর স্টেশনের হোটেলের কর্মচারী একজনকে দেখিয়ে দিলেন। আধঘণ্টা পর তিনি দুটো টিকিট দিয়ে গেলেন। বিনিময়ে ৩৪০ টাকার টিকিট প্রতি দিতে হলো ৮০০ টাকা করে।”

তিনি আরও বলেন, “আমার সামনেই আরও চারজন ওই লোকটির কাছ থেকেই পাঁচটি টিকিট নিলেন। লোকটি বলছিল রেলওয়ের লোকজনের কাছ থেকে টিকিটগুলো এনেছেন, এজন্য কিছু দেরী হবার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছিলেন তিনি।”

“আমার ধারণা ছিল না কালোবাজারে টিকিট পাওয়া এতটা সহজ। আমি লাইনে দাঁড়িয়ে খামোখা কষ্ট করেছি। না হয় কিছু টাকা বেশি লাগত, হয়রানি থেকে তো রেহাই পেতাম,” কিছুটা আক্ষেপ নিয়ে বলছিলেন আয়নাল।

কথা বলার সময় তিনি তাকিয়ে ছিলেন স্টেশনের বুকিং কাউন্টারগুলোর দিকে যেখানে মানুষের লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন।

স্টেশনের সূত্রগুলো জানায়, কালোবাজারে এখনো টিকিট মিলছে যদিও বুকিং কাউন্টারগুলোতে “টিকিট নাই” নোটিশ টাঙানো আছে।

তারা জানান, গত কয়েকবছরে ঢাকঢোল পিটিয়ে কালোবাজারিদের ওপর যে নজরদারি করা হয়েছিল, এ বছর তার সামান্যতমও ছিল না এবং সেই সুযোগ নিয়েই কালোবাজারিরা তৎপর হয়ে উঠেছে। এরা সবাই স্থানীয় এবং স্টেশনে খুব পরিচিত মুখ।

কালোবাজারিরা ঢাকাগামী ট্রেনগুলোর ৩৪০ টাকার শোভন চেয়ারের টিকিট বিক্রি করছে ৮০০ টাকায়, ৫৭০ টাকার শীততাপ নিয়ন্ত্রিত স্নিগ্ধা কোচের টিকিট ১২০০ টাকায় এবং ১০৭০ টাকার শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বার্থের টিকিট ২০০০ টাকায়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল জোনের অতিরিক্ত মহা-ব্যবস্থাপক অসীম তালুকদার বলেন, কালোবাজারি নিয়ন্ত্রণে তারা পুলিশ, র‍্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে চিঠি দিয়ে দিয়েছিলেন এবং সংস্থাগুলো এখন পর্যন্ত এরকম কোনো ঘটনা তাদের জানাননি।

“কাউন্টারে টিকিট বিক্রির সময় আমরা কিছু স্থানীয় লোকদের টিকিট সংগ্রহ করতে দেখেছি। আমাদের সন্দেহ হয়েছিল তারা কালোবাজারে সংযুক্ত হতে পারে। কিন্তু আমাদের কিছু করার ছিল না। আমরা লাইনে দাঁড়ানো কাউকে তো আর চ্যালেঞ্জ করতে পারি না,” বক্তব্য এই রেল কর্মকর্তার।

রেলের চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, নজরদারির জন্য পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কালোবাজারির কোনো ঘটনা জানা যায়নি। আর র‍্যাবের মুখপাত্র এএসপি আনোয়ার হোসেন বলেন যে তারাও পৃথকভাবে নজরদারি করেছেন যাতে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি না হয় এবং এমন কোনো ঘটনা তাদের নজরে পড়েনি যাতে মনে হয় কালেবাজারি হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Polls no later than June 2026

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus has said that next national polls will be held within June 2026.

3h ago