ফাইনালে উঠতে না পারলেও শিষ্যদের নিয়ে গর্বিত লেমোস
ফাইনালে ওঠার লক্ষ্য পূরণ হয়নি ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের। এএফসি কাপের ইন্টার-জোনাল সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে তাদের। উত্তর কোরিয়ার ক্লাব এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ এসসির সঙ্গে পিয়ংইয়ংয়ে তাদের ঘরের মাঠে পেরে ওঠেনি আকাশি-নীল জার্সিধারীরা। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ অগ্রগামিতায় ফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্বাগতিকরা। ইতিহাস গড়া না হলেও শিষ্যদের পারফরম্যান্সে দারুণ খুশি আবাহনী কোচ মারিও লেমোস। সানডে চিজোবা-নাবীব নেওয়াজ জীবনদের নিয়ে গর্ব অনুভব করছেন ৩৩ বছর বয়সী এই পর্তুগিজ।
ঢাকায় সেমির প্রথম লেগে সানডের জোড়া গোলে এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভকে ৪-৩ গোলে হারায় আবাহনী। তাতে উজ্জ্বল হয়েছিল প্রথম বাংলাদেশি ক্লাব হিসেবে এএফসি কাপের জোনাল-ফাইনালে খেলার স্বপ্ন। কিন্তু পরের লেগে হয়েছে স্বপ্নের অপমৃত্যু। আগের দিনের ম্যাচের প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে প্রতিপক্ষের সঙ্গে টক্কর দিতে পারেনি আবাহনী। কিম ইউ-সংয়ের জোড়া গোলে ২-০ ব্যবধানে ম্যাচটা জিতে নিয়েছে এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ। ৪৯ ও ৮৩তম মিনিটে লক্ষ্যভেদ করেন সং। এর মাঝে ৬৭তম মিনিটে মামুন মিয়া দ্বিতীয় হলুদ কার্ডসহ লাল কার্ড দেখেন। ফলে দশ জন নিয়ে বাকি সময় খেলতে হয় বাংলাদেশের পেশাদার ফুটবল লিগের সফলতম দলটিকে।
এএফসি কাপের সফল অভিযান শেষে বৃহস্পতিবার (২৯ অগাস্ট) দেশে ফেরার পথে রয়েছে আবাহনী। উত্তর কোরিয়ায় ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় সেখানে তাদের হাল-হকিকত কেমন ছিল তা এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে পিয়ংইয়ং থেকে ঢাকায় আসার পথে চীনের বেইজিংয়ে ট্রানজিট নিয়েছে আবাহনী, আর সেখান থেকে লেমোস কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে। গোটা প্রতিযোগিতার হিসাব-নিকাশ মিলিয়ে দলের ফুটবলারদের প্রশংসার জোয়ারে ভাসিয়েছেন তিনি, ‘খেলোয়াড়রা যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে তাতে আমি গর্বিত। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম পর্বের বাধা পাড়ি দেওয়ার পাশাপাশি সেমির প্রথম লেগে উত্তর কোরিয়ার শক্তিশালী ক্লাবকে আমরা হারিয়েছি। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। ফাইনালে উঠতে পারিনি ঠিকই, তবে এই আসর থেকে ছেলেদের শেখার অনেক কিছুই রয়েছে।’
এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এএফসি কাপে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের রেকর্ড ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। আগের দুবার তারা বাদ পড়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই। ২০১৭ ও ২০১৮ আসরে চার দলের গ্রুপে যথাক্রমে চতুর্থ ও তৃতীয় হয়ে তারা। দুবারই অর্জন করেছিল ৪ পয়েন্ট। তবে এবার লেমোসের অধীনে রূপকথা লেখে আবাহনী। প্রথমবারের মতো পাড়ি দেয় গ্রুপ পর্বের বাধা। ভারতের চেন্নাইন এফসি ও মিনার্ভা পাঞ্জাব এবং নেপালের মানাং মার্সিয়াংদিকে টপকে তারা হয় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। ৬ ম্যাচে পায় ১৩ পয়েন্ট। এরপর অবশ্য তাদের থামতে হয়েছে ইন্টার-জোনাল সেমিফাইনালে।
উত্তর কোরিয়ার মাঠে ড্র করতে পারলেই চলত আবাহনীর। প্রথমার্ধ শেষে স্কোরলাইনও ছিল ০-০। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল হজম করা এবং তারপর দশ জনে পরিণত হওয়ায় ম্যাচে ফেরা সম্ভব হয়নি আবাহনীর। দ্বিতীয় লেগের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে লেমোস বলেছেন, ‘ওরা অনেক শক্তিশালী দল। গতিশীল ফুটবল খেলেছে তারা। আমরাও প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েছি। সানডে-জীবন ভালো সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। বিরতির পর গোল হজম করলেও আমাদের সমতায় ফেরার আত্মবিশ্বাস ছিল। কিন্তু মামুন লাল কার্ড দেখলে একজন কম নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো আর সম্ভব হয়নি।’
সমাজতান্ত্রিক দেশ উত্তর কোরিয়ায় ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আবাহনীর খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা বলা চলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থাতেই ছিলেন। এমনকি বাংলাদেশ থেকে ম্যাচের সরাসরি আপডেটও পাওয়া যাচ্ছিল না। এমন অদ্ভুত পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া নিয়ে লেমোস বলেছেন, ‘এটা একটা বিদঘুটে অভিজ্ঞতা।’
Comments