বাড়তি ওজনও যেখানে বাধা নয়
উচ্চতা ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি। ক্রিকেট দুনিয়ায় এমন দীর্ঘকায় ক্রিকেটারের সংখ্যা বেশি না হলেও একেবারে বিরলও নয়। তবে তাদের সবার থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রাহকিম কর্নওয়ালকে আলাদা করে চেনা যায় একটি বিশেষ কারণে। উচ্চতার পাশাপাশি তার ওজনটাও চোখে পড়ার মতো। প্রায় ১৪০ কিলোগ্রাম। ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ওজনের এই খেলোয়াড়ের টেস্ট অভিষেক হয়েছে শুক্রবার (৩০ অগাস্ট), ভারতের বিপক্ষে। সাদা পোশাকে প্রথমবার খেলতে নেমেই নিজের সামর্থ্যের স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেছেন এই স্পিন অলরাউন্ডার।
অ্যান্টিগায় জন্ম নেওয়া ২৬ বছর বয়সী কর্নওয়াল উইন্ডিজের ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত মুখ। ২০১১ সালে লিওয়ার্ড আইল্যান্ডের হয়ে ক্যারিবিয়ান টি-টোয়েন্টি লিগ দিয়ে তার ঘরোয়া মঞ্চে পদার্পণ হয়েছিল। এরপর একই দলের হয়ে ২০১৩ সালে লিস্ট 'এ' ও ২০১৪ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার।
হালের ক্রিকেটারদের যেখানে সুঠাম-পেটানো শরীর, সেখানে মেদ আর বাড়তি ওজন নিয়েই কর্নওয়াল চালিয়ে যান ক্রিকেট। জয় করেন সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে। দক্ষতার সঙ্গে জুড়ে দেন কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতাকে। তাতে মাঠের পারফরম্যান্স হতে থাকে ক্ষুরধার, আর তিনি নজরে পড়েন উইন্ডিজের ক্রিকেট কর্তাদের। সবশেষ উইন্ডিজ 'এ' দলের হয়ে ব্যাটে-বলে আলো ছড়ান তিনি। ফলস্বরূপ ভারতের বিপক্ষে চলমান দুই টেস্ট সিরিজের স্কোয়াডে ডাক মেলে কর্নওয়ালের।
অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের একাদশে জায়গা পাননি। ম্যাচটা বাজেভাবে হেরে যায় উইন্ডিজ। তাই জ্যামাইকায় দ্বিতীয় টেস্টের একাদশে দুটি পরিবর্তন এনেছে ক্যারিবিয়ানরা। সাদা পোশাকে অভিষেকের স্বাদ পাচ্ছেন দুজন। একজন উইকেটরক্ষক জাহমার হ্যামিল্টন, আরেকজন অবধারিতভাবেই কর্নওয়াল।
শুক্রবার কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কে টসে হেরে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত উইন্ডিজ দলনেতা জেসন হোল্ডারের। ভারতের ইনিংসের প্রথম উইকেটটিও গেছে তার ঝুলিতে। অধিনায়ককে উইকেটের খাতা খোলাতে লোকেশ রাহুলের ক্যাচটা স্লিপে ঠিকঠাক লুফে নিয়েছেন কর্নওয়াল। অভিষেক ক্যাচ ধরার পর অভিষেক উইকেটটা তুলে নিতে বেশি দেরি করেননি কর্নওয়াল। তার খাটো লেংথের বলটা বুঝে উঠতে পারেননি চেতেশ্বর পুজারা, পয়েন্টে শামার ব্রুকসের তালুবন্দি তিনি। কর্নওয়ালের উচ্ছ্বাস তখন বাধভাঙা।
ওই একটা উইকেট নিয়েই প্রথম দিনটা শেষ করেছেন কর্নওয়াল। ২৭ ওভার বোলিং করেছেন। মেডেন নিয়েছেন ৮টি। রান দিয়েছেন ৬৯। উইকেটের ঝুলিটা মোটাসোটা না হলেও কর্নওয়ালের স্পিন বিপাকে ফেলেছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। পিচ থেকে আদায় করে নিয়েছেন টার্ন। সেই সঙ্গে পেয়েছেন বাড়তি বাউন্স। হোল্ডারের সঙ্গে জুটি বেঁধে আরেকটি ক্যাচও ধরেছেন। প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো কর্নওয়ালকে ফাঁকি দিতে পারেননি মায়াঙ্ক আগারওয়াল।
দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিসকে আদর্শ মানেন কর্নওয়াল। কেবল ক্রিকেট মাঠের নয়, মাঠের বাইরের দৈনন্দিন জীবনযাপনেও ক্যালিস তার 'হিরো'। কর্নওয়ালের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানোর স্বপ্ন পূরণের আকাঙ্ক্ষার পেছনে কলকাঠি নাড়িয়েছিল আরও একটি ঘটনা- ২০০৪ সালে উইন্ডিজেরই কিংবদন্তি ব্রায়ান লারার ৪০০ রানের সেই বিখ্যাত ইনিংসটি।
ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার ক্যালিসকে অনুসরণ করে, ক্রিকেটের বরপুত্র খ্যাত লারার বীরত্বকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে কর্নওয়াল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন কি-না বা তাদের মতোই স্মরণীয় হয়ে থাকবেন কি-না সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে কেবল ভবিষ্যৎ। তবে কর্নওয়াল নিজেই এরই মধ্যে অনেকের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার জন্য বাড়তি ওজনও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
Comments